ডিসেম্বরে শুরু। জুন পর্যন্ত সেটা চলমান। এই সাত মাসে 'জয়' শব্দটি বস্তু, না অন্য কিছু ভুলেই গিয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা। ডিসেম্বরে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিল ঠিকই, কিন্তু সেই যে হারের খাদে পতিত হয়েছিলেন মুশফিকরা, সেখান থেকে আর বের হতে পারেননি। সেই শুরু। এরপর এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ এবং সর্বশেষ ভারত সিরিজেও হেরেছেন। টানা ৯ হার! চাট্টিখানি কথা নয়। হারতে হারতে ক্রিকেটারদের মানসিকতা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। আত্দবিশ্বাস ফিরে পাওয়া এবং খাদ থেকে উঠে সর্বোপরি জয়ের রথে চড়ে বসার সব ধরনের চেষ্টা করছে ক্রিকেট বোর্ড। করছেন ক্রিকেটাররাও। আবারও জয়ের টানেলে ফিরে আসতে বদলে ফেলা হয়েছে কোচিং স্টাফ। ক্রিকেট বোর্ড হেড কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে, বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক, ফিল্ডিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে রুয়ান কালপাগেকে। নতুন কোচিং স্টাফও মনপ্রাণ উজাড় করে অনুশীলন করিয়ে তরতাজা করছেন দলকে। যাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাফল্যের দেখা পায় শিষ্যরা। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আগামী ১৩ আগস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছেন মুশফিকরা। আগের ব্যর্থতাগুলোকে পাথড় চাপা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলতে চান টাইগার অধিনায়ক। বিশ্বাস করেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিতবেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এবার নিয়ে চতুর্থবারের মতো যাচ্ছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। ২০০৭ সালে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নিতে। প্রথম সফরে গিয়েছিলেন ২০০৪ সালে। এরপর ২০০৯ সালে। প্রথম সফরে একটি টেস্ট ড্র করলেও হেরেছিল টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ। ২০০৯ সালের সফরটি সোনার অক্ষরে লেখা। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল ক্যারিবীয়দের। সব ধরনের ক্রিকেটে ৬ মাস নিষিদ্ধ থাকায় ওই সফরের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের এবার যাওয়া হচ্ছে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্যদিকে অধিনায়ক হিসেবে দ্বীপপুঞ্জে এটাই প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট মুশফিকের। পুরনো ব্যর্থতাগুলোকে পেছনে ফেলে ফের নবযৌবনে ফিরতে গত দেড় মাস কঠোর পরিশ্রম করেছেন ক্রিকেটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন ক্রিকেটাররা। সব মিলিয়ে বেশ জোরালো প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছেন মুশফিকরা।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রথম অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট কোচ হাতুরাসিংহের। সফরে তিন ফরম্যাটেই জয়ের কথা ভাবছেন কোচ। মুশফিক কোচের পথে হাঁটেননি। একটু অন্যভাবে হেঁটে বলেছেন, 'আমার মনে হয় ক্রিকেট সহজ খেলা নয়। আমাদের লক্ষ্য সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলা। আমি বিশ্বাস করি, ভালো খেললে যে কোনো ফরম্যাটেই জেতা সম্ভব। সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আমার বিশ্বাস অনেকগুলো ম্যাচ জেতার সুযোগ রয়েছে। আমরা সেরাটা খেলতে চাই।' এই আত্দবিশ্বাস টাইগার অধিনায়ক আবার পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে। ক্যারিবীয়রা ঘরের মাঠে হেরেছে নিউজিল্যান্ডের কাছে। পাঁচ বছর আগে (২০০৯) টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিধ্বস্ত করেছিল টাইগাররা। সেই সিরিজের নায়ক ছিলেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞার জন্য এবার যেতে পারছেন না। দেশসেরা ক্রিকেটার যাচ্ছেন না, তার অভাব অনুভূত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু টাইগার অধিনায়ক সেটা বিশ্বাস করেন না, 'সাকিবের অভাব আমরা অনুভব করব না। কে আছে, কে নেই, সেটা কোনো বিষয় নয়। এটা সত্যি, সে আমাদের বড় পারফরমার। গত ৮-৯ বছর ধরেই সে আমাদের রয়েছে। বিষয়টা এমন নয়, সাকিব থাকলে সবগুলো কাজ সে একাই করবে এবং অন্যরা রিল্যাঙ্ থাকবেন। মনে রাখতে হবে, ক্রিকেট একজনের খেলা নয়। ভালো করতে ৩-৪ জনের পারফর্ম করতে হয়। দলে এখন যারা রয়েছেন, তারা গত দেড় মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করছেন। আশা করছি সবাই ভালো করবেন।'
২০১০-২০১২ সাল ভালো কেটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। হোয়াইটওয়াশ করেছে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে। সেই দলের এখন জয়ের কথা ভাবতেও ভয় হয়। মামুলি টার্গেট টপকাতে পারে না। তারপরও সুখস্মৃতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে আবারও জয়ের ধারায় ফিরতে চায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। একাধিক তরুণ ক্রিকেটার রয়েছেন দলে। তাদের হাত ধরেই টাইগার অধিনায়ক মুশফিক চাইছেন ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, গ্যারি সোবার্সের ওয়েস্ট ইন্ডিজে রচিত করতে নতুন ইতিহাস।