উত্তাপ বাড়ছে। প্রতিদিনই তা বাড়ছে দুরন্ত গতিতে। 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' শুরু হতে বাকি মাত্র ১০ দিন। ঘড়ির কাঁটায় ২৪০ ঘণ্টা, ১৪৪০০ মিনিট এবং ৮৬৪০০০ সেকেন্ড। ১২ জুন বিশ্বের ২০৯টি দেশের প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি লোক এক সুতোয় গাথা পড়বে। সবার চোখ ও মন থাকবে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলের দিকে। বিশ্বের ৩২টি দেশ 'ব্রাজুকা' বল নিয়ে মেতে উঠবে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। বিশ্ব যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রাজিলের সাম্বা ফুটবল, স্পেনের টিকিটাকা ফুটবল, ইতালির কাউন্টার অ্যাটাক ফুটবল, জার্মানির পাওয়ার ফুটবল, ইংল্যান্ডের স্পিডি ফুটবল, নেদারল্যান্ডসের টোটাল ফুটবল এবং আর্জেন্টিনার পাসিং ফুটবল দেখতে, তখন ব্রাজিলে ভিন্ন মাত্রার উত্তাপ ছড়াচ্ছেন ব্রাজিলিয়ানরা। উন্নত শিক্ষা ও আবাসন ব্যবস্থার দাবিতে উত্তাল ব্রাজিলের বড় বড় শহরগুলো। বিক্ষোভের উত্তাপে যখন টালমাটাল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশটি, শঙ্কিত দলগুলো, তখন ব্রাজিলের ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক কাফু বিষয়টি খুব বেশি আমলে নিচ্ছেন না। বিশ্বাস করেন নেইমাররা পঞ্চাশের ট্রাজিডিকে ভুলিয়ে দিবেন।
বিশ্বকাপ ফুটবলকে আড়ালে ডাকা হয় ব্রাজিলের বিশ্বকাপ। বলার অনেক যৌক্তিক কারণও রয়েছে পিছনে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সাতবারের ফাইনালিস্ট। ব্রাজিলে ১৯৫০ সালে বসেছিল বিশ্বকাপের চতুর্থ আসর। পঞ্চাশের ওই আসরকে বলা হয় 'মারকানাজো'। ফাইনালে দুই লাখ সমর্থকের সামনে এগিয়ে থেকেও হেরে গিয়েছিল ব্রাজিল। সেই ট্রাজেডি এখন তাড়িয়ে বেড়ায় পাঁচবারের বিশ্বজয়ীদের। ৬৪ বছর পর আবারও বসছে ব্রাজিলে বিশ্বকাপের আসর। এবারও ব্রাজিলিয়ানরা তীর্থের কাকের মতো বসে আছে ১৩ জুলাইয়ে শিরোপা জয়ের আশায়। দুই দুটি বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য কাফুও মনে করেন শিরোপা জেতার সুযোগ রয়েছে ব্রাজিলের, 'বিশ্বকাপ জয়ই ব্রাজিলের ফুটবলারদের একমাত্র কাজ। সেটা ঘরে, বাইরে যেখানেই হউক। বিশ্বকাপে কখনো দ্বিতীয় হতে চায়না ব্রাজিল। রানার্সআপ হওয়া ব্রাজিলের জন্য অনেক বড় ব্যর্থতা। এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। দলের ফুটবলাররা সবাই তরুণ। কিন্তু চাপ নিতে অভ্যস্ত। আমি মনে করি নেইমার একাই ব্যবধান গড়ে দিবেন। সুতরাং আশা করছি ব্রাজিল শিরোপা জিতবে।'
১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে ব্রাজিল। প্রথম শিরোপা জয়ের কাছাকাছি পেঁৗছেছিল ১৯৫০ সালে। কিন্তু পারেনি। এরপর ১৯৫৮-২০০২ সাল পর্যন্ত পাঁচবার শিরোপা জিতেছে। তারপরও পঞ্চাশের সেই দুঃখ, কষ্ট তাড়িয়ে বেড়ায় ব্রাজিলিয়ানদের। সেটা ভোলার মোক্ষম সুযোগ এসেছে এবার। তাই ব্রাজিলিয়ানদের প্রার্থনা একটাই, শিরোপা। ব্রাজিলের হলুদ-নীল জার্সি গায়ে চড়িয়ে ১৪২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা কাফুর বিশ্বাস এবার সেই দুঃখ ভুলিয়ে দিবেন নেইমাররা, 'পঞ্চাশের দুঃখ ভুলিয়ে দেওয়ার সেরা সুযোগ এবার। আমি মনে করি নেইমাররা এবার সেই দুঃখ ভুলিয়ে দিবেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে দুঃখটা আরও ভারী হয়ে জেঁকে বসবে ব্রাজিলিয়ানদের ওপর।' বিক্ষোভ নিয়ে বলেন, 'প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ করছেন গণতান্ত্রিক উপায়ে। বিশ্বের কোনো দেশে বিক্ষোভ হয় না। অনেক দেশে যুদ্ধ হচ্ছে। তারপরও কিন্তু সেখানে ফুটবলা খেলা হচ্ছে।'
বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা মিশন শুরু হবে ১২ জুন ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে। ১৭ জুন মেঙ্েিকা ও ২৩ জুন ক্যামেরুনের বিপক্ষে গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচ খেলবে লুই স্কোলারির শিষ্যরা।