ম্যাচটা শেষ হতেই লাল-সবুজের ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি গায়ে জড়িয়ে নিলেন তপু বর্মণরা। আর্জেন্টাইন কোচ মারিও গোমেজ একে একে শিষ্যদের ধন্যবাদ জানালেন। কারও সঙ্গে হাত মেলালেন। কারও পিঠ চাপড়ে দিলেন। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মোহামেডানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছেন মারিও গোমেজের শিষ্যরা।
নতুন মৌসুম। নতুন করে গড়ে তোলা দল। বসুন্ধরা কিংসের কোচও নতুন। মোহামেডানের কোচ পুরোনো হলেও দলের অনেকেই নতুন। বসুন্ধরা কিংসে ডরিয়েলটনের সঙ্গে যোগ হয়েছেন রাফায়েল, সানডেরা। অন্যদিকে মোহামেডানে মুজাফফরভদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এলি কেকের মতো ফুটবলাররা। গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস-মোহামেডান লড়াই দর্শকের আগ্রহ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। দীর্ঘদিন পর লিগ শিরোপা জয় করে সাদা-কালো জার্সিধারীরা সমর্থকদের মনে দারুণ সাড়া ফেলেন। নতুন মৌসুমেও মোহামেডানকে একই রূপে দেখার আশায় ছিলেন সমর্থকরা। তবে বসুন্ধরা কিংস ম্যাচটাকে একপেশে করে দেয়। চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপা নিজেদের ঘরেই রেখে দেয় দলটি। গতবার প্রথম চ্যালেঞ্জ কাপেও মোহামেডানকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। জয় পেয়েছিল ৩-১ ব্যবধানে। এবার জয়ের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিল দলটি। বসুন্ধরা কিংস আট মৌসুমে ১৪ নম্বর ট্রফি ঘরে তুলল। চলতি মৌসুমে আরও চারটি ট্রফি জয়ের সুযোগ আছে মারিও গোমেজের দলটির।
বসুন্ধরা কিংস-মোহামেডান ম্যাচ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ১১ মিনিট পর। ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করেন ডরিয়েলটন। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে সোহেল রানার পাসে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান ডরিয়েলটন। পেছন থেকে তাঁর পায়ে ল্যাং মেরে ফেলে দেন মোহামেডানের মেহেদী হাসান মিঠু। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি সায়মন। পেনাল্টি শট থেকে গোলরক্ষক সুজনকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান ডরিয়েলটন। ৬ মিনিট পর পেনাল্টি পায় মোহামেডানও। ডি-বক্সের ভিতরে মোহামেডানের এলি কেকে এমানুয়েলকে তারিক কাজী ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি শট নিয়ে গোলরক্ষক শ্রাবণকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান মুজাফফরভ। ম্যাচের প্রথম ১৩ মিনিটেই দুই পেনাল্টি থেকে ২ গোল করে দুই দল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আরও ১টি গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ডরিয়েলটন। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ ব্যবধানেই। প্রচণ্ড গরম অসহনীয় হয়ে ওঠায় ম্যাচের ৩০ মিনিট পরই দিতে হয় কুলিং ব্রেক।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকে। ৬৩ মিনিটে কিংসের সিনিয়র সোহেল রানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ডের ইশারায় মাঠ ছাড়েন। তবে ১০ জনের দল হওয়ার পর কিংসের খেলায় ধার আরও বেড়ে যায়। একের পর এক আক্রমণে মোহাডোনের ডিফেন্স লাইন তছনছ হয়ে যায়। ৭২ মিনিটে কিংসের ছোট সোহেল রানা কর্নার কিক নেন। ডি-বক্স থেকে মোহামেডানের ডিফেন্ডাররা বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন। ডি-বক্সের বাইরে থাকা রাফায়েল বল পেয়ে জোরালো শটে গোল করেন। ৩ মিনিট পর ব্যবধান ৩-১ করেন সানডে এমানুয়েল। রাকিব নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে ছুটে যান। ডান দিক থেকে লম্বা ক্রস দেন বাঁ পাশে থাকা ডরিয়েলটনকে। ব্রাজিলিয়ান এ স্ট্রাইকার ছোট করে ডি-বক্সে পাস দেন সানডেকে। ডান পায়ের শটে গোলরক্ষক সুজনকে বোকা বানিয়ে গোল করেন সানডে এমানুয়েল। ৮৬ মিনিটে সানডের বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গোলরক্ষক সুজনকে দুবার পাশ কাটিয়ে গোল করেন ডরিয়েলটন। আগে থেকেই ক্ষুব্ধ মোহামেডানের সমর্থকরা এবার যেন পাগল হয়ে যান। মাঠে একের পর এক বোতল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পাশাপাশি বেগুনি রঙের স্মোক ফ্লেয়ারও নিক্ষেপ করেন তারা। কিছু সময়ের জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৬ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। তবে মোহামেডান ব্যবধান কমাতে পারেনি। দারুণ এক জয়ে মৌসুম শুরু করল বসুন্ধরা কিংস। প্রতিপক্ষদের আগাম জানিয়ে রাখল, এবার সব ট্রফির দিকেই চোখ তাদের।