ফুটবলের মেরুদণ্ড হচ্ছে বিশ্বকাপ। আর বিশ্বকাপের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে ফাইনাল। সেই ফাইনালে যদি মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, তাহলে কেমন হয়? মনে হচ্ছে স্বপ্ন, তাই না! এবার সেই স্বপ্নই যেন বাস্তবে রূপায়িত হতে চলেছে। ফুটবলপ্রেমীদের বহু আকাঙ্ক্ষিত 'ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা' স্বপ্নের ফাইনাল অনেকটা কাছে চলে এসেছে। ফুটবল বিশ্বের আজন্ম ইচ্ছা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল দেখা। ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফাও চাচ্ছে ফুটবলের দুই তীর্থ ভূমির মিলন ঘটুক ফাইনালে। এখন পর্যন্ত অবশ্য সব কিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছে। দুই দলের দুই স্বপ্ন সারথি মেসি-নেইমার পায়ের জাদু দেখিয়ে তাদের দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সামনে থেকেই। শুরু হয়ে গেছে দুই মহাতারকার স্নায়ুর লড়াইও। গ্রুপ পর্ব শেষে মেসি-নেইমার উভয়েই করেছেন চারটি করে গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াইয়ে সবার ওপরে তারা দুজনই।
এবারের বিশ্বকাপটা যেন এগিয়ে চলেছে ফিফার নির্দিষ্ট ছক অনুসারেই। অবশ্য গ্রুপ পর্বে একটা ভয় ছিল, ফাইনালের আগেই দুই দলের দেখা হয়ে যায় কিনা! সে ভয় এখন আর নেই। ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা যদি নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারতো তবে ফাইনালের আগেই দেখা হয়ে যেত দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর। সে সম্ভাবনা এড়ানো গেছে বলে দারুণ খুশি ফুটবলপ্রেমীরা। তবে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট বোধহয় খোদ ফিফা। কারণ গ্রুপ পর্বের ম্যাচে রেফারিরা যেভাবে দুই দলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে তাতে আর বোঝার বাকি থাকে না 'ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা' স্বপ্নের ফাইনালের জন্য ফিফা কতটা মরিয়া! এটাও ঠিক যে, শেষ পর্যন্ত ফাইনালে যদি দুই দল মুখোমুখি হয়, সেটা হবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক ঘটনা!
শুধু ফিফার সমর্থন কিংবা ভক্তদের প্রত্যাশা বলেই নয়, এবার আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দুই দলই গ্রুপ পর্বে উপহার দিয়েছে জাদুকরি ফুটবল। তবে 'দিলি্ল এখনও অনেক দূর' _দুই দলকেই আরও তিনটি করে ম্যাচে জয় পেতে হবে। দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। শেষ ষোলতে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল খেলবে চিলির বিরুদ্ধে। তবে যদি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ফেবারিটদের জয় অব্যাহত থাকে তাহলে দুই দলকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে সেমিফাইনালে। যেখানে ব্রাজিলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে জার্মানি কিংবা ফ্রান্স, আর আর্জেন্টিনার সামনে থাকবে নেদারল্যান্ডস। সব বাধা পেরুতে পারলেই কেবল সম্ভব 'ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা' স্বপ্নের ফাইনাল। গত আসরের মতো এবারও লাতিন আমেরিকার ৫টি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছে। ভালো খেলেও বাদ পড়তে হয়েছে কেবলমাত্র ইকুয়েডরকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এবার বিশ্বকাপে কোপা আমেরিকা কাপের স্বাদ পাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা। সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যাই হোক না কেন, শুধুমাত্র আর্জেন্টিনা ছাড়া বাকি চার লাতিন দল_ব্রাজিল, চিলি, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া পড়েছে একই জোনে। চার দলের মধ্য থেকে এক দল যাবে সেমিফাইনালে। দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলির মুখোমুখি ব্রাজিল, উরুগুয়ে খেলবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে। দুই ম্যাচের বিজয়ী দলের দেখা হবে কোয়ার্টার ফাইনালে। মেসির আর্জেন্টিনাকে লড়াই করতে হবে ইউরোপীয়ানদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভবত বেলজিয়াম, সেমিতে হয়তো নেদারল্যান্ডস! এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে লাতিন কোনো দলের সামনেই বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পারেনি ইউরোপের দলগুলো। আর লিওনেল মেসি যদি প্রথম তিন ম্যাচের মতো পরের তিন ম্যাচেই ছন্দে থাকেন তবে আর্জেন্টাইদের আটকাবে সাধ্য কার?
আর ব্রাজিলকে কোপা আমেরিকার(?) বাধা পেরিয়ে সেমিতে মোকাবিলা করতে হবে ইউরোপীয়ান কোনো দেশের। সেটা ফ্রান্স কিংবা জার্মানি! নেইমাররা শেষ ম্যাচে যে সুন্দর ফুটবল দেখিয়েছে তাতে ফাইনালের আগে তাদেরকে আটকানো দুঃসাধ্য ব্যাপার! তাই শেষ পর্যন্ত দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেলেই 'স্বপ্নের ফাইনাল' ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। বর্তমান ফুটবল দুনিয়ার দুই মহারথি মেসি বনাম নেইমারের ধ্রুপদি লড়াই দেখবে বিশ্ব।