২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিরাট কোহলি ভারতীয় এক টিভিতে বলেছিলেন, তার ক্রিকেটের সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম '২৩ এপ্রিল'। যেদিন আইপিএলে ব্যাঙ্গালুরু রয়েল চ্যালেঞ্জার্সের জার্সিতে ক্রিস গেইল ৬৬ বলে খেলেছিলেন ১৭৫ রানের হার না মানা ইনিংস। সেদিন 'অতিমানবীয়' ইনিংসটি খেলার পর গেইলের পীঠও চাপড়ে দিয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক কোহলি । আলিঙ্গনে আবদ্ধ হওয়ার মুহূর্তে শুধু উচ্চারণ করেছিলেন, 'অবিশ্বাস্য'! এরপর স্থানীয় এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছিলেন, 'গেইলের আসল রূপই ছিল সেটা! আর কাউকে তার আসল রূপে দেখতে কার না ভালো লাগে।'
আগামীকাল নিশ্চয়ই গেইলের আসল চেহেরাটা কামনা করবেন না কোহলি। কারণটা সবার জানা। কাল পার্থে ভারতের মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গেইল এখন কোহলির শত্রু শিবিরে। তাছাড়া জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২১৫ রানের মহাকাব্যিক যে ইনিংসটা খেলেছেন, তা তো যেকোনো প্রতিপক্ষের আতঙ্কের বড় কারণ হতে বাধ্য। তবে ভারতের স্বস্তি এখানেই যে, গেইল এখন ঘুমন্ত সিংহ। সব ম্যাচে তার ব্যাট জ্বলে ওঠে না। তাই ঘুমন্ত সিংহকে কেউ জাগিয়ে না দিলে হয়তো টেরই পাবেন না। তাছাড়া গেইলের ঘুম যাতে না ভাঙে সেই কৌশলই করছেন ভারতীয় স্পিনাররা।
ইতিমধ্যেই অবশ্য ঘুম হারাম হয়ে গেছে ক্যারিবীয় বোলারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে হোল্ডার-সামিদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ফেলেছে কাল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে কী করবে তা বলা কঠিন। তবে যত ভয় বিরাট কোহলিকে নিয়ে। যদিও ভারতীয় দুই ওপেনার রোহিত শর্মা কিংবা শেখর ধাওয়ানও নিজেদের দিনে একাই একশ। রায়না, রাহানে, ধোনিও কম কিসে। কিন্তু কোহলি হচ্ছেন বোলারদের জন্য মুর্তিমান আতঙ্ক। এক সময় ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন টেন্ডুলকার যেভাবে ঠাণ্ডা মাথায় ক্যারিবীয় বোলারদের ২২ গজে খুন করে ফেলতেন, এখন কোহলিও তাই করেন। যদিও বিশ্বকাপে কোহলিকে এখনো তার স্বরূপে দেখা যায়নি। তারপরেও তিন ম্যাচে একটি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ১৮৬ রান, গড় ৯৩। এটাই বা কম কিসে। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধৈর্য্যশীল এক সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪৬। আর তৃতীয় ম্যাচে আমিরাতের বিরুদ্ধে তো লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগই ছিল না। তবে কোহলির আসল রূপ দেখা যায়, দলের বিপদের সময়। কী দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সব সামাল দেন সব কিছু। হয়তো কাল ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধেই আসল কোহলিকে দেখা যেতে পারে।
দানবীয় স্টাইলের ব্যাটিংয়ের জন্য ক্যারিবীয় মিডিয়া গেইলের নাম দিয়েছে 'ক্যারিবীয় সাইক্লোন'। আর ভারতীয় মিডিয়ায় কোহলি হচ্ছেন 'ডেঞ্জারম্যান'। তাই ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াই মানেই সাইক্লোন বনাম ডেঞ্জারম্যান। দেখা যাক, আগামীকাল পার্থ কাকে বরণ করে নেয়, সাইক্লোন নাকি ডেঞ্জারম্যানকে।