পৃথিবীতে অনেক খেলার বিশ্বকাপ হয়ে থাকে। তবে প্রকৃত বিশ্বকাপ বলতে কিন্তু আমি শুধু ফুটবলকেই বোঝাব। বলতে পারেন কেন, দেখেন চূড়ান্ত পর্বে ৩২টি দেশ অংশ নিলেও বাছাই ও প্রাক-বাছাই পর্ব মিলিয়ে পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশই বিশ্বকাপের অংশীদার। আর কি কোনো খেলায় এত দেশ অংশ নিয়ে থাকে। তাছাড়া ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয় তা অন্য কোনো খেলার ক্ষেত্রে স্বপ্নই বলা যায়। আমাদের দেশের কথা ধরুন না, কবে চূড়ান্ত পর্বে খেলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ বিশ্বকাপকে ঘিরে যে উন্মাদনা দেখা যায় তা অনেক দেশেই হয় না। এখন ঢাকাসহ সারা দেশে যেভাবে বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়ছে তাতে তো মনে হয় বাংলাদেশই বিশ্বকাপের আয়োজক। ক্রিকেট তো এখন বাংলাদেশের এক নম্বর জনপ্রিয় খেলা। কই কখনো কি এভাবে পতাকা উড়ানোর হিড়িক পড়েছে। এতেই প্রমাণ মেলে বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময়ে বাংলাদেশে ব্রাজিলের সমর্থকদের সংখ্যা ছিল বেশি। পেলের অসাধারণ নৈপুণ্য ফুটবলপ্রেমীদের মন কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করার পর বাংলাদেশের দৃশ্য পাল্টে যায়। এর আগে ১৯৭৮ সালেও আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার অভিষেক ঘটেছিল। কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা যে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তা এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। তাই ম্যারাডোনার জন্যই বাংলাদেশ আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিয়ে থাকে। সত্যি বলতে কি, সমর্থনের দিক দিয়ে বাংলাদেশে এখন আর্জেন্টিনা-ই এগিয়ে। বিশ্বকাপে কখনো দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ফাইনাল খেলেনি। শেষবার লড়েছিল ১৯৯০ সালে। এবার বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ ফুটবলপ্রেমীরা চাচ্ছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনালৈ মুখোমুখি হোক। অস্বীকার করব না আমি মনেপ্রাণে চাচ্ছি পেলে ও ম্যারাডোনার দেশ ফাইনালে লড়ুক। যদিও এটা বাস্তবে দেখা মিলবে কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু দুই দেশ ফাইনাল খেললে বিশ্বকাপের উন্মাদনা ষোলআনা পূর্ণ হবে। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি দেশের ফুটবলে বর্তমান যে অবস্থা তাতে বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনালটা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে দুই দেশের ফাইনাল খেললে বাংলাদেশের কী আসে-যায়। আমি বলব অনেক কিছু আসে-যায়। লক্ষ্য করলে দেখবেন দেশের ফুটবলে জনপ্রিয়তা একেবারে কমে গেছে। পেশাদার লিগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতেও গ্যারারি থাকছে প্রায় ফাঁকা। বিশ্বকাপের আগমন ঘিরে ফুটবলে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এরপর যদি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ফাইনালে খেলে তাহলে উত্তেজনা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি ভেবে দেখেছেন। এ উত্তেজনা থেকে দেখবেন কিশোররা শুধু ফুটবল নিয়েই ছোটাছুটি করছে। এতে জনপ্রিয়তার যে ধস নেমেছে তাও কাটতে শুরু করবে। তবে এ উন্মাদনা ধরে রাখতে বাফুফেকেও নানা কর্মসূচি দিতে হবে।
লেখক : জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক