দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত যে ইভেন্টই হোক। ব্যর্থ হলেই ক্রীড়াবিদদের তিরষ্কার করা হয়। একবার কেউ চিন্তাও করেন না খেলোয়াড়রা যে সাফল্য দেবেন তাদের ঠিকমতো তৈরি করা হয় কিনা। বাংলাদেশে অনেক খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল বা এখনো আছে। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের কথা বলি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ফুটবলাররা কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেননি। এস এ গেমস, সাফ চ্যাম্পিয়ন শিপ বা প্রেসিডেন্ট কাপে লাল দলের শিরোপা জেতাটাই বড় প্রাপ্তি। এখনতো সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটবলে এখন না আছে মান না জনপ্রিয়তা। অথচ দেশে যে বড় মানের ফুটবলার রয়েছেন তার প্রমাণ মামুনুল ইসলাম। যেখানে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে পৃথিবীর অনেক ফুটবলার অংশ নেবেন সেখানে মামুনুলও খেলবেন অ্যাটলেটিক্সে ডি কলকাতার হয়ে। ফুটবলে মান নেই বলে সবাই আমরা আফসোস করছি। কিন্তু কেন যে এ করুণ দশা তা বের করার চেষ্টা করছি না। এখন না হয় আন্তর্জাতিক ফুটবলে পাত্তা পাচ্ছে না। কিন্তু এক সময় এশিয়ার অনেক শক্তিশালী দেশের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য ছিল ফুটবলারদের।
এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে ৮০ দশকের শেষের দিকে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ঢাকা মোহামেডান। ইরান, কাতার ও উত্তর কোরিয়া চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড রয়েছে। অথচ এদের সঙ্গে এখন শক্তির দিক দিয়ে আকাশপাতাল পার্থক্য। ব্যর্থ হলেই ফুটবলে কোচ বদল করা হয়। আর এতেই বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে জনপ্রিয় খেলাটির। ইরানের নাসের হেজাজির প্রশিক্ষণে শুধু মোহামেডানের বললে ভুল হবে দেশের ফুটবলে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ১৯৮৯ সালে তাকে জাতীয় দলের কোচও করা হয়। কিন্তু ইসলামাবাদ সাফ গেমস ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারার পরই হেজাজিকে বিদায় নিতে হয়। এক টুর্নামেন্ট দিয়েই তার যোগ্যতা বিচার করা হয়েছিল। তাকে যদি কম করে পাঁচ বছর কোচের দায়িত্বে রাখা যেত তাহলে ফুটবলে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটত। বিশেষ করে ফুটবলে এশিয়ার বড় বড় দেশগুলো কোন পদ্ধতিতে খেলে সে কৌশলগুলো হেজাজির ভালো মতো জানা ছিল। দীর্ঘ সময়ে তার প্রশিক্ষণ পেলে অবশ্যই ফুটবল শক্তিশালী পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যেত। ইরাকের সামির সাকিব প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ সাফ গেমসে প্রথম স্বর্ণ জিতে ১৯৯৯ সালে। তারও দায়িত্বের মেয়াদ ছিল স্বল্পকালীন। হেজাজি কিংবা সামিরের চেয়ে অটোফিস্টার ও কোর্টান অনেক উঁচুমানের কোচ। তবে তারা ইউরোপিয়ান স্টাইলটা বেছে নিয়েছিলেন প্রশিক্ষণে। বাংলাদেশের ফুটবলাররা এতটা এক্সপার্ট নয় যে তারা ইউরোপের শিক্ষাটা কাজে লাগাতে পারবেন। এশিয়ান মানের জন্য হেজাজি বা সামিরই যথেষ্ট ছিলেন। তাদের প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিন থাকলে মানের দিক দিয়ে ইরান, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে যেতে পারত। যা এখন স্বপ্নই মনে হয়।
