পঞ্চম দিনে পা দিয়েছে ফুটবল মহাযজ্ঞ। এরই মধ্যে ফুটবলপিয়াসীরা উপভোগ করেছেন নেইমার দ্য জুনিয়র, অ্যারিয়েন রোবেন, রবিন ফন পার্সি, মারিও বালোতেল্লির চোখ ধাঁধানো খেলা। উপভোগ করেছেন ব্রাজিল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ইংল্যান্ড, উরগুয়ের শৈল্পিক ফুটবল। বিশ্বসেরা ফুটবলারদের ফুটবল ভেল্কি, ফুটবল ঝলকের পাশাপাশি দেখেছেন পেনাল্টি, অঘটন। সব মিলিয়ে শুরু থেকেই জমাট বাঁধতে শুরু করেছে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। জোগো বোনিতো এবং টোটাল ফুটবল জয় করতে শুরু করেছে দর্শকের মন। উচ্ছ্বাস, উৎসবের বিশ্বকাপে গতকাল ভোরে ফুটবলপ্রেমীরা উপভোগ করেছেন দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি ও ইংল্যান্ডের গতি এবং পাওয়ার ফুটবল। 'ডি' গ্রুপের অলিখিত ফাইনালে ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়নদের ২-১ গোলে হারিয়ে নক আউট পর্বে যাওয়ার পথটা মসৃণ করে নিয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি। ম্যানাউসে দুই সাবেক বিশ্বসেরার লড়াইয়ে থ্রি লায়নদের হতাশ করে আজ্জুরিদের নীল-উৎসবে মাতান 'দি ব্যাড বয়' খ্যাত মারিও বালোতেল্লি। বালোতেল্লির হেডেই বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে প্রানদেল্লির শিষ্যরা।
ম্যাচ শুরুর আগে ম্যানাউসে আমাজোনিয়া এরিনার মাঠ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল দুই দলই। ঘাসহীন ধুলি ধুসরিত মাঠে খেলতে অপরাগতা প্রকাশ করেনি ঠিকই, তবে ক্ষোভ নিয়েই খেলতে নামে দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। পাওয়ার ও গতির সমন্বয়ে শুরু থেকেই লম্বা পাসে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে দুই দল। তবে মধ্যমাঠ নির্দিষ্ট করে কোনো দলের দখলে না থাকায় প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। ইতালির উইঙ্গার ক্লাউডিও মারচিসিও অসাধারণ গোল করেন। বা প্রান্ত থেকে আসা মাইনাসে ফলস মারেন আন্দ্রে পিরলো। বল চলে আসে আনমার্কড মারচিসিওর পায়ে। বল ধরে প্রায় ২০ মিটার দূর থেকে ডান পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে পরাস্ত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক হার্টকে (১-০)। শটটি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নেইমারের গোলটির কথা মনে করিয়ে দেয়। দুই মিনিট পর খেলায় ফিরে 'থ্রি লায়ন্স'। বাঁ প্রান্ত থেকে ওয়েইন রুনির ক্রস ইতালির রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে উড়ে আসে ড্যানিয়েল স্টারিজের পায়ে। স্টারিজ ড্রপ কিকে সমতা আনেন (১-১)। এরপর আর কোনো গোল হয়নি প্রথমার্ধে। সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর দুই দল প্রাণোদ্দীপ্ত ফুটবল খেলতে থাকে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ যখন জমে উঠতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই ইংলিশ দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন বৈচিত্র্যময় চরিত্রের অধিকারী বালোতেল্লি। ৫০ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলে হেডে দলের জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমালোচকদের মুখেও কুলুপ এঁটে দেন বালোতেল্লি(২-১)। যিনি বিশ্বকাপ শুরুর আগে সন্তানের অধিকার নিশ্চিত করতে আইনি পথে হেঁটেছেন। এই জয়ে গ্রুপ 'ডি' থেকে নক আউট পর্বে উঠার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে ইতালি। 'ডেথ গ্রুপ' বলে স্বীকৃত গ্রুপ থেকে প্রথম ম্যাচ জিতে যাওয়ায় অনেকটাই নির্ভার আজ্জুরি কোচ প্রানোদেল্লি, 'ইংল্যান্ড অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ইংলিশদের বিপক্ষে জয় আমাদের দ্বিতীয় পর্বের অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। তারপরও বলছি গ্রুপের অপরাপর দলগুলোও যথেষ্ট শক্তিশালী।' পরশু রাতে গ্রুপের আরেক ম্যাচে উরুগুয়েকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এবারের আসরে প্রথম অঘটনের জন্ম দিয়েছে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকা। হেরে অনেকটাই কোণঠাসা স্টিভেন জেরার্ডরা। তবে হাল ছাড়েননি ইংলিশ অধিনায়ক জেরার্ড। হারের পরও বিশ্বাস করেন দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা, 'ফল যা হোক না কেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে হলে উরুগুয়েকে আমাদের হারাতেই হবে।' ইতালির বিপক্ষে হারের ব্যাখ্যায় ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, 'ইতালির খেলা সম্পর্কে আমাদের ধারণা রয়েছে। তারা শক্তিশালী দল। তারপরও আমি মনে করি আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা জিততে পারিনি।'
ইতালির জয় এবং ইংল্যান্ডের হার স্পষ্ট করে দিয়েছে, মারাকানা স্টেডিয়ামে ১৩ জুলাই ফাইনালে খেলতে ঘাম ছুটে যাবে ফেবারিটদের।