ক্রীড়াঙ্গনে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সুনাম বরাবরই ছিল। কর্মকর্তারা যেমন খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেননি। তেমনিভাবে খেলোয়াড়রা ম্যানেজমেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। একটা সু-শৃঙ্খল দল বলতে যা বুঝায় সব গুণাবলীই ছিল শেখ রাসেলের ভেতর। নব্বই দশকে পাইনিয়ার লিগের মাধ্যমে ফুটবলে শেখ রাসেলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পাইওনিয়ার, তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০০৪ সালে দেশের ফুটবলে সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর প্রিমিয়ার লিগে তাদের অভিষেক ঘটে। শুরুতেই রানার্সআপ হয়ে চমকও সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু শিরোপা অচেনায় থেকে যাচ্ছিল। লিগ নয় কোনো টুর্নামেন্টে ট্রফি জেতাটা শেখ রাসেলের যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। অথচ দল হিসেবে কোনো মৌসুমে তারা দুর্বল ছিল না। শেষ পর্যন্ত গেল মৌসুমেই বাজিমাত করে শেখ রাসেল। দেশ সেরা তারকাদের নিয়ে দল গঠন করে একে একে ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও পেশাদার লিগে বিজয়ের নিশানা উড়ায়। সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে এক মৌসুমে চার ট্রফি জিতে দেশের ফুটবলে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করত তারা।
যাক তিন আসরেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া কম গৌরবের নয়। কেননা এর আগে ঢাকা মোহামেডান ছাড়া এ কৃতিত্ব ছিল না কোনো ক্লাবের। গতবারের ট্রিপল বিজয়ী শেখ রাসেলের এবার কোনো আসরেই পাত্তা মিলছে না। মৌসুমের প্রথম ট্রফি ফেডারেশন কাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়। স্বাধীনতা কাপেও চরম ব্যর্থতা। লিগ এখনো অনেক বাকি থাকলেও যে সংকটাপন্ন অবস্থা চলছে তাতে শিরোপা, রানার্সআপ হওয়াতো দূরের কথা পজিশন একেবারে নিচে গিয়ে ঠেকে কিনা সেটাই শঙ্কা জেগে উঠেছে। কথা হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেলের এত করুণ হাল কেন? এটা ঠিক গতবারের বেশ ক'জন নির্ভরযোগ্য তারকা এবার অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু যারা আছেন তাদের মান এত খারাপ নয় যে এমন বিপর্যয় ঘটবে। তাহলে কি ক্লাবে কোনো সমস্যা চলছে? ১২ ম্যাচে ৪ ড্র আর ৪ হারে ব্রাদার্সের সমান ১৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। অবশ্য গোল পার্থক্যে এখন তাদের অবস্থান পাঁচে। স্বাধীনতা কাপে ভরাডুবি ঘটার পর গত দুই বছরে দায়িত্বে থাকা মারুফুল হককে অব্যাহতি দিয়ে শেখ রাসেল বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছে। অথচ বিপর্যয় কাটছে না। প্রথমপর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে শেখ রাসেলকে আরও বেশি মলিন মনে হচ্ছে। মাঠে খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সই বলে দিচ্ছে তারা যেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে খেলছে। চ্যাম্পিয়নদের করুণ দশা জানতে গতকাল অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্যসহ বেশ ক'জন ফুটবলারকে ফোন করা হলে এ ব্যাপারে তারা কথা বলতে চাননি। পরে এক ফুটবলার নিজেই ফোন করে জানালেন, যদি আপনি আমার নাম উল্লেখ না করেন তাহলে কিছু বলতে চাই। তিনি একটাই কথা বললেন, ভালো খেলার জন্য ভালো পরিবেশ লাগে। এখন শেখ রাসেলে তা থাকাতে ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এরপর তিনি জানালেন এরচেয়ে বেশি তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
ক্লাব সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসা করা হলে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, যারা মাঠে খেলছে তাদের কাছে জানতে চান শেখ রাসেল কুলিয়ে উঠতে পারছে না কেন? আলম দীর্ঘদিন ক্লাবের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছেন। কখনো তার মুখে কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যায়নি। গতকাল কিন্তু পুরোপুরি ব্যতিক্রমী মনে হলো। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ফুটবলে উন্নয়ন ঘটছে না কেন জানেন? নিজেই উত্তর দিয়ে বললেন, খেলোয়াড়দের কমিটমেন্টের অভাবে। কমিটমেন্ট রক্ষা করলে দেশের ফুটবল অনেকদূর এগিয়ে যেত। এবার আমার ক্লাবেও একই অবস্থা। লিগ যেখানে ফিফটি পারসেন্টও শেষ হয়নি সেখানে আমরা খেলোয়াড়দের আশিভাগ পেমেন্ট ক্লিয়ার করেছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কমিটমেন্ট ছিল তারা দলের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে লড়বে। এখন আপনারাই বিচার করুণ তারা সেভাবে খেলছে কিনা? সব ম্যাচে ভালো খেলবে এমন আশা কেউ কোনোদিন করে না। কিন্তু অধিকাংশ ম্যাচে ফ্লপ করলে তাকি মানা যায়? ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে আমি ব্যর্থতা মেনে নিয়েছি। এখন লিগেও চ্যাম্পিয়ন না হোক তা নিয়ে আক্ষেপ করব না। কিন্তু দল খেলতেই পারছে না এরচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি কী হতে পারে। কোচ মারুফের অব্যাহতি দেওয়াটা খেলোয়াড়রা মেনে নিতে পারেননি যার প্রভাব মাঠেও পড়ছে কি? দেখেন কী দুর্ভাগ্য আমার, ঢাকার মাঠে কেউ কি মাঝ পথে কোচ পরিবর্তন করেনি? অথচ শেখ রাসেলে খেলোয়াড়দের মনোভাব এমন দেখে মনে হচ্ছে আমি যেন অন্যায় করে ফেলেছি। এ অবস্থায় শেখ রাসেল কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? আলম বলেন, আমি হতাশা বিশ্বাস করি না। আশাবাদী বলে জীবনে এতটা পথ সফলভাবে পাড়ি দিতে পেরেছি। কিন্তু খেলোয়াড়দের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা দেখছি তাতে আমি ভালো কিছু করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারছি না। আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে খেলোয়াড়দের বাকি পেমেন্ট দেব না। যে টাকা দিয়েছি সে অনুযায়ী তারা ক্লাবকে কী দিতে পেরেছে। অর্থাৎ ক্লাবে যে সংকট তৈরি হয়েছে তাতে মৌসুমটা শেখ রাসেলের কীভাবে শেষ হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে সংকটাপন্ন অবস্থায় অনেক খেলোয়াড় এখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামীতে নতুন দলে যোগ দেওয়ার।