উরুগুয়ে এখন নখদন্তহীন নেকড়ে, যার ভিতর তেজ আছে কিন্তু প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার মতো প্রাকৃতিক কোনো অস্ত্র নেই। লুইস সুয়ারেজের হাত কিংবা দাঁত কোনোটাই আর মাঠে কাজে আসবে না উরুগুয়ের। আজ নিষিদ্ধ সুয়ারেজকে ছাড়াই ল্যাটিন ফুটবলের নতুন শক্তি কলম্বিয়ার মুখোমুখি হতে হবে অস্কার তাবারেজের শিষ্যদের। নকআউট পর্বের প্রথম ধাপেই কি হোঁচট খেতে যাচ্ছেন উরুগুইয়ানরা!
মৃত্যুগুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে উরুগুয়ে। গ্রুপ পর্ব থেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে দুটি জয়। ইংল্যান্ড ও ইতালির মতো দলকে হারিয়েছেন দিয়েগো লুগানোরা। অন্যদিকে মধ্যম সারির দলগুলো নিয়ে গঠিত 'সি' গ্রুপ থেকে তিনটি জয় সঙ্গে নিয়ে এসেছে কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের সঙ্গে চতুর্থ দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে নকআউট পর্বে এসেছেন কলম্বিয়ানরা। কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে নামছে ল্যাটিন দুই দল।
ফ্যালকাকে ছাড়াই আলো ছড়াচ্ছে কলম্বিয়া। জেমস রদ্রিগেজ ও জ্যাকসন মার্টিনেজদের মতো আরও অনেকেই কলম্বিয়ার হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। ফ্যালকাও থাকলে এ দলটা কী করত- এ প্রশ্নটা এখন আড়ালেই পড়ে গেছে। বিপরীত দিকে গ্রুপ পর্বে কোস্টারিকার কাছে হেরে উরুগুয়ের নকআউট পর্ব খেলাই ছিল কঠিন। তবে লুইস সুয়ারেজ ইংল্যান্ড ও ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে জয় এনে দিয়েছেন দলকে। সে সুয়ারেজই থাকছেন না আজ। কলম্বিয়ানরা তো এগিয়ে থেকে আজ রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে খেলতে নামবেন। সুয়ারেজকে ছাড়া খেলতে নামলেও তেমন একটা দুশ্চিন্তা করছেন না কোচ অস্কার তাবারেজ। 'আমরা সুয়ারেজকে ছাড়াও অনেক ম্যাচ খেলেছি। কখনো জয় পেয়েছি কখনো হেরেছি।' তাবারেজ আজ কী আশা করছেন শিষ্যদের কাছ থেকে? জয় ছাড়া কিছুই নয়। তবে কলম্বিয়া দিয়েগো লুগানোদের জন্য সহজ প্রতিপক্ষ হবে না নিশ্চয়ই। বিশেষ করে গ্রুপ পর্বে কলম্বিয়ানরা যেভাবে খেলেছেন তারপর আর তাদের গুরুত্ব না দিয়ে কেউ থাকতে পারে না।
উরুগুয়ে-কলম্বিয়া বিশ্বকাপের মঞ্চে একবারই মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৬২ সালে চিলি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেবার কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে দুই দল প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে। বিশ্বকাপে যেমন এগিয়ে আছে উরুগুয়ে তেমনি দুই দলের সার্বিক পরিসংখ্যানেও এগিয়ে তারা। পরস্পরের সঙ্গে ৩৮ ম্যাচ খেলেছে দুই দল। উরুগুয়ের ১৮ জয়ের বিপরীতে কলম্বিয়ার জয় ১১টি। বাকি ৯টি ড্র। পরিসংখ্যানে উরুগুয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বর্তমানের হিসাবে এগিয়ে কলম্বিয়াই। ফিফা র্যাংকিংয়ে উরুগুয়ে ৭ আর কলম্বিয়া ৮ নম্বরে। তবে র্যাংকিংয়ের এ ব্যবধান কলম্বিয়া অনেক আগেই মাঠের লড়াইয়ে দূর করে দিয়েছে।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দলগুলোর একটা উরুগুয়ে। দুবারের চ্যাম্পিয়ন। অন্যদিকে কলম্বিয়ানরা সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলছেন পঞ্চমবারের মতো। সেরা ফলাফল ১৯৯০ সালের নকআউট পর্ব। সেবার আফ্রিকান অদম্য সিংহ ক্যামেরুনের কাছে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিলেন কলম্বিয়ানরা। এবারও কি শেষ ষোল খেলেই বিদায় নেবেন তারা? নাকি উরুগুয়ের অতীত ঐতিহ্যকে ভুল প্রমাণ করে এগিয়ে যাবেন আরও কয়েক ধাপ! উরুগুয়ে বাধা পাড়ি দিতে পারলে কলম্বিয়ার সামনে পড়তে পারে ব্রাজিল।