দিদিয়ের দ্রগবার ভাগ্যটা বড় খারাপ। ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকায় কত কিছুই না আছে তার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছেন চেলসির হয়ে। টার্কিশ লিগ জিতেছেন গ্যালাটাসারির জার্সিতে। আফ্রিকার বর্ষসেরা হয়েছেন দুবার। কিন্তু দ্রগবার মতো তারকা এখনো বিশ্বকাপের মঞ্চে জাতীয় দলকে গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে পারেননি। আইভরিকোস্ট প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে ওঠে আসে ২০০৬ সালে। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে দ্রগবার নেতৃত্বে আইভরিয়ানরা গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ফেবারিট আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডের। সঙ্গে ছিল সার্বিয়া অ্যান্ড মন্টিনিগ্রো।
জার্মান বিশ্বকাপে দ্রগবাদের জন্য গ্রুপ পর্ব পারি দেওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডের কাছে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল তারা। তবে সার্বিয়া অ্যান্ড মন্টিনিগ্রোকে হারিয়েছিল ৩-২ গোলে। ২০১০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে হাজির হয় হাতির পাল। তবে এবারও সুবিধা করতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবং রোনালদোদের দুর্দান্ত পর্তুগাল। এ ছাড়াও ছিল উত্তর কোরিয়া। ব্রাজিল ও পর্তুগালের মতো ফেবারিট দল থাকলেও আইভরিয়ানরা আগের বারের চেয়ে ভালো ফলাফল করে দক্ষিণ আফ্রিকায়। পর্তুগালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। ব্রাজিলের কাছে অবশ্য হেরে যায় ৩-১ গোলে। তবে উত্তর কোরিয়াকে হারিয়ে দেয় ৩-০ গোলে। এক পয়েন্টে এগিয়ে থেকে নকআউট পর্বে ব্রাজিলের সঙ্গী হয় পর্তুগাল।
নকআউট পর্ব অধরা থাকলেও আইভরিকোস্ট বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শক্তি হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। দিদিয়ের দ্রগবা ছাড়াও হাতির পালে আছে ইয়া তোরে, সলোমান কালু এবং কুলু তোরের মতো তারকার নাম। লিভারপুলের সেরা ডিফেন্ডার কুলু তোরে। সলোমান কালু খেলছেন ফরাসি ক্লাব লিলিতে। দিদিয়ের দ্রগবা খেলছেন টার্কিশ ক্লাব গ্যালাটাসারিতে। এ ছাড়াও ইতালিয়ান ক্লাব রোমায় আলো ছড়াচ্ছেন গারভিনহো। আইভরিকোস্টের জাতীয় দলের প্রায় সব তারকাই খেলছেন ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার অভিজ্ঞতা আছে অনেকেরই। ইউরোপিয়ান ফুটবলকে আত্দস্থ অনেক আগেই করেছে আইভরিয়ানরা। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে কি অতীতটাকে বদলাতে পারবেন দিদিয়ের দ্রগবারা!
ব্রাজিল বিশ্বকাপে আইভরিকোস্টকে খেলতে হবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের পাঁচ নম্বরে আছে কলম্বিয়া। গ্রিস আছে ১০ নম্বরে। এশিয়ান ফুটবলের সেরা দল জাপানের অবস্থান ৪৭ নম্বরে। র্যাঙ্কিং হিসেবে জাপান আইভরিকোস্টের (২১) অনেকটা নিচে হলেও সামুরাইদের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে দ্রগবাদের। এরই মধ্যে দুবার নকআউট পর্ব খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে জাপানের। চাপটা কীভাবে সামাল দিতে হয় তা জানে জাপানিরা।
কোচ সাবরি লামোচি অবশ্য কে কতটা শক্তিশালী তা ভাবছেন না। তিনি কেবল নিজেদের রক্ষণভাগটাকে প্রতিপক্ষের জন্য বন্ধ করে দিতে চান। দরজা বন্ধ করে দিলে গোল হবে কীভাবে! ২০১২ সাল থেকে দলের দায়িত্বে আছেন। দলকে খেলাচ্ছেন ৫-৩-২ ফরমেটের রক্ষণাত্দক ছকে। আইভরিকোস্টকে বিশ্বকাপে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য সাবরি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন দলটাকে। ব্রাজিলে হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট হতে পারে কলম্বিয়া, জাপান কিংবা গ্রিস। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত দিদিয়ের দ্রগবারা গ্রুপ পর্বের ব্যারিয়ারটা ভাঙতে পারেন কিনা!
এক নজরে
ডাক নাম : হাতি
কোচ : সাবরি লামোচি
অধিনায়ক : দিদিয়ের দ্রগবা
প্রধান তারকা : দিদিয়ের দ্রগবা, ইয়া তোরে ও সলোমান কালু
ফিফা র্যাঙ্কিং : ২১
ফরমেশন : ৫-৩-২
ম্যাচ ডে : ১৪ জুন (জাপান), ১৯ জুন (কলম্বিয়া) ও ২৪ জুন (গ্রিস)
গ্রুপ সি : আইভরি কোস্ট, গ্রিস, জাপান ও কলম্বিয়া