পেশাদার ফুটবল লিগে পেশাদারিত্ব মানছে কী ক্লাবগুলো? এ প্রশ্ন এখন অনেকের কাছে হাস্যকরই মনে হবে। কেননা আজ থেকে এ লিগের অষ্টম আসরের পর্দা উঠছে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে যখন পেশাদার লিগ শুরু হয় তখন বাফুফের তৎকালীন সভাপতি এসএ সুলতান বলেছিলেন, পেশাদার লিগ খেলতে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো অভ্যস্ত নয়। নেই কোনো অভিজ্ঞতা। তাই প্রথম দিকে ভুল-ত্রুটি থাকাটা অস্বাভাবিকের কিছু নয়। ২/৩ আসর যাক দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। না, পেশাদার লিগ অষ্টমবারের মতো মাঠে নামলেও অধিকাংশ ক্লাবগুলো নিয়মনীতি মানছে না। এক্ষেত্রে আবার বাফুফের যুক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি নিয়ম-নীতি মানা অসম্ভব। কথা হচ্ছে পুরোপুরি না হোক কোন নিয়মটা মেনে লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার কি কোনো উদাহরণ দিতে পারবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। আশা ছিল পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর দেশের ফুটবলের চেহারা পাল্টে যাবে। বাস্তবে কি তা হয়েছে?
পেশাদার লিগে ফুটবলারদের পারিশ্রমিক প্রদান, নিজস্ব অনুশীলন মাঠ, জিমনেসিয়াম ও নিজস্ব ভেন্যু থাকতে হবে। ২/১টা ক্লাব ব্যতিক্রম হলেও অধিকাংশ ক্লাবই নিয়ম না মেনে মাঠে নামছে। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব নিয়মিতভাবে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট দিচ্ছে। দুটো দলই নিজস্ব মাঠে অনুশীলন করছে। শেখ রাসেল ঘোষণা দিয়েছে অচিরেই তারা জিমনেসিয়াম তৈরি করবে। আগে যাই হোক না কেন বসুন্ধরা গ্রুপ দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ রাসেলের চেহারা পাল্টে গেছে। পেশাদারিত্ব বলতে যা বুঝায় এ ক্লাব এখন থেকে মেনে চলবে তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্য ক্লাবগুলো কি তা পারবে? শেখ জামাল ফুটবলারদের পেমেন্ট নিয়মিত দিলেও পেশাদারিত্ব মনোভাব ফুটে উঠেনি।
অনেক খেলোয়াড়ই বলেছেন, ম্যাচে খারাপ করলেই তাদের তিরস্কৃত করা হয়। এক্ষেত্রে নাকি কোচও বাদ যান না। ঢাকা আবাহনী পেশাদার লিগে সবচেয়ে সফল দল। সর্বোচ্চ চারবার শিরোপা জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। কিন্তু এই ক্লাব কি পুরোপুরি পেশাