সরল দোলকের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটি ১ বল হাতে রেখে জিতে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। জিতেছে ২ উইকেটে। ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছে বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের জন্য। বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিস ও ওভার থ্রোর খেসারত গুনতে হয়েছে লিটন বাহিনীকে। ১৯ নম্বর ওভারের শেষ বলে রানআউট করতে গিয়ে ওভার থ্রোতে ৫ রান দেন শরিফুল ইসলাম। ওই বাড়তি রানটুকুই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় টাইগারদের। ৬ বলের সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ রানে। সেই রান আমিরাতের দুই ব্যাটার মাতিউল্লাহ খান ও হায়দার আলি করে নেন ১ বল হাতে রেখে। ২০৫ রান করে হারাটা লজ্জাজনক।
২০২৪ সালের ৪ মার্চ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ২০৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১৪ মাসে আরও ২৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন টাইগাররা। কোনোটি জিতেছেন। কোনোটি আবার হেরেছেন। কিন্তু দুই শর ঘরে স্কোর করেননি। অবশেষে গতকাল শারজায় আমিরাতের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান করেছে লিটন বাহিনী; যা মরুদেশটির বিপক্ষে দলগত সর্বোচ্চ এবং প্রথম ২০০-ঊর্ধ্ব স্কোর। আগের ম্যাচে লিটন বাহিনীর স্কোর ছিল ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯১ রান। সব মিলিয়ে নিজেদের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সপ্তমবার দুই শর ঘরে স্কোর করল বাংলাদেশ। এ ফরম্যাটে টাইগারদের দলগত সর্বোচ্চ ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ২১৫ রান।
‘মরুশহর’ শারজার প্রথম টি-২০ রাঙিয়েছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেছিলেন টি-২০ ক্রিকেটে। ১০০ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন মাত্র ৫৪ বলে। তাতে ছিল ৫টি চার ও ৯টি ছক্কা। টাইগার ক্রিকেটারদের মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড এটি। শুধু ছক্কার রেকর্ড নয়, তাঁর ৫৩ বলের সেঞ্চুরিটিও দেশের টি-২০ ক্রিকেটে দ্রুততম। গ্রোইন সমস্যার জন্য রেকর্ডধারী পারভেজকে বিশ্রাম দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁর জায়গায় খেলেছেন টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি ফিরেছেন প্রায় সাত মাস পর। সর্বশেষ খেলেছিলেন ভারতের বিপক্ষে ১২ অক্টোবর। প্রথম ম্যাচ খেলা হাসান মাহমুদের জায়গায় খেলেছেন ‘স্পিডস্টার’ নাহিদ রানা। টাইগারদের পক্ষে ৭ টেস্ট ও ৪টি ওয়ানডে খেলা নাহিদের অভিষেক হয়েছে টি-২০ ক্রিকেটে। অভিষেক স্পেলটি ৪-০-৫০-২। মুস্তাফিজুর রহমান আইপিএল খেলছেন। তাঁর জায়গায় নেওয়া হয়েছে আরেক বাঁ হাতি পেসার শরিফুল ইসলামকে। সহ-অধিনায়ক মেহেদির পরিবর্তে খেলেছেন রিশাদ হোসেন। এ চার পরিবর্তন নিয়ে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলেছে লিটন বাহিনী। প্রথমটির মতো এ ম্যাচেও টস হেরে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে আমিরাতের বিপক্ষে টানা পাঁচ টি-২০ ম্যাচে টস হেরেছেন টাইগাররা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ না থাকায় তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ওপেন করেন লিটন। দুজনে ৯০ রানের জুটি গড়েন ৯.১ ওভারে। বাঁ হাতি ওপেনার তানজিদ ব্যক্তিগত ৫৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। তাঁর ৩৩ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার ও ৩টি ছক্কা। দুজনে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে যোগ করেন ৬৬ রান। তানজিদের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও নাজমুল ৩৫ রান যোগ করেন মাত্র ২০ বলে। ওপেন করে ৪০ রান করেন লিটন। ৩২ বলের ইনিংসটিতে ছিল ১টি ছক্কা ও ৩টি চার। অধিনায়কের বিদায়ের পর আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করেন নাজমুল ও তাওহিদ হৃদয়। নাজমুল ২৭ রান করেন ১৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায়। আগ্রাসি মেজাজে ব্যাটিং করেন তাওহিদ। ৪৫ রানের টর্নেডো ইনিংসটি খেলেন ২৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায়। তাওহিদ ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলির ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দুই শর ঘরে স্কোর করেছে বাংলাদেশ। জাকের ১৮ রান করেন ৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায়। প্রথম ১০ ওভারে টাইগারদের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৯৪ রান। ১৫ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৫ রান। শেষ ৫ ওভারে লিটন বাহিনী সংগ্রহ করে ৬০ রান।
আমিরাতের বিপক্ষে আরও একটি টি-২০ খেলবেন লিটনরা। পারস্পরিক আলোচনায় দুই দেশ আরও একটি বাড়তি ম্যাচ খেলতে সম্মত হয়। বাড়তি ম্যাচটির জন্য বিসিবি অবশ্য অনুরোধ করেছিল আমিরাতকে। আমিরাতও ম্যাচটির আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে। ম্যাচটি ২১ মে শারজাতেই অনুষ্ঠিত হবে রাত ৯টায়।