১৯৩০ থেকে ১৯৭৪ সাল। এর মধ্যে দশটা বিশ্বকাপ ভাগ করে নেয় উরুগুয়ে, ব্রাজিল, পশ্চিম জার্মানি, ইতালি ও ইংল্যান্ড। এই দশটা বিশ্বকাপের কোনোটাতেই ছিল না এশিয়ান মুসলমানদের কোনো প্রতিনিধি। ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপের আসর বসে আর্জেন্টিনায়। বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিশ্বকাপের মঞ্চ চূড়ান্ত হওয়ার পর দেখা গেল, এশিয়ান মুসলমানদের জন্য বিশ্বকাপের দরোজা খুলেছে ইরান। বাছাই পর্বে দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত পর্ব খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। বিশ্বকাপে এশিয়ান মুসলমানদের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে আর্জেন্টিনায় হাজির হয় ইরান।
ইরানিরা তখন ফুটবলে নিজেদের স্বর্ণযুগ অতিক্রম করছিল। 'এশিয়ান পেলে' খ্যাত হাসান রওশান, এশিয়ার শতাব্দী সেরা গোলরক্ষক নাসের হেজাজি এবং আলি পারভিনদের নিয়ে ইরান তখন এশিয়ান ফুটবলের দূরন্ত দল। তবে বিশ্বকাপের মতো আসরে বড় কিছু করে দেখানোর যোগ্যতা তখনো হয়নি এশিয়ান দলগুলোর। প্রথম আসর থেকে অবশ্য একেবারে খালি হাতে ফিরেনি ইরান। স্কটল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ড্র করেছিল ১-১ গোলে। সেই ম্যাচটা জিততেও পারত ইরান! এস্কান্দারিয়ানের আত্দঘাতী গোলেই বেঁচে গিয়েছিল স্কটিশরা। এরপর ইরানের দেখানো পথ অনুসরণ করেছে ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েত। এরপর ইরান ১৯৯৮ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলে।
ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চে ইরানের সেরা অর্জন ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে এফ গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়। জালাল তালেবির অধীন ইরানের এই অর্জন এরপর আর কোনো কোচই স্পর্শ করতে পারেনি।
কার্লোস কুইরোজ। পর্তুগিজ এই কোচ পর্তুগাল অনূধর্্ব-২০ দলকে উপহার দিয়েছেন দুটি যুব বিশ্বকাপ (১৯৮৯ ও ১৯৯১)। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে জয় করেছেন স্প্যানিশ সুপার কাপ। একজন হাই প্রোফাইল কোচ হিসেবেই ইরান কার্লোস কুইরোজকে দলে এনেছিল ২০১১ সালে। নামের প্রতি যথার্থ বিচারই করেছেন এই পর্তুগিজ। তার অধীনে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এশিয়ান ফুটবলের সেরা শক্তি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে দুই লেগেই ১-০ গোলের জয় পেয়েছে ইরান।
ইরানকে কীভাবে বদলে দিলেন কুইরোজ! কখনো ৫-৩-২ ফরম্যাটের রক্ষণাত্দক আবার কখনো ৩-৪-৩ ফরম্যাটের আক্রমণাত্দক ফুটবলে অভ্যস্ত করেছেন শিষ্যদের। কখনো ইতালির রক্ষণাত্দক ফুটবল আবার কখনো জার্মানির কাউন্টার আক্রমণের তালিম দিয়েছেন ইরানকে। এভাবেই ইরান গত কয়েক বছরে হয়ে উঠেছে এশিয়ান ফুটবলের সেরা শক্তি। কার্লোস কুইরোজের দলে বেশ কয়েকজান তারকা আছেন যারা ইংলিশ, জার্মান এবং স্প্যানিশ ক্লাবে খেলছেন। সেরা স্ট্রাইকার রেজা গুচানেজাদ খেলছেন ইংলিশ দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলের ক্লাব চার্লটন অ্যাথলেটিকে। মিডফিল্ডার আশকান দেজাগাহ খেলছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহ্যামে। এছাড়া আফ্রিকা ও এশিয়ার বিখ্যাত ক্লাবগুলোতে ইরানি ফুটবলারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৩৭ নম্বরে থাকা ইরান বিশ্বকাপে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া ও বসনিয়ার। আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলে পরাজিত হয়েছে ইরান। তবে বসনিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলে ৪টিতেই জিতেছে তারা। এই রেকর্ড কার্লোস কুইরোজের শিষ্যদের বাড়তি প্রেরণা যুগাতে পারে। পুরনো মঞ্চে বদলে যাওয়া এই ইরান কি এবার নতুন কিছু করে দেখাতে পারবে! নাকি আগের তিনবারের মতো এবারেও গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিবে তারা!
কোচ : কার্লোস কুইরোজ
অধিনায়ক : জাভেদ নিকৌনাম
সেরা তারকা : রেজা গুচানেজাদ, করিম আনসারি ও জাভেদ নিকৌনাম
ফরমেশন : ৩-৪-৩ অথবা ৫-৩-২
ফিফা র্যাঙ্কিং : ৩৭
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১৯৭৮, ১৯৯৮ ও ২০০৬
ম্যাচ ডে : ১৬ জুন (নাইজেরিয়া), ২১ জুন (আর্জেন্টিনা) ও ২৫ জুন (বসনিয়া)
গ্রুপ এফ : ইরান, আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা