দেশবাসী তাকিয়ে ছিলেন গতকাল মিরপুরের দিকে! সভাপতি পদের জন্য আইসিসির দেওয়া প্রস্তাব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভায় গৃহীত হবে কিনা! মিডিয়া কর্মীরাও চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষায় ছিলেন। সাড়ে তিন ঘণ্টার ম্যারাথন বোর্ড সভা শেষে সন্ধ্যায় নাজমুল হাসান পাপন যা জানালেন, তার সারমর্ম আইসিসি সভাপতির নাম পাঠানোর বিষয়ে সভায় কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। অবশ্য সিদ্ধান্ত হওয়ার কোনো সুযোগও ছিল না। কেননা আইসিসি নাজমুল হাসানকে কোনো লিখিত প্রস্তাব দেয়নি।
মৌখিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে তো আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সভা শেষে নাজমুল হাসান বলেন, 'যেহেতু এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত প্রস্তাব পাইনি, তাই তাড়াহুড়া করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ১৫ ও ১৬ তারিখে আইসিসি সভা আছে, দেখা যাক তখন কি হয়। তবে প্রস্তাব পেলে আমরা সভাপতি পদের জন্য নাম নাও পাঠাতে পারি।'
আইসিসির সভাপতি পদে নাম না পাঠানোর ব্যাপারে বেশ কয়েকটা কারণ তুলে ধরেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, 'আড়াই মাসের জন্য যে নতুন সভাপতি হবে তার তো ফিজিক্যালি করার কিছু থাকছে না। এই সময়ের মধ্যে আইসিসির সভাপতি মাত্র একটা সভা পাবে। শুধুমাত্র ওই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য সভাপতি হয়ে কী লাভ! তাছাড়া সভাপতি হিসেবে কামাল সাহেব যে নির্বাচিত হয়েছিলেন এটাতে ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ মনোনয়ন। তাই এ বিষয়ে আর ঝামেলায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই।' আইসিসির নতুন সভাপতি নির্বাচন নিয়ে যে নাটকীয় অবস্থার তৈরি হয়েছিল কাল মিটিংয়ের পরই তার পরিসমাপ্তি ঘটল। সেই সঙ্গে পরিষ্কার হয়ে গেল, শ্রীনিবাসনের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে না বিসিবি। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের কাউকে হয়তো আড়াই মাসের জন্য সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পিসিবির সাবেক সভাপতি নাজাম শেঠী। সেটা নির্ভর করছে পাকিস্তান বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর।
কালকের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজেও ওয়ানডে দলে অধিনায়ক থাকছেন মাশরাফি মর্তুজা। সিরিজে একমাত্র টি-২০ ম্যাচেও টাইগারদের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। আর টেস্ট দলে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমই থাকছেন। বিশ্বকাপে স্লো ওভাররেটে বোলিং করার জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মাশরাফি। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে খেলতে পারবেন না তিনি। সে কারণে ১৭ এপ্রিলের ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব আল হাসান। এই সিরিজেও দলীয় ম্যানেজার হিসেবে থাকছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।
পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার জন্য তাদের ক্রিকেট বোর্ডকে আড়াই কোটি টাকা বা তিন লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার দেবে বিসিবি। যদিও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের দাবি ছিল ৭ কোটি টাকা বা ৯ হাজার মার্কিন ডলার। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য টাইগারদের ঢাকায় ও চট্টগ্রামে দুটি সংবর্ধনা দেওয়া হবে। যদিও অনেক সংগঠন মাশরাফিদের সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। পাকিস্তান সিরিজের কারণে তা হচ্ছে না। তবে ১১ এপ্রিল ঢাকা বিসিবি আয়োজিত সংবর্ধনায় আগ্রহী সব প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সংবর্ধনা হবে মানিক মিয়া এভিনিউতে। চট্টগ্রামে ফোরাম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত সংবর্ধনা হবে ১০ এপ্রিল।
সাহারা গ্রুপের সঙ্গে বিসিবি সম্পর্কচ্ছেদ করায় নতুন পৃষ্ঠপোষকের জন্য দরপত্র দিয়েছিল ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু কারো প্রস্তাবই বিসিবির প্রত্যাশা মতো হয়নি। তাই প্রথমে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কথা বলবে বিসিবি। যদি তারা প্রত্যাশা মতো টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে না দেয় সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির স্মরণাপন্ন হবে বিসিবি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্নার পরিবারকে বিসিবির পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া বিসিবি নিজস্ব উদ্যোগে ক্রিকেটার তাইবুর পারভেজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।