রিবেরি নেই। ফ্রান্স কি আর ফেবারিটের তালিকায় থাকল? প্রশ্নটা শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপের দিন কয়েক আগে। কিন্তু ফরাসিরা যে বিশ্বকাপটা রিবেরির কাঁধে ভর করে খেলতে আসেনি, তার প্রমাণ তারা দিয়েছিল প্রস্তুতি ম্যাচে জ্যামাইকাকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে। প্রস্তুতি ম্যাচে ফরাসিরা কি যোগ্যতার চেয়েও ভালো ফল করেছিল? প্রশ্নটা মনের কোণে উঁকি দেওয়ার আগেই করিম বেনজেমা উত্তর নিয়ে হাজির হলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। হন্ডুরাসের রক্ষণভাগ দুমড়ে-মুচড়ে ফরাসিদের উপহার দিলেন ৩-০ গোলের দুরন্ত জয়। পোর্তো আলেগ্রের বেইরা-রিও স্টেডিয়ামে বেনজেমা নিজেকেই কেবল প্রমাণ করেননি, বিশতম বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে ফেবারিট হিসেবেও প্রমাণ করেছেন।
রিবেরি নেই তো কি হয়েছে! বিশ্বকে দেখিয়ে দাও ফরাসিরা একজনের কাঁধে ভর করে বিশ্বকাপে আসেনি। কোচ দিদিয়ের দেশম কি এমন জ্বালাময়ী বক্তব্যই দিয়েছিলেন বেনজেমা-এভরাদের! হতে পারে। হন্ডুরাসের বিপক্ষে ফরাসিরা যে ফুটবল উপহার দিল, তার তুলনা খুব কমই মিলে। এভরা আর পোগবা পায়ে পায়ে বেনজেমাকে সমর্থন দিয়েছেন। প্রতিটি পদক্ষেপেই ফরাসিরা ছিল একক সত্তার প্রতিচ্ছবি। আর বেনজেমা! রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে যে রূপ তার, ফ্রান্সের জার্সিতেও ভিন্নতা আসেনি। যদি এসে থাকেও, তা ছিল ঊর্ধ্বগামী। নেইমার-রোবেন-পার্সিদের আলোকজ্জ্বল রাতগুলোও যেন ম্লান হয়ে গেল বেনজেমার ফুলঝুড়িতে। দুইটা গোল করেছেন। হ্যাটট্রিকও হতে পারত বেনজেমার। গোললাইন প্রযুক্তি ফ্রান্সের দ্বিতীয় গোলটাকে আত্দঘাতী গোল বলে ঘোষণা দিল। নাহলে ওই গোলটা তো বেনজেমার নামের পাশেই স্থান পেত! এতগুলো ফুল ফুটিয়ে বেনজেমা কিন্তু থাকলেন স্বাভাবিকই। গোলের চেয়েও বেশি মনোযোগী হয়েছেন নিজের পারফরম্যান্সের দিকে। ম্যাচ শেষে বললেন, 'আমাকে কেবল গোল দিয়ে বিচার করাটা হবে অন্যায়। গোলের জন্য আমি গর্বিত। তবে জয়টাই আমার কাছে অধিক মূল্যবান।' বেনজেমারা এমনই। গোল করিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে তারা যেমন তৃপ্তি পান, গোল করে হয়ত ততোটা নন। এ কারণেই বেনজেমারা মিডিয়ার আড়ালে থেকে যান সব সময়ই। কিন্তু সূর্য যখন মধ্যাহ্নের পূর্ণ দীপ্তি নিয়ে মধ্য গগণে উদিত হয়, দর্শক কি চোখ বন্ধ করে তাকে অস্বীকার করতে পারে! পারে না বলেই বেনজেমারাও আলোকদীপ্ত হন। বাগানের বাহারি ফুলের মধ্যে আপন ঘ্রাণে মাতোয়ারা করেন সবাইকে। মাঝে মধ্যেই জানান দেন, আমিও আছি।