সাকিবের ক্যাপ নিয়ে টানাটানি শুরু করলেন কুয়েতের খেলোয়াড়রা। কেউ ক্যাপ, কেউ ব্যাট, কেউবা হাতে থাকা কাগজ টুকরা এগিয়ে দিচ্ছেন মাশরাফিদের দিকে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের যাকে সামনে পাচ্ছেন তারই অটোগ্রাফ নিচ্ছেন কুয়েতের ক্রিকেটাররা। অটোগ্রাফ নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন কুয়েত দলের ম্যানেজারও। ম্যাচ শেষে কাল ইয়ংহি ক্রিকেট মাঠের ড্রেসিং রুমের সামনে অন্যরকম এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দেখতে পেয়ে তারা যে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। একটু আগেই যে তারা বাংলাদেশের কাছে ২০৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছেন, তাদের বোলারদের মেরে তক্তা বানিয়ে ২২৪ রান করেছেন মাশরাফিরা, সাকিব-সানিরা মাত্র ২১ তাদের প্যাকেট করে দিয়েছে এ নিয়ে বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই কুয়েতের ক্রিকেটারদের মনে। তার চেয়ে বরং টাইগারদের একটুখানি সান্নিধ্য ওদের অনেক বেশি আনন্দ দিচ্ছে।
অধিনায়ক মাশরাফিও কুয়েতের বিরুদ্ধে এই বড় জয়কে বড় করে দেখতে রাজি নন। তার চেয়ে বরং নতুন দল কুয়েতকে ক্রিকেটে আসার জন্য অভিবাদন জানিয়েছেন। নড়াইল এক্সপ্রেস বলেন, 'আমি কুয়েতকে ছোট করতে চাই না। কারণ মাত্র ৭ মাস হয়েছে তারা খেলা শুরু করেছে। তাদের স্প্রিট দেখে আমার ভালো লেগেছে। তারা একসঙ্গে চেষ্টা করে মাঠে। টিম স্প্রিটটা অনেক ভালো। আমি মঙ্গল কামনা করব ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো হয় তাদের দল।'
কুয়েতের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালকে প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবেই ধরে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে যদি কোনো উইকেটের পতন নাও ঘটতো তবু 'রিটার্ড হার্ড' করে ৫-৬ জনকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিতেন মাশরাফি। কিন্তু কাল আর তার দরকার হয়নি। সবাই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে কুয়েতের মতো দলের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ৯ উইকেটের পতনকে একটু নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন মাশরাফি, 'বোলাররা আরেকটু বল করতে পারলে ভালো হত। বোলারদের রোটেশন করানো হয়েছে যাতে তারা বল করতে পারে। আমাদের ৯ উইকেট পড়েছে, এটা ব্যাটিংয়ের দিক দিয়ে ইতিবাচক নয়।'
ইয়ংহি উইকেট মাঠের উইকেট অনেক বেশি স্লো। বাউন্ডারি হাঁকাতে হয় শক্তির জোরে। টাইমিংয়ের একটু এদিক সেদিক হলেই ক্যাচ। তবে এমন উইকেটে স্পিনাররা অনেক বেশি সুবিধা পায়। কাল কুয়েতের ১০ উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা। কিন্তু এমন পিচে লঙ্কানরা ছেড়ে কথা বলবে না বলে মনে করেন মাশরাফি। তবে টাইগারদের সমস্যায় ফেলতে পারে 'বল'। আইসিসির যেকোনো ইভেন্টে খেলা হয় 'কুকাবুড়া' বল দিয়ে। কিন্তু এশিয়া কাপে যে বল দিয়ে খেলা হচ্ছে তা আকারে কুকাবুড়ার চেয়ে বড়। গ্রিব করতে অনেক সমস্যা। তবে এই সমস্যাটা প্রতিপক্ষেরও হবে। তাই একে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে রাজি নন অধিনায়ক। মাশরাফি বলেন, 'বলটা একটু চিন্তার বিষয়, কারণ বলটা বড় হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। বোলিংয়ের সময় হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই বলে খেলে অভ্যস্ত না, কখনো প্র্যাকটিসও করি না। প্রথম দুটো প্র্যাকটিস ডেতে কষ্ট হয়েছে। তারপরও আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারব ততই ভালো।' বাংলাদেশের আসল লড়াই আজ সেমিফাইনালে। যেখানে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। তবে এই ম্যাচ নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক মাশরাফি, 'শ্রীলঙ্কা অনেক বড় দল, তারা অনেক কঠিনভাবে আসবে মাঠে। আমরাও তাদের অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ দেব এবং খেলাটা অবশ্যই ভালো হবে আশা করছি।' মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাশরাফি যে শ্রীলঙ্কাকে শক্তিশালী দল হিসেবে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন, সেই দলে কতজন বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার রয়েছেন? হয়তো লঙ্কান দলের ছয় ছয়জন ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলেছেন। কিন্তু তারা তো অফ ফর্মের জন্য এখন জাতীয় দলের বাইরে। অন্যদিকে ইনচেনে খেলছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। যেখানে সাকিব, তামিমের মতো বড় বড় তারকা। তারপরেও এই শ্রীলঙ্কা চ্যালেঞ্জ জানাবে বাংলাদেশকে?