ফুটবল সৌন্দর্যের অাঁধার। ব্রাজিলিয়ান সাম্বা, জার্মানির পাওয়ার, ইংল্যান্ডের গতি, স্পেনের 'টিকিটাকা' ফুটবলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ফুটবলপিয়াসীরা। এমন নয়ন জুড়ানো ফুটবল দেখতে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতেও প্রস্তুত ফুটবলপ্রেমীরা। সৌন্দর্যের পুজারীরা যখন লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, মারিও বালোতেলি্লদের ফুটবল নৈপুণ্য দেখতে অপেক্ষায় থাকেন, তখন এসব ফুটবলাররা ফুটবলের বাইরে বিপণনের বস্তুও হয়ে উঠেন। শুধু বিশ্বকাপ নয়, সারা বছরই বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী সংস্থা ছুটে বেড়ায় ফুটবল তারকাদের পিছনে। বিশ্বের তিন জনপ্রিয় ক্রীড়া সামগ্রী প্রতিষ্ঠান নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর অনেকেই। তারকা ক্রীড়াবিদদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানাতে আবার নিজেদের মধ্যে অলিখিত প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে সংস্থাগুলো। এই প্রতিযোগিতায় রোনালদোসহ বিশ্বের সেরা ১০ ফুটবলারের ছয়জনই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর একটি ক্রীড়া সামগ্রী সংস্থার। মেসিসহ দুজন অন্য এক প্রতিষ্ঠানের এবং ইতালিয়ান সুপারস্টার অন্য একটির।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া সামগ্রী প্রতিষ্ঠান নাইকির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর পর্তুগাল ও রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার রোনালদো। রোনালদো এ মুহূর্তে বিশ্বের সবেচেয়ে বিপণনযোগ্য ফুটবলার। অ্যাডিডাসের অ্যাম্বাসেডর যখন বিশ্বসেরা ফুটবলার মেসি এবং বালোতেলি্ল তখন পুমার।
শুধুমাত্র ফুটবলারদেরই নয়, দেশগুলোর স্পন্সর হতে জোর লড়াই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে এই লড়াইয়ে নাইকি ও অ্যাডিডাসের লড়াই ছিল সমানে সমান। আফ্রিকা বিশ্বকাপে আটটি দেশের অফিসিয়াল স্পন্সর ছিল নাইকি। এবার আর দুটো বেড়ে দেশের সংখ্যা হয়েছে ১০টি। এবার নাইকি স্পন্সর স্বাগতিক ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, গ্রিস ও অস্ট্রেলিয়ার। অ্যাডিডাস স্পন্সর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, কলম্বিয়া, মেঙ্েিকা, জাপান, রাশিয়া ও নাইজেরিয়ার। গত আসরে অ্যাডিডাস স্পন্সর ছিল ১০ দেশের। বালোতেলি্লর পুমার এবার স্পন্সর চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি, উরুগুয়ে, ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট, চিলি, সুইজারল্যান্ড ও ঘানার মতো সাত দেশের।
নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার লড়াইয়ের আড়ালে মূল লড়াই নাইকি ও অ্যাডিডাসের মধ্যে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানেরই মূল লক্ষ্য সেরা ফুটবলারকে অ্যাম্বাসেডর বানানো। এতে করে বিশ্বব্যাপী বিপণনটাও হয় জমকালো। নাইকির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর রোনালদো একাই পাল্টে দিয়েছেন বাজার। রোনালদোর জার্সি বিক্রি হয়েছে এ বছর ২০ লাখের উপর। সেক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে মেসি। শুধু অ্যাম্বাসেডর কিংবা স্পন্সর হওয়ার লড়াইয়ে নয়, নাইকি ও অ্যাডিডাসের মধ্যে আরও একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে আড়ালে। বিজ্ঞাপন। জার্মানির বাস্টেন শোয়াইস্টাইগার, উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ, ব্রাজিলের দানি আলভেজদের নিয়ে নির্মিত নাইকির বিজ্ঞাপন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সারা বিশ্বে। সব কিছুতে পিছিয়ে পড়লেও বুটে একচ্ছত্র আধিপত্য অ্যাডিডাসের। অবশ্য নাইকি তাতেও ধীরে ধীরে থাবা বসাতে শুরু করেছে। নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মধ্যেই বিরাজমান লড়াই। কিন্তু সবকিছুর চুলচেড়া বিশ্লেষণে এগিয়ে কিন্তু রোনালদোর নাইকি।