২৫ বছরের জীবনে এমন কঠিন সময় আর কখনো পার করেননি রুবেল হোসেন। আদালত সামলেছেন। কারাবাসও করেছেন দুদিন। কিন্তু নিজের ইচ্ছা কিংবা অবস্থান থেকে এক বিন্দু নড়েননি। ছাড় দেননি চুল পরিমাণ। এখন সেসব অতীত। সব ভুলে এগিয়ে যেতে চান সামনের দিকে। চাতক পাখির মতো অধীর অপেক্ষা নিয়ে আছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ঝাঁপিয়ে পড়তে। অথচ রুবেলের বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল এক সময়। নারী নির্যাতন মামলায় জড়িয়ে মিডিয়ার আলাদা শিরোণাম হওয়া রুবেল চাইছেন সব কিছু ভুলে বিশ্বকাপে ভালো খেলতে চান।
নায়িকা ও মডেল নাজনীন আক্তার হ্যাপী ১৩ ডিসেম্বর দেশবাসীকে চমকে দেন রুবেলের বিপক্ষে নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করে। ওই মামলার পর আদালত থেকে জামিন নেন রুবেল। পরবর্তীতে ওই মামলা বাতিল হলে দুদিন কারাগারে কাটান। এখনো মামলা রয়েছে। কিন্তু রুবেলের বিশ্বকাপ খেলার পথে সেটা কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ৫৩ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞ রুবেলের উপর আস্থা রেখেছে। বিশ্বকাপ খেলতে ২৪ জানুয়ারি দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন যাচ্ছেন এই ডান হাতি ফাস্ট বোলার। যে ঝামেলা নিয়ে চাপে ছিলেন, সেটা পুরোপুরি কাটিয়ে এখন ঝরঝরে রুবেল, 'কিছুদিন আমার জীবনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কঠিন সময় পার করেছি। সেসব নিয়ে এখন আর পড়ে থাকতে চাই না। তবে এটি সত্যি যে, আমি মানসিক একটা চাপে ছিলাম। এখন অবশ্য কোনো কিছুই আমার মাথায় নেই। সব কিছু ভুলে আমি শুধু ভাবছি ক্রিকেট নিয়ে।' দলে চারজন পেসার। নিয়মিত একাদশে খেলা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারপরও সুযোগ পেলে বিশ্বকাপে ভালো করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ২০১১ সালের ক্রিকেট মহাযজ্ঞে ৬ ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া রুবেল, 'খেলার বিষয়ে আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সুযোগ পেলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। বিশ্বকাপে ভালো করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি মনে করি বিশ্বকাপে আমাদের ভালো করার অনেক কিছু আছে।' ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে বলেন, 'আমাদের দেশের উইকেটগুলোতে বাউন্স কম। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বাউন্স বেশি। চেষ্টা করব সেই সুবিধাকে কাজে লাগাতে। তবে আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ভালো ক্রিকেট খেলা।'
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উইকেটগুলোতে বাউন্স বেশি। গতি ও সুইংও বেশি। এসব মাথায় রেখেই টিম ম্যানেজমেন্ট এবার চার পেসার দিয়ে সাজিয়েছে স্কোয়াড। রুবেল ছাড়াও দলের অপর তিন পেসার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, আল আমিন ও তাসকিন আহমেদ। শেষ দুজন এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলবে। তাই টাইগারদের পেস অ্যাটাক পুরোপুরি অভিজ্ঞ বলা যাবে না। অভিজ্ঞতায় আল আমিন ও তাসকিনের চেয়ে এগিয়ে রুবেল। তারপরও নিশ্চিত নন একাদশে খেলার। এবার নিশ্চিত না হলেও গত বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে সবগুলো ম্যাচই খেলেছিলেন। এবার ঘরের মাঠের সেই বিশ্বকাপকে পেছনে ফেলার স্বপ্ন দেখছেন দেশের ক্রিকেটমোদী। কিন্তু রুবেল বিষয়টাকে সেভাবে দেখছেন না, 'অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ভালো খেলা একটু কঠিনই। তারপরও আমরা সবাই আত্মবিশ্বাসী অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।' ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জিতেছিল তিন ম্যাচ। হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডকে। বাংলাদেশ এবার খেলবে 'এ' গ্রুপে। প্রথম ম্যাচ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ক্যানবেরায় প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। আইসিসি সহযোগী স্কটল্যান্ডও রয়েছে গ্রুপে। এছাড়া বাকি চার দল দুই স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে কমপক্ষে চারটি ম্যাচ জিততে হবে বাংলাদেশকে। কাজটি কঠিন, তারপরও ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী।
একাদশে খেলতে আত্মবিশ্বাসী রুবেলের বোলিংয়ের মূল শক্তি গতি। বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে তিনি কাজ করছেন ইয়র্কার নিয়ে, 'নতুন বলে বল জোরে যায়। কিন্তু রান আটকাতে হলে পুরনো বলে ভালো বোলিং করতে হবে। আমি ডেথ ওভারে কীভাবে কাজ করতে হবে, সেটা নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া ইয়র্কার নিয়ে একটু বেশি কাজ করছি।' রুবেলের মতো দলের সব ক্রিকেটারই আলাদাভাবে কাজ করছেন। রুবেলের মতো সবাই মুখিয়ে আছেন বিশ্বকাপে নিজেদের প্রমাণের। এখন শুধু অপেক্ষা।