ফাইনালের মতো ফাইনাল জিতে ইতিহাস লিখল ভারত। ইতিহাস লিখলেন তিলক ভার্মা। এশিয়া কাপের ৪১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ফাইনাল খেলেছে দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। টানটান উত্তেজনার ঐতিহাসিক ম্যাচটি ৫ উইকেটে জিতে ফের এশিয়া সেরা হয়েছে ভারত। ১৭ আসরে রেকর্ড ৯ বার চ্যাম্পিয়ন ভারত। সূর্যকুমার যাদবের ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টানা ৭ ম্যাচ জিতে। ৩টিই ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। ভারতকে টি-২০ এশিয়া কাপে স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন করেন তিলক ভার্মা ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। ৪ মেরে উইনিং শটটি নেন রিঙ্কু সিং।
টার্গেট ১৪৭ রান। ওভারপ্রতি ৭.৬২। টি-২০ ক্রিকেটে আহামরি নয়। ছন্দে থাকা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের জন্য তো নয়ই। সূর্যকুমারের ভারত রয়েছে দারুণ ছন্দে। দলটি টানা ৬টি ম্যাচ খেলে টি-২০ এশিয়া কাপের ঐতিহাসিক ফাইনাল খেলেছে। ছয় জয়ের মধ্যে দুটি আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। গতকাল দুরন্ত বোলিংয়ে দেড় শর নিচে পাকিস্তানকে আটকে রেখে ব্যাটিংয়ে নেমেই চাপে পড়ে যায় ভারত। টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটার অভিষেক শর্মা ব্যক্তিগত ৫ রানে সাজঘরে ফেরেন। আসরে ৭ ম্যাচে টানা তিন হাফ সেঞ্চুরিতে ৩১৪। আরেক ওপেনার শুভমান গিলও ১২ রানের বেশি করতে পারেননি। ছন্দ হারানো ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার আউট হন ১ রানে। ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত। সেখান থেকে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫০ বলে ৫৭ রান যোগ করেন সঞ্জু স্যামসন ও তিলক ভার্মা। দলীয় ৭৭ রানে সঞ্জু ব্যক্তিগত ২১ বলে ২৪ রান করে আউট হন। ১২.২ ওভারে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে তিলক ও শিভম দুবে ৩৪ বলে ৬০ রান করে বিচ্ছিন্ন হন। দুবে ২২ বলে ৩৩ রান করেন। তিলক ৩৩ ম্যাচে চার নম্বর হাফ সেঞ্চুরি করেন। তিলক অপরাজিত থাকেন ৬৯ রানে। ৫৩ বলের ইনিংসটিতে খেলেন ৩ চার ও ৪ ছক্কা।
যে স্বপ্নের ব্যাটিং করার কথা ফাইনালে, তার ধারেকাছেই গেল না পাকিস্তান। দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান, ফখর জামান এবং সাইম আইয়ুব ছাড়া পাকিস্তানের অপরাপর ব্যাটাররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সাজঘরে ফেরার মিছিলে যোগ দিতে। ভারতের ৪ বোলার কুলদ্বীপ যাদব, জশপ্রীত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেলের মায়াবী বোলিংয়ে পাকিস্তান শেষ ৯ উইকেট হারায় মাত্র ৩৩ রানে! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। ১ উইকেটে ১১৩ থেকে ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে অলআউট। শেষ ৯ উইকেট হারাতে পাকিস্তানের ব্যাটাররা বল খেলেন ৩৩টি। ২০০০ ও ২০১২ সালের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন মূলত ধসিয়ে দেন ‘চায়নাম্যান’ স্পিনার কুলদ্বীপ যাদব। কুলদ্বীপ এক ওভারেই গুঁড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন। ১৭তম ওভারে ৩ উইকেট নেন কুলদ্বীপ। যদিও হ্যাটট্রিক করেননি। ১৬.১ ওভারে আউট করেন সালমান আগাকে, ১৬.৪ ওভারে শাহীন আফ্রিদি ও ১৬.৬ ওভারে ফাহিম আশরাফকে আউট করেন। চায়নাম্যান স্পিনার ছাড়াও অক্ষর ও বরুণের ঘূর্ণিতে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার পুরোপুরি ধসে পড়ে। অথচ টস হেরে ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার ফারহান ও ফখর ৯.৪ ওভারে ৮৪ রানের ভিত দিয়েছিলেন। দুই ওপেনারের গড়ে দেওয়া ভিতে মনে হয়েছিল স্বপ্নের ফাইনালে বড় স্কোর করবে সাবেক বিশ্ব ও এশিয়া চ্যাম্পিয়নরা। ভারতের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ফারহান, ফখর ও আইয়ুব ছাড়া বাকি ব্যাটারের স্কোর ছিল টেলিফোন নম্বর। পাকিস্তানের ব্যাটাররা ছক্কা মারেন ৫টি এবং চার ১০টি। ভারতের বোলাররা ডট নেন ৪৫টি।
লিগ ও সুপার ফোরের মতো স্বপ্নের ফাইনালও রাজনীতির মারপ্যাঁচে হেরে গেছে। দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এতটাই বৈরী যে, টি-২০ এশিয়া কাপের স্বপ্নের ফাইনালেও দুই অধিনায়ক হাত মেলাননি। টস জিতে ভারতের সূর্যকুমার যাদব পাকিস্তানের সালমান আগাকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে হাঁটা ধরেন। আগের দুই ম্যাচেও একই ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন দুই অধিনায়ক। নেটিজেনরা বিস্তর সমালোচনা করেছেন। পাকিস্তানের দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান শুরু থেকে আগ্রাসি ব্যাটিংয়ে ৯.৪ ওভারে ৮৪ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন। ফারহান ব্যক্তিগত ৫৭ রানে সাজঘরে ফিরেন বরুণের বলে। ৩৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি চলতি আসরে ফারহানের দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি। ফখর ব্যক্তিগত ৪৬ রানে আউট হন বরুণের বলে। সাইম ১৪ রান করে কুলদ্বীপের প্রথম শিকার হন। এরপর পুরোটাই ভারতের বোলারদের দাপট। ম্যাচে ইনজুরির জন্য খেলেননি হার্দিক পান্ডিয়া। নতুন বলে ওপেন করেন শিভম দুবে। তার স্পেল ৩-০-২৩-০। বুমরাহ ৩.১-০-২৫-২, বরুণ চক্রবর্তী ৪-০-৩০-২, অক্ষর প্যাটেল ৪-০-২৬-২, কুলদ্বীপ ৪-০-৩০-৪, তিলক ভার্মা ১-০-৯-০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ১৯.১ ওভারে ১৪৬ (ফারহান ৫৭, ফখর ৪৬, সাইম ১৪, হারিস ০, সালমান ৮, তালাত ১, নাওয়াজ ৬, আফ্রিদি ০, ফাহিম ০, রউফ ৬, আবরার ১*; দুবে ৩-০-২৩-০, বুমরাহ ৩.১-০-২৫-২, বরুণ ৪-০-৩০-২, অক্ষর ৪-০-২৬-২, কুলদ্বীপ ৪-০-৩০-৪, তিলক ১-০-৯-০)
ভারত : ১৯.৪ ওভারে ১৫০/৫ (অভিষেক ৫, গিল ১২, সূর্যকুমার ১, তিলক ৬৯*, স্যামসন ২৪, দুবে ৩৩, রিঙ্কু ৪*; আফ্রিদি ৪-০-২০-১, ফাহিম ৪-০-২৯-৩, নাওয়াজ ১-০-৬-০, রউফ ৩.৪-০-৫০-০, আবরার ৪-০-২৯-১, সাইম ৩-০-১৬-০)
ফল : ভারত ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন