দুঃখ পেয়েছেন। অনেক দুঃখ। পরিমাণ এতটাই যে, বিশ্বকাপ ফুটবল যখন চলবে ব্রাজিলে, তখন তিনি ঘর ছেড়ে থাকবেন সুদূর ইউরোপে। দুঃখ ভুলতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে সময় পার করবেন তিনি। রোনালদিনহো; ব্রাজিল তথা বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা। অন্যতম শৈল্পিক ফুটবলার। যার ডান পায়ের জাদুতে মোহাচ্ছন্ন থাকতেন ফুটবলপ্রেমীরা।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। তাই আশা ছিল ফিলিপ লুই স্কোলারির স্কোয়াডে সুযোগ পাবেন। সুযোগ পেয়ে অবদান রাখবেন ব্রাজিলের হেঙ্া জয়ে। যেমনটা রেখেছিলেন ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে। কিন্তু মন গলেনি স্কোলারির। এই বর্ষিয়ান ফুটবলারের প্রতি নজরই দেননি। যদিও বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিল দলে সুযোগ দিয়েছেন বিশ্বের এক সময়কার সেরা ফুটবলারকে। মন ভরাতে পারেননি কোচের। তাই সুযোগ পাননি স্কোয়াডে। এতে বড় দুঃখ পেয়েছেন। কষ্ট দূর করতে চলে যাবেন ইউরোপে। এমনটাই জানিয়েছেন দুই বারের ব্যালন ডি'অর জেতা রোনালদিনহো, 'টিভিতে খেলা দেখে যতটা তৃপ্তি পাই, তার চেয়ে বেশি আনন্দ পাই মাঠে খেলতে। আমি ফুটবলার। খেলাই আমার কাজ। ধারাভাষ্য দিতেও ভালো লাগে না। তাই আমি ভাবছি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে ইউরোপ যাব।' রোনালদিনহো, রবিনহো, কাকাদের দলে জায়গা না দেওয়ায় স্কোলারির সমালোচনা করেছেন লিজেন্ড ফুটবলার পেলে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনি কোচের। অটল থেকেছেন নিজের সিদ্ধান্তে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যে সুযোগ পাবেন না, সেটা আন্দাজ করেছিলেন দুইবারের ফিফা বিশ্বসেরা ফুটবলার, 'ব্রাজিলের জার্সি গায়ে গত কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারিনি। তখনই মনে হয়েছিল বিশ্বকাপ দলে আমার সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে।'
১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর ব্রাজিল দীর্ঘ দুই যুগ পার করে শিরোপাহীন থেকে। ১৯৯৪ সালে কার্লোস আলবার্তো পেরেরা কোচিংয়ে বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়ে আবারও বিশ্বসেরা হয় বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশটি। পেন্টা বা পঞ্চমটি জিততে ব্রাজিলকে অপেক্ষা করতে হয় ২০০২ সাল পর্যন্ত। সেবার 'থ্রি আর'এ ভর করে স্কোলারি আবারও বিশ্বসেরা করেন ব্রাজিলকে। রোনাল্ডো, রিভাল্ডো ও রোনালদিনহো ছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলের সেই 'থ্রি আর'। এদের মধ্যে বয়সে তরুণ হলেও দলের অক্সিজেন ছিলেন রোনালদিনহো। ঝাকড়া চুলের তরুণ ফুটবলারটি যখন হরিণের মতো চপলা গতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়াতেন, তখন প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের সঙ্গে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতেন ফুটবলপ্রেমীরা। দেখতেন বল নিয়ে রোনালদিনহোর জাদুকরি সব কাজ। সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় ৪০ মিটার দূর থেকে যে ফ্রি কিকটি নিয়েছিলেন রোনালদিনহো, যা বোকা বানিয়েছিল ইংলিশ গোলরক্ষক ডেবিড সিম্যানকে। সেটাকে ধরা হয় বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা ফ্রি কিক হিসেবে। তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, পেলের দেশের আরও এক তারকা বিশ্ব কাঁপাবেন, বল পায়ে মাতাবেন, সঙ্গে মন হরণ করবেন ফুটবলপিয়াসীদের।
বিশ্বকাপ চলাকালীন ব্রাজিলে থাকবেন না, মাঠে আসবেন না! তবে তার হৃদয়ে কিন্তু ব্রাজিলের প্রতি ভালোবাসা থাকবে অটুট, 'আমি সুযোগ পেলাম কি, পেলাম না, সেটা বড় কথা নয়। দলের সব ফুটবলারকে আমার শুভেচ্ছা। ভালোভাবে খেল আর বিশ্বকাপ ট্রফি জয় কর।' বিশ্বকাপে না থাকলেও ব্রাজিল-স্পেন ফাইনাল আশা করছেন, 'আমার ফেবারিট ব্রাজিল। ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হিসেবে আশা করছি স্পেনকে। ওই দলে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। দুটো দল ফাইনাল খেললে সেটা হবে অসাধারণ।' পেলে, না ম্যারোডানা-এ নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে। তেমনি বিতর্ক রোনালদো ও লিওনেল মেসিকে নিয়ে। রোনালদিনহোর মতে এখন মেসিই সেরা, 'এখন রোনালদো ভালো খেলছেন। কিন্তু মেসি একাই বার্সেলোনাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।' নিজ দেশের নেইমারকে বলেছেন ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ, 'ইউরোপীয়ান লিগে সেট হতে একটু সময় লাগে। সেই সময়টা পার করছেন নেইমার। ঠিক উতরে যাবে। আমি মনে করি নেইমারই ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ।'