ক্রিকেটের পথে হাঁটতে শুরু করেছে ফুটবল। ক্রিকেটকে এখন আর কেউ স্বচ্ছ বলেন না। নিত্য ম্যাচ গড়াপেটা হয় ক্রিকেটে। ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে গড়াপেটার কথা উঠছে হরহামেশা। এতদিন এসবের বাইরে ছিল ফুটবল। রক্তে মাতন ধরানো, ছন্দোময় ফুটবল দেখতে রাতের পর রাত পার করেন ক্রীড়ানুরাগীরা। এবার সেখানেও থাবা বসিয়েছে জুয়াড়িরা। এবারের বিশ্বকাপে ম্যাচ গড়াপেটা হতে পারে, আশঙ্কা খোদ ফিফার। ফুটবলের শাসকগোষ্ঠী এরমধ্যেই বেশ কয়েকটি দল ও ফুটবলারকে চিহ্নিত করেছে, যারা বুকিদের প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারেন। অবশ্য দল কিংবা ফুটবলারদের নাম প্রকাশ করেনি ফুটবলের শাসক সংস্থা।
এমন শঙ্কা কেন ফিফার নিরাপত্তা বিভাগের। কিছুদিন আগে নাইজেরিয়া ও স্কটল্যান্ডের প্রীতি ম্যাচে যে গড়াপেটার নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, তার জেরেই এমন আশঙ্কা ফিফার। ফুটবল সংস্থার নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা যার্ল্ফ মুটসকে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে বেশ কিছু ফুটবলার ও দলকে বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা যেতে পারে। মুটস ইন্টারপোলের সাবেক কর্মকর্তা। বর্তমানে ফিফার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান।
১৯৩০-২০১০ পর্যন্ত গত আট দশকে বিশ্বকাপ হয়েছে ১৯টি। এখন পর্যন্ত কোনো আসরেই বুকিদের আনাগোনা নিয়ে কথা উঠেনি। কিংবা আলোচনা হয়নি ম্যাচ গড়াপেটার। যদিও বেশ কয়েকটি ম্যাচের ফল নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেকের। সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন, দুই দেশের ঊর্ধ্বতন মহলের আলাপ-আলোচনাতেই ম্যাচগুলোর ফল নির্ধারিত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১৯৮২ বিশ্বকাপে জার্মানি-অস্ট্রিয়া এবং ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা-পেরু ম্যাচ। ৭৮'র বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে হলে পেরুকে বড় ব্যবধানে হারাতে হতো স্বাগতিক আর্জেন্টিনাকে। ওই ম্যাচে ৬-০ গোলে পেরুকে হারায় আর্জেন্টিনা। ১৯৮২ সালে অস্ট্রিয়াকে মাত্র ১-০ গোলে হারায় জার্মানি। অথচ বড় ব্যবধানে হারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠত আলজেরিয়া। ম্যাচগুলোর ফল নিয়ে কথা উঠলেও গড়াপেটার কথা বলেননি কেউ। কিন্তু এবার জোর আশঙ্কা ফিফার নিরাপত্তা বিভাগের। মুটসের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ উইলসন রাজ পেরুমল নামে এক ফিক্সার এখন ফিনল্যান্ডের জেলে। এই ফিক্সর তার আত্দজীবনীতে স্বীকার করেছেন, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে তিনি গড়াপেটা করেছেন। পেরুমল হয়তো জেলে। কিন্তু তার সহযোগীরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুটস বলছেন, 'পেরুমলের সহযোগীরা এবার ম্যাচ গড়াপেটা করতে উপস্থিত থাকবেন ব্রাজিলে। বুকিরা হয়তো কোনো রেফারি কিংবা ফুটবলারদের ঘরে টোকা দিবেন না। কিন্তু এটা নিশ্চিত তারা প্রস্তাব পাঠাবে রেফারি কিংবা ফুটবলারদের।' ফিফার নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুটসের ধারণা ম্যাচ গড়াপেটা হতে পারে শুধুই গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচগুলোতে। ছোট ছোট দলগুলোও তাদের ফুটবলাররা ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত হতে পারেন। তাদের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না বলেই হয়তো বাড়তি অর্থের লোভে জড়িত হতে পারেন ম্যাচ গড়াপেটায়।
ফিফা নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা যার্ল্ফ মুটস ম্যাচ গড়াপেটার আশঙ্কা করছেন যেমন, তেমনই এটাকে আটকানোরও চেষ্টা করছেন। তিনি সফল হলে বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু কোনো কারণে যদি তার আশঙ্কা সত্যি হয়, তাহলে বিশ্বকাপের উন্মাদনা, আবেদন মুখোমুখি হবে নানান প্রশ্নের।