আগের রাতেই ঢাকায় পৌঁছেছেন হিথ স্ট্রিক। সময় নষ্ট না করে বিশ্রামের কথা ভুলে সকালেই হোটেল থেকে সোজা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আসেন। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন চারপাশ। যেন সব কিছুই নতুন নতুন লাগছে। যদিও এর আগে অনেক বার বাংলাদেশে এসেছেন। তখন ছিলেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার, কিংবা বোলিং কোচ। কিন্তু এবার এসেছেন সম্পূর্ণ 'নতুন' ভূমিকায়। জিম্বাবুয়ের সাবেক এই তারকা পেসার এখন বাংলাদেশের বোলিং কোচ।
কাল প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েই তার মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন। প্রথম দিনই কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের পেসারদের দুর্বলতা ও সম্ভাবনা নিয়েও। জোর দিয়ে বলেছেন, ভালো মানের পেসার পেতে হলের সবার আগের পেসারদের উপযোগী উইকেট তৈরি করতে হবে। হিথ স্ট্রিক বলেন, 'পেসারদের ধারাবাহিকতা দরকার। তবে এখানে পেসারদের ভালো করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে উইকেট। বোলাররা এখানে যে উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত, দেশের বাইরে গেলে সে রকম উইকেট পায় না। ফলে দেশের বাইরে বাংলাদেশের বোলাররা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এই সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে গত টি-২০ বিশ্বকাপে এখানকার উইকেট ভালো দেখেছি। আশা করি, সে রকমই পাবো। পেসারদের ভালো করতে হলে সবার আগে দরকার পেসারদের সহায়ক উইকেট।'
বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে কাজ শুরুর আগেই নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। হিথ স্ট্রিক বলেন, 'কম সময়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন কাজ। আমি ৮ থেকে ১০ জন পেসারকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের শক্তি হলো স্পিন বোলিং। উইকেটও তেমনই। সুতরাং পেসারদের এগিয়ে আনার জন্য অনেক সময় দরকার। আমরা সেভাবেই কাজ করব। অভিজ্ঞতা তো শপিং মলে গিয়ে কিনে আনা যায় না। সময় দিতে হবে। সামনে বিশ্বকাপ, সেটি মাথায় রেখেই এখন বোলারদের নিয়ে কাজ করতে হবে।' পেসারদের শক্তিমত্ত্বা এবং কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ের ওপর বেশি জোর দেবেন হিথ।
বাইরের দেশের কোচের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে যায় ভাষা। অনেক সময় কোচের কথা ভালো করে বুঝতে পারেন না ক্রিকেটাররা। কিন্তু এটা মানতে রাজি নন হিথ। তিনি বলেন, 'ক্রিকেটের ভাষা একটাই। আর তা সব ক্রিকেটারেরই জানা। আমি মনে করি, দলের মধ্যে আমার বার্তা ছড়িয়ে দিতে কোনো সমস্যাতেই পড়বো না।' জাতীয় দলের পাশাপাশি তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েও কাজ করবেন বলে জানালেন হিথ স্ট্রিক। 'তরুণদের নিয়ে আমি কাজ করব। যদিও এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে প্রধান কোচ হাতুরাসিংহের সঙ্গে কথা বলেই পরিকল্পনা ঠিক করব।' ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে হিথ স্ট্রিকের দুই বছরের চুক্তি হলেও কাজ করবেন ৪০০ দিন, অর্থাৎ প্রতি বছরে ২০০ দিন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, হিথকে পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়ে দিনের হিসেবে। প্রতি দিনের জন্য ৪০০ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। এর আগে কোনো কোচকেই এভাবে 'দিনের' হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চুক্তি যেভাবেই হোক না কেন, তা নিয়ে হিথের কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং বাংলাদেশের বোলিং কোচ হতে পেরে দারুণ খুশি তিনি। 'আমার জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। আমি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছি। এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশে কাজের সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য 'বিশেষ কিছু'। এছাড়া বাংলাদেশ উদীয়মান ক্রিকেট দেশ। এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে।'