মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সময়ের হিসেবে এখনও বাকি ১১ মাস। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেন জার্গেনসন। ৩৭ বছর বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ান ই-মেইলে বিসিবিকে জানিয়েছেন, জুন মাসে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর তিনি আর দায়িত্ব পালন করবেন না। অবশ্য বিসিবি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করছেন জার্গেনসন। জার্গেনসনের আগে জাতীয় দলের ট্রেনারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ডেবিড ডয়ার। আরেক অস্ট্রেলিয়ান রিচার্ড ম্যাকিন্সও বিসিবি-সাহারা একাডেমির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর চিঠি দিয়েছেন বিসিবিকে। জুন মাসের মধ্যে জার্গেনসনের জায়গায় বিশ্বকাপ পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য কোচ নিয়োগ দিতে পারে বিসিবি। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দুই লিজেন্ড ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী ও ওয়াসিম আকরাম।
শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাজে পারফরম্যান্স এবং এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয় টাইগাররা। দল ব্যর্থ হওয়ায় ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন উঠে, বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালক চাইছেন না জার্গেনসনের মেয়াদ বাড়াতে। অবশ্য টি-২০ বিশ্বকাপের দলের চরম ব্যর্থতার পর বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বৈঠকে বসেছিলেন কোচ জার্গেনসন, অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও টিম ম্যানেজমেন্টদের সঙ্গে। ওই বৈঠকের পর বিসিবি সভাপতি মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেছিলেন, দলে অনেক পরিবর্তন হতে পারে। তারই ধারায় ক্রিকেটাঙ্গনে গুঞ্জন চলছিল জার্গেনসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বোধহয় তা আগেই টের পেয়েছিলেন জার্গেনসন। তাই বিসিবি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তার এ সিদ্ধান্ত। জার্গেনসনের পদত্যাগপত্র জমার দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, 'শেন জার্গেনসন পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তিনি চাইছেন না জুন মাসে ভারত সিরিজের পর আর কাজ করতে। তবে বিসিবি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। বোর্ড তার সঙ্গে আলাপ করবে। তারপর বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে।' পদত্যাগ প্রশ্নে জার্গেনসনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি এখনো। ছুটি কাটিয়ে তিনি ঢাকায় আসবেন ৩০ এপ্রিল।
বাংলাদেশের কোচিং স্টাফের সঙ্গে জার্গেনসনের সংযুক্ত ২০১১ সালে অক্টোবরে। তখন অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত রিচার্ড পাইবাস। শুরুতে জার্গেনসন ছিলেন বোলিং কোচ। চার মাস চাকরি করার পর হঠাৎ করেই জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর দায়িত্ব নেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ল। ছয় মাস পর তিনিও সরে দাঁড়ান হেড কোচের দায়িত্ব থেকে। ল'র সরে দাঁড়ানোয় বিপাকে পড়ে যায় ক্রিকেট বোর্ড। তখন অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় জার্গেনসনকে। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই টাইগাররা ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এরপর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেড কোচ হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় জার্গেনসনকে। তাকে যখন হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তখন বিসিবি জানিয়েছিল, হেড কোচের পদে যারা আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ফিটেস্ট জার্গেনসন।'
বয়স ৩৭। কিন্তু জার্গেনসনের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু মাত্র ২১ বয়সে। বাংলাদেশের কোচিং স্টাফে নাম লেখানোর আগে নিউজিল্যান্ডের বোলিং কোচ ছিলেন ২০০৮-২০১০ সাল পর্যন্ত। জার্গেনসনের আগে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন পাকিস্তানের মুদাসসর নজর, মহসিন কামাল, ভারতের মহিন্দার অমরনাথ, অস্ট্রেলিয়ার ডেভ হোয়াটমোর, স্টুয়ার্ট ল, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড পাইবাস।