বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবলে ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও দারুণভাবে খেলায় ফিরেছিলেন এমিলিরা। শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২-৩ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। হারলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নজর কেড়েছিল ক্রীড়ামোদীদের। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা বলেছেন নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে ফুটবলে উন্নয়ন সম্ভব। খারাপ করলে খেলোয়াড়দের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু এটা কেউ চিন্তা করে দেখেন না ভালো যে করবে সেই সুযোগ-সুবিধা ফুটবলারদের দেওয়া হচ্ছে কিনা। আর্থিক সুবিধার কথা বাদই দিলাম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আগে জোরাল প্রস্তুতিই হতো না। কোনোক্রমে প্রশিক্ষণে দল মাঠে নামত। কিছুদিন ধরে বাফুফে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়াতে ফলাফল হচ্ছে সন্তোষজনক। এটা ঠিক ফুটবলে কোনো ট্রফি জেতা যাচ্ছে না। কিন্তু আগের মতো ভরাডুবি ঘটছে না।
এশিয়ান গেমসে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে। উজবেকিস্তান ও হংকংয়ের কাছে হারলেও মাঠে বাংলাদেশ সমান তালে লড়েছে। প্রীতিম্যাচেও জয় আসছে। তারপর আবার বঙ্গবন্ধু কাপের পারফরম্যান্স বলে দিচ্ছে ফুটবলেও জ্বলে উঠা সম্ভব।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের শিকার না হলেও হয়তো শেষ চারেও ঠাঁই পেত। দেশ তো আছেই। বিদেশের গ্রেট ক্রিকেটাররা বলছেন, ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে সামনের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ক্রিকেটে বিশ্বজয়ের আশা করা হচ্ছে। কিন্তু ফুটবলে সাফের শিরোপাটাও স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের টার্গেট ২০২২ বিশ্বকাপ। মুখে বললেও আদৌ এ টার্গেট পূরণ করা সম্ভব কী? কারণ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ কীভাবে খেলবে? সেই ধরনের পরিকল্পনা কি বাফুফের আছে। আর কদিনই পরই ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শুরু হবে। বাংলাদেশও এ পর্বে খেলবে। ডাচ কোচ লোডডিক ক্রুইফই বাছাইপর্বে কোচের দায়িত্ব পালন করবেন। বাফুফে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। কেননা ক্রুইফ ভালোমানের কোচ তা তিনি প্রমাণ দিয়েছেন। শুধু কি কোচ ঠিক করলেই চলবে? বাছাইপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে ১৪ এপ্রিল। আর ১১ জুন থেকে খেলা শুরু হবে। বাছাইপর্বে নামতে এশিয়ার শক্তিশালী দেশগুলোই দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নেয়। ইরান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো পরিকল্পনা নেই। বাফুফের উচিত ছিল কম করে হলেও তিন মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। এখন বড়জোর একমাস প্রশিক্ষণ দেবেন ক্রুইফ। এতে করে ভালো কিছু কি আশা করা যায়।
ক্রুইফ বলেছেন বাছাইপর্বে তিনি তরুণদের প্রাধান্য দিতে চান। কিন্তু তরুণদের পারফরম্যান্সে কি যে করুণ হাল তাতো এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইপর্বে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রুপে সিরিয়া ও উজবেকিস্তানের মতো শক্তিশালী দেশ থাকাতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে তা কেউ ভাবেনি। কিন্তু দুই দেশের কাছে যেভাবে হেরেছে তা লজ্জাকর। এই তরুণদেরকে যদি বাছাইপর্বে সুযোগ দেওয়া হয়। এরা দেশের জন্য কি করবে। বাফুফে হয়তো ফান্ডের অজুহাত দেখাবেন। কিন্তু বাছাইপর্বকে ঘিরে এখন থেকেই নজর দেওয়া উচিত ছিল। পরিকল্পনার কথা বললেই বাফুফের কর্মকর্তারা অর্থের কথা বলেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলছেন ফুটবল উন্নয়নে যা যা করা দরকার তা তিনি করবেন। এরপরতো আর কেনো কথাই থাকে না।
জানা গেছে, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ফুটবল উন্নয়নে সরকারের কি করণীয় আছে তা চিহ্নিত করতে। সরকার অবশ্যই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। তা কি করেছেন সভাপতি? শুধু অর্থই চাচ্ছেন এবং না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।