২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানার বিপক্ষে গোললাইন থেকে অবিশ্বাস্যভাবে হাত দিয়ে নিশ্চিত গোল ঠেকিয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ। ওই কাণ্ডে বহিষ্কৃৃত হয়েছিলেন কিন্তু পেনাল্টির সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি আফ্রিকান ব্ল্যাক স্টাররা। উল্টো ম্যাচ জিতে ৬০ বছর পর সেমিফাইনালে উন্নীত হয় উরুগুয়ে। ওই ঘটনায় ধীকৃত না হয়ে দেশবাসীর কাছে রূপকথার নায়কে পরিণত হন সুয়ারেজ। চার বছর পর ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ম্যাচেও মহানায়ক সুয়ারেজ। ইনজুরি থেকে ফিরে ইংলিশদের কফিনে পেরেক ঠুঁকে দেন অবিশ্বাস্য দুটি গোল করে। সন্মোহনী ফুটবলের পর উরুগুয়েসহ বিশ্ব মুখরিত হয়ে উঠে সুয়ারেজ বন্দনায়। উরুগুইয়ানরা যখন ব্যস্ত হয়ে উঠেন গান রচনায়, ঠিক তখনই ইতালি ম্যাচে জন্ম দেন ন্যক্কারজনক ঘটনার। বলা নেই, কওয়া নেই, কারণ ছাড়াই কামড়ে দেন ইতালির জিওর্গিও চিয়েলিনিকে। ওই কামড়ে বিস্মিত পুরোবিশ্ব। একি করলেন! ওই কামড়ের পর উরুগুয়ে ফুটবলের রূপকথার নায়ক এখন ফুটবলের 'ড্রাকুলা'। চিয়েলিনিকে কামড়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাবে সুয়ারেজের। নিষিদ্ধ হতে পারেন ২৪ ম্যাচ বা ২ বছর। ২৪ জুন দুনাস অ্যারিনার ইতালি-উরুগুয়ে ম্যাচটি ছিল দুই দলেরই জীবনবাজির। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে জিততেই হতো ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে। বিপরীতে ড্র করলেই হবে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে। এমন কঠিন সমীকরণের টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ৮১ মিনিটে দিয়াগো গডিনের হেডে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় ল্যাটিন দলটি। ওই জয় এখন সুয়ারেজ কামড়ে কলঙ্কিত। গডিনের গোলের দুই মিনিট আগে বিকৃত ঘটনাটির জন্ম দেন সুয়ারেজ। কামড়ের পর কাঁধে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যান ইতালিয়ান ফুটবলার। দাঁত ধরে মাটিতে পড়ে যান সুয়ারেজও। এরপর রেফারিকে কামড়ের বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করেন চিয়েলিনি। কিন্তু পাত্তাই পাননি। রেফারি এড়িয়ে গেলেও টেলিভিশন ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেছে সুয়ারেজ দৌড়ে কামড় দিয়েছেন চিয়েলিনিকে। শাস্তি হতে পারে জেনেও কোনো অনুশোচনা নেই সুয়ারেজের, 'এটা আমাদের দুজনের বিষয়। মাঠে এমনটা ঘটতেই পারে। এত বড় করে দেখার কিছু নেই।' কামড়ের ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি বসেছিল বিষয়টি নিয়ে। যদি ঘটনাটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ফিফার ৭৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী ২৪ ম্যাচ বা ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হবেন সুয়ারেজ। এমনটা এবারই প্রথম করেননি ২৭ বছর বয়স্ক সুয়ারেজ। তবে ৮৪ বছরের বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। উরুগুয়ের আকাশি জার্সি পরে ৮০ ম্যাচে ৪২ গোল করা সুয়ারেজ প্রথম কামড় দেন ২০১০ সালে। ডাচ লিগ অ্যাজ্যাক্স আমস্টার্ডামে খেলার সময় কামড়েছিলেন ওটম্যান বাটকালের ঘাড়ে। ওই ঘটনায় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ৭ ম্যাচ। গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের পক্ষে চেলসির ব্রানিস্লাভ ইভানোভিককে কামড়ে দেন আবারও। সেবারও নির্বাসিত হন ১০ ম্যাচ। কামড় ছাড়াও বর্ণবাদ আচরণের জন্য বিতর্কিত হয়েছেন নানান সময়ে।