‘ভাবা যায়, এক দিনে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে!’ ঢাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে কানাডার টরন্টো থেকে কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক স্ট্রাইকার মিজানুর রহমান। ১০ জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট বিক্রি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন সাবেক ফুটবলার। দেশের ফুটবলের যে পারফরম্যান্স, তাতে টিকিট নিয়ে যে হইচই এবং শোরগোল, এতে অবাক হওয়ারই কথা! মিজান অবাক হয়েছেনও। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচটি নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে। গোটা দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখ ম্যাচটির দিকে। ম্যাচটি ঘিরে এই যে উন্মাদনা, এর মূল কারণ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী, সামিত সোম, ফাহামিদুল ইসলামদের উপস্থিতি। এদের একনজর দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে বাঁধভাঙা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এদের ছাড়াও রয়েছেন জামাল ভুঁইয়া, তারিক কাজী ও কাজিম শাহদের মতো প্রবাসী ফুটবলার। এদের নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা নতুন স্বপ্ন দেখছেন। ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেই হামজারা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার মিজান বলেন, ‘হামজাদের আরও আগেই আনা উচিত ছিল। তাহলে দেশের ফুটবলের জাগরণটা আরও আগেই হতো। ফুটবলটাও এগিয়ে যেত।’
বাছাই পর্বে হামজাকে নিয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে বাংলাদেশ। একজন সুযোগ্য স্ট্রাইকারের অভাবে গোলের দেখা পায়নি। হামজা, সামিত, ফাহামিদুল আসার পরও স্ট্রাইকারের অভাব দেখছেন মিজান, ‘হামজা, ফাহামিদুল, সামিতরা অনেক উঁচুমানের ফুটবলার। বিশেষ করে হামজা অসাধারণ। সামিত ও ফাহামিুদল উইঙ্গার। ভারত ম্যাচে একজন স্ট্রাইকারের অভাবে জিততে পারিনি। দলে একজন ভালোমানের স্ট্রাইকার জরুরি। কারণ বল বাড়িয়ে দেওয়ার ফুটবলার রয়েছেন অনেক।’ স্থানীয় স্ট্রাইকারদের মধ্যে একটি বিষয়ের অভাব দেখছেন সাবেক স্ট্রাইকার, ‘স্থানীয় স্ট্রাইকারদের দূরপাল্লার শুটিংয়ে সামর্থ্য কম। এখনকার স্ট্রাইকারদের বক্সের বাইরে থেকে শট নিতে দেখাই যায় না। অথচ আমাদের সময় আসলাম ভাই, রুমি ভাইয়েরা অহরহ বক্সের বাইরে থেকে শুটিং করতেন।’
বিদেশি ফুটবলার আসায় দেশের ফুটবলে উন্মাদনা সৃষ্টি হবে। ফুটবলারদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতা হবে। এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশের ফুটবল এগিয়ে নেবে বিশ্বাস করেন মিজান, ‘অনেকেই বলছেন হামজারা আসায় স্থানীয় ফুটবলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমি মনে করি না। বরং স্থানীয় ফুটবলাররা উপকৃত হবেন। অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এ ছাড়া দলে সুযোগ পেতে তাদের অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। নব্বইয়ের দশকের পর দেখেছি, ফুটবলারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কম। একই মুখকে বারবার খেলতে দেখা গেছে। অথচ আমাদের সময় দলে সুযোগ পেতে একেকটি পজিশনে পাঁচ-ছয় জন করে ফুটবলার লড়াই করতেন।’
মিজানুর রহমান ১৯৮৮ থেকে ’৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে খেলেছেন। দূরপাল্লার শটের জন্য খ্যাতি ছিল তাঁর। ১৯৯৯ সালে পরিবারসহ কানাডা পাড়ি দেন। টরন্টোয় বাস করছেন। সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকলেও দেশের ফুটবলের খোঁজ রাখেন মিজান।