ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। মিরপুরের আকাশভাঙা বৃষ্টিতে ভিজে সিরিজ জয়ের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতেন জাকের আলি অনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ, পারভেজ হোসেন ইমন, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনরা। ক্রিকেটারদের বৃষ্টিভেজা আনন্দ দেখে মনেই হয়নি কিছুক্ষণ আগে পাকিস্তানের কাছে ৭৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছেন। রেকর্ড বইয়ে লেখা হয়েছে হয়তো একটি হারের সংখ্যা। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস পালনে বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দ, উচ্ছ্বাসটা ছিল দেখার মতো। গতকাল শেষ ম্যাচটি স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে উপভোগ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও পিসিবি সভাপতি মহসিন নাকভি।
শ্রীলঙ্কার পর পাকিস্তান; দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে টানা টি-২০ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। দুই সিরিজের ব্যবধান একই, ২-১। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ পিছিয়েও সিরিজ জিতেছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল হোয়াইটওয়াশের হাতছানি। শুধু তাই নয়, হোয়াইওয়াশের বদলা নেওয়ারও সুযোগ ছিল লিটন বাহিনীর। মে-জুন মাসে পাকিস্তানের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। ঘরের মাটিতে টানা দুই জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-২০ ছিল গতকাল। জিতলেই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করত স্বাগতিকরা। সেই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ১৭৯ রানের টার্গেটে ১৬.৪ ওভারে ১০৪ রানে গুটিয়ে যায় লিটন বাহিনী। বড় ব্যবধানে হারের পরও ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস, ‘পুরো সিরিজে আমাদের ক্রিকেটাররা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। উইকেট দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। বল ব্যাটে আসছিল, তবে আমরা ভালো খেলতে পারিনি। নতুন ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়েছিলাম। সিরিজ জয় পজিটিভ হিসেবেই দেখছি।’
সফরকারী পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি ছিল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর। লিটন বাহিনীর ছিল হোয়াইটওয়াশ করানোর সুবর্ণ সুযোগ। লজ্জায় সিক্ত করানোর হাতছানির ম্যাচটিতে ব্যাটিং ও বোলিং উভয় বিভাগেই ব্যর্থ হয়েছে লিটন বাহিনী। অথচ টস জিতেছিলেন টাইগার অধিনায়ক। জিতে উইকেটের সহায়তা আদায়ে ফিল্ডিং নেন। সফরকারী দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও সাইম আইয়ুব ৭.৫ ওভারে ৮২ রানের শক্ত ভিত দেন। সাইম ১৫ বলে ২১ রানে সাজঘরে ফিরলেও সাহিবজাদা খেলেন ৬৩ রানের ইনিংস। ম্যাচসেরা সাহিবজাদা ৪১ বলের ইনিংসটিতে চার মারেন ৬টি এবং ছক্কা ৫টি। শেষ দিকে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাওয়াজ ১৬ বলে ২টি করে ও ছক্কায় ২৭ রান করলেও পাকিস্তান সংগ্রহ করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান। মিরপুর স্টেডিয়ামে যা টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। মিরপুরে টাইগারদের বিপক্ষে পাকিস্তানের দলগত সর্বোচ্চ ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে, ৫ উইকেটে ১৯০ রান। অবশ্য এ মাঠে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সর্বোচ্চ স্কোর ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটে ১৯১ রান। মিরপুরে এ নিয়ে চতুর্থবার ১৫০ ছাড়ানো স্কোর করেছে পাকিস্তান। ২০১৬ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৫১ রান করেছিল। দেড় শ স্কোর ছাড়ানো চারটি ম্যাচই জিতেছে পাকিস্তান।
৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে, ২৭ বল হাতে রেখে। যা দেশটির বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। ২০১৫ সালে ১৪২ রান তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। যা ছিল দলটির বিপক্ষে টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। ওই ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমান টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন। পাকিস্তানকে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানে অলআউটের ম্যাচটিতে মুস্তাফিজের স্পেল ছিল ৪-০-৬-২। দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচটি লিটন বাহিনী জিতেছে টানটান উত্তেজনায়। ৮ রানের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটিতে টাইগারদের ১৩৩ রানের জবাবে সফরকারীরা করেছিল ১২৫ রান। গতকাল ১৭৮ রানে আটকে রেখেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হেরে যায়। লিটন বাহিনীর ইনিংসে সিমিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ছাড়া আর কোনো ব্যাটারই উল্লেখ করার মতো রান করেনি। শেষ ব্যাটার হিসেবে শরিফুল ইসলাম আউট হওয়ার সময় সাইফুদ্দিন অপরাজিত ছিলেন ৩৫ রানে। ৩৪ বলের ইনিংসটিতে ছিল ২টি করে চার ও ছক্কা। শ্রীলঙ্কা সিরিজের সেরা ক্রিকেটার অধিনায়ক লিটন পুরোপুরি ফ্লপ। তিন ম্যাচে তিনি রান করেন যথাক্রমে ৮, ৮ ও ১।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ১৭৮/৭, ২০ ওভার (সাহিবজাদা ফারহান ৬৩, সাইম ২১, হাসান নাওয়াজ ৩৩, সালমান আলি আগা ১৩*, মোহাম্মাদ নাওয়াজ ২৭। আফ্রিদি ১*; মেহেদি ৩-০-৩৬-০, শরিফুল ৪-০-৩৯-১, তাসকিন ৪-০-৩৮-৩, নাসুম ৪-০-২২-২, সাইফ ৪-০-২৮-১, মিরাজ ১-০-১৪-০)।
বাংলাদেশ : ১০৪/১০, ১৭.৪ ওভার ( মোহাম্মদ নাঈম ১০, লিটন দাস ৮, মেহেদি মিরাজ ৯, জাকের আলি ১, শামীম পাটোয়ারী ৫, সাইফুদ্দিন ৩৫*, নাসুম আহমেদ ৯, শরিফুল ইসলাম ৭। সালমান মির্জা ৪-০-১৯-৩, ফাহিম ২-০-১৩-২, দানিয়াল ৩-০-১৬-১, সালমান আগা ২-০-১২-১, সাইম ১-০-২-০, তালাত ৩-০-৩২-২, মোহাম্মাদ নাওয়াজ ১.৪-০-৪-২)।
ফল : পাকিস্তান ৭৪ রানে জয়ী।