ক্রিকেটে এক সময় ছিল ভারত-পাকিস্তান। দুই দলের খেলা মানেই বিশেষ সূক্ষ্ম একটি বিভাজন। এখন যা ধুলোয় ধূসরিত স্মৃতি। ক্রিকেটের মতো ফুটবলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। পেলের দেশ ব্রাজিল এবং ম্যারোডানার আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বিভাজিত হয়ে পড়ে বিশ্ব। দুই দলের তারকা ফুটবলারদের নান্দনিক ফুটবল ও শৈল্পিক ফুটবল মোহাবিষ্ট করে রাখে ফুটবল আমুদেদের। আগামী ১২ জুন শুরু হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট আসর বিশ্বকাপ ফুটবল। শুরুর আগে থেকেই বিশ্লেষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শিরোপা নির্ধারণী দল খুঁজতে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানি, উরুগুয়ের ওপর বাজি ধরছেন অনেকেই। অনেকেই আবার ফাইনালের প্রতিপক্ষও চাইছেন নিজেদের পছন্দের দলকে। পাঁচ দিন পর শুরু বিশ্বকাপ। তার আগে পরশু অনুশীলন সেন্টার টেরাসোপোলিসে ব্রাজিলিয়ান কোচ লুইস ফেলিপ স্কোলারি আশা করছেন, ১৩ জুলাই ফাইনাল খেলবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল-শুধু স্কোলারির চাওয়াই নয়, সৃজনশীল, নান্দনিক, মোহাচ্ছন্ন, আবেগী ফুটবলের ধারকেরাও চাইছেন এবার যেন ফাইনালে মুখোমুখি হয় বিশ্ব ফুটবলের দুই পরাক্রমশালী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ হন লিওনেল মেসি ও নেইমার। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন 'সাদা পেলে' জিকো। ব্রাজিলের 'নিওক্লিয়াস' নেইমারও। ফিকশ্চারও তেমন আভাস দিচ্ছে। অবশ্য এ জন্য দুই দলকেই জিততে হবে প্রতিটি ম্যাচ। আসরে ব্রাজিল খেলবে 'এ' গ্রুপে এবং আর্জেন্টিনা খেলবে 'এফ' গ্রুপে। 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' শুরু হবে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে। আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ ১৫ জুন, নবাগত বসনিয়া হার্জেগোভিনার বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা স্বাগতিক ব্রাজিল খেলবে সার্বিয়ার বিপক্ষে। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ পানামার বিপক্ষে জিতেছিল ৪-০ গোলে। যদিও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারপরও ঘরের মাঠে ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে চাইছেন আর্জেন্টিনাকে, 'আর্জেন্টিনাকে নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই। আশা করি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল হোক। যদি হয়, তাহলে এটা হবে অল আমেরিকান ফাইনাল। ১৯৩০ বিশ্বকাপ ছাড়া এখন পর্যন্ত অল আমেরিকান ফাইনাল হয়নি। বিশ্বকাপের প্রথম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা। মন্টেভিডিওর ওই লড়াইয়ে ৪-২ গোলে জিতেছিল উরুগুয়ে। এবার অল আমেরিকান ফাইনাল হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য জিততে হবে দুই দলকেই। প্রত্যাশিত ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনার বিদায় কামনা করছেন না স্কোলারি, 'আগে-ভাগেই আর্জেন্টিনা বিদায় নিক, আমি চাই না। যদি বিদায় নেয়, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি চাই দুই দলের ফাইনাল। আমার সব চিন্তা ব্রাজিলকে নিয়েই। আমি চাই ব্রাজিল ফাইনালে খেলুক।'
দুই দল বিশ্বকাপে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে মাত্র চারবার। প্রথম মুখোমুখি হয় ১৯৭৪ সালের জ্যার্মানি বিশ্বকাপে। ব্রাজিল জিতেছিল ২-১ গোলে। ১৯৭৮ সালে পরের আসরে দুই দলের ম্যাচ শেষ হয় গোলশূন্য হয়ে। ১৯৮২ সালে ম্যারাডোনার অভিষেক বিশ্বকাপে ৩-১ গোরে জিতেছিল ব্রাজিল। দুই দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয় ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপে। ওই ম্যাচে জিতেছিল আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে। কিন্তু ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি। গত ১০০ বছরে সব মিলিয়ে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে ৯৫ ম্যাচ। আর্জেন্টিনার ৩৬ জয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের জয় ৩৫টি। ড্র হয়েছে ২৪ ম্যাচ। আর্জেন্টিনার ১৫১ গোলের বিপক্ষে ব্রাজিলের গোল ১৪৫টি। এমন দুই চিরচেনা, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল যদি ফাইনাল খেলে, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ হবে, কোনো সন্দেহ নেই।