ক্ষমা চাইলেন আরিয়েন রোবেন। মেঙ্কিানরা তাকে ক্ষমা করেছেন কি না, সেটা কিন্তু জানা যায়নি। অতিরিক্ত সময়ে তার ডাইভিংই পেনাল্টি এনে দেয় নেদারল্যান্ডসকে। রোবেনের ডাইভিং নাটকে বোকা বনে পেনাল্টির নির্দেশ দেন পর্তুগালের রেফারি। সেই পেনাল্টিতেই মেক্সিকোর কফিনে পেরেক ঠুকে দেন হান্টলার। আর কাছাকাছি এসেও কোয়ার্টার ফাইনালের তীরে ভিড়তে পারেননি মারকুয়েজরা। ২-১ গোলে হেরে ফিরে গেছেন বাড়িতে। এই হারে টানা ছয় বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে হারার রেকর্ড গড়ল অ্যাজটেক সভ্যতার মেক্সিকো। বিশ্বকাপ এবার উপহার দিচ্ছে অনেক নতুন কিছু। অদৃশ্য ভ্যানিশিং ফোম, গোললাইন প্রযুক্তির পর পরশু রাতে ফুটবলপ্রেমীরা দেখলেন কুলিং ব্রেক। ফর্তালেজার প্রচণ্ড গরমে নাকাল হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে রেফারি কুলিং ব্রেক দেন দুই দুইবার। ৮৪ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এমনটা দেখা যায়নি কখনোই। পরশু দেখলো এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অন্তিম মুহূর্তের দুই গোলে টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডস জায়গা করে নেয় সেরা আটে। কোয়ার্টারে রোবেনদের প্রতিপক্ষ ইতিহাস গড়া কোস্টারিকা।
কোস্টারিক ইতিহাস গড়েছে। ইতিহাস গড়েছে কলম্বিয়াও। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না মেক্সিকোর। ১৯৯৪ মার্কিন যুক্তরাস্ট্র বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু, ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপেও সেটা অব্যাহত। কি সেটা? কনকাকাফ অঞ্চলের দলটি গত ছয় আসরে প্রথম রাউণ্ডের বেড়া টপকে জায়গা নিয়েছে নকআউট পর্বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই কঠিন হার্ডল টপকাতে পারেনি দেশটি।
এবার কিন্তু বেশ আত্দবিশ্বাস নিয়েই খেলছিল মেঙ্কিানরা। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া ও ক্যামেরুনকে হারিয়ে আটকে দিয়েছিল ব্রাজিলকে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের রুখে দেওয়ার আত্দবিশ্বাস নিয়েই নেমেছিল রোবেন-পার্সিদের বিপক্ষে। ৮৮ মিনিট পর্যন্ত এগিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি।
১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলছে। ১৯৩৪, ১৯৭৪ ও ১৯৮২ সালে সুযোগ পায়নি বিশ্বকাপ খেলার। এরমধ্যে ১৯৯০ সালে নিষিদ্ধ থাকায় খেলতে পারেনি বিশ্বকাপে। ১৯৯৪ থেকে ২০১৪ সালের প্রতিটি আসরেই নকআউট পর্বে খেলেছে। ৯৪ সালের বিশ্বকাপে বুলগেরিয়ার সঙ্গে নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্র ছিল। এরপর টাইব্রেকারে হেরে যায় ৩-১ গোলে। ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে এগিয়ে থেকেই জার্মানির কাছে হেরে যায় ২-১ গোলে। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে কনকাকাফ প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কাছে হেরে যায় ২-০ গোলে। ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কাছে হারে ২-১ গোলে এবং গত আসরে ৩-১ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনার কাছে। এবার হারলো ২-১ গোলে। গত ছয় আসরের পরিসংখ্যান বলছে নকআউট পর্ব মেক্সিকোর কঠিন ব্যারিয়ার। এই ব্যারিয়ার টপকেছে দলটি মাত্র দুইবার। তাও আবার নিজ দেশে ১৯৭০ ও ১৯৮৬ সালে। ৭০ সালের কোয়ার্টারে ইতালির কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৪-১ গোলে এবং ১৯৮৬ সালে জার্মানির সঙ্গে সমানতালে লড়াই করে হেরেছিল টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে। তাই নকআউট পর্ব মেক্সিকোর দুঃখেরই এক নাম।