এ তো গেল ফুটবলের কথা। ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপ হকির আয়োজন করে বাংলাদেশ জেগে উঠেছিল। শহরতো আছেই গ্রাম-গঞ্জে গাছের ডাল দিয়ে হকি খেলার ধুম পড়ে গিয়েছিল। সেই জনপ্রিয়তাও কাজে লাগানো যায়নি। ৮০’র দশকে ঢাকায় সাফ সুইমিংয়ে বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেন একাই পাঁচটি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। অ্যাথলেটিক্সে শাহ আলম ও বিমল তরফদার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুততম মানব হয়েছিলেন। অথচ সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্সে এতটা করুণ হাল যে এস এ গেমসে পদক জিততেই হিমশিম খাচ্ছে। দেশে অনেক মানসম্পন্ন অ্যাথলেট ও সাঁতারু থাকার পরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। শুটিংয়ে ১৯৯০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ পাওয়ার পরও এশিয়ান বা অলিম্পিক গেমসে দাঁড়াতে পাচ্ছে না। সম্ভাবনা থাকার পরও এসব খেলাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। খারাপ করলে তাদের তিরষ্কার করা হয়। অথচ ভালো ফল করতে যে ধরনের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা আমরা চিন্তা করছি না। অন্যদের কথা বাদই ছিলাম প্রতিবেশি ভারত ক্রীড়াবিদদের ব্যাপারে কতটা যত্নশীল তার তুলনা করলেই চলে। ক্রীড়াঙ্গনে সরকারের প্রচুর অর্থের বরাদ্দ থাকলেও ক্রীড়াবিদদের মানোন্নয়নে তেমন খরচই করা হচ্ছে না। অধিকাংশটা যায় অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারে। অনেকের আশা ছিল বর্তমানে এই ধারার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু ক্রীড়াবিদরা যে উপেক্ষিত থাকবেন তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে ক্রীড়াপ্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের কথায়। বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দু’জনে বলেছেন সরকার ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে বাজেট দেয় তার প্রধান শর্ত থাকে অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারের। এবারও যে বিশেষ অনুদান মিলবে তা ব্যয় হবে একইভাবে। অর্থাৎ ক্রীড়াবিদদের মানোন্নয়নে তেমনভাবে গুরুত্বই মিলবে না। কিন্তু খেলার মানই যদি বাড়ানো না যায় তাহলে এত অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কার করে লাভ কি? এভাবে আর কতদিন? ক্রীড়াবিদরা কি বঞ্চিত থেকেই যাবে। তাহলে খেলাধুলা করে লাভটা কি?
শিরোনাম
- স্ত্রী-কন্যাসহ র্যাবের সাবেক ডিজি হারুনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- রাজশাহীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১১
- প্রাথমিকের শিক্ষক পদে আবেদন করতে পারবেন না ধূমপায়ীরা
- চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের দুই কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত
- ঢাবিতে শীতকালীন বইমেলা শুরু
- জামিন পেলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম
- এইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ ১৬ নভেম্বর
- ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ৮০ হাজার ভিসা বাতিল
- ইন্টারনেটে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ালে ৫ বছর কারাদণ্ড , ৯৯ কোটি টাকা জরিমানা
- মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে : তারেক রহমান
- সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর জামিন
- স্কুল-কলেজের সিসি ক্যামেরাগুলো ভোটকেন্দ্রে ব্যবহার করতে চায় ইসি
- সংসদ নির্বাচনে প্রতিবন্ধীদের ভাবনা জানতে চায় ইসি
- জেতার সম্ভাবনা আছে এমন শরিকদের জন্য আসন ছাড়বে বিএনপি : আমীর খসরু
- ‘যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই বাংলাদেশ পাইনি’
- বাকৃবির উদ্ভাবন: দেশের প্রথম হাঁসের ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন
- ফোনে অশ্লীল বার্তা পাঠালে দুই বছরের দণ্ড ও জরিমানা
- শেয়ারবাজারে পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত
- খুলনায় নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ক বিতর্ক উৎসব শুক্রবার
- চুক্তির আমলাদের হাতেই প্রশাসনের লাগাম
আর কত উপেক্ষা ক্রীড়াবিদদের
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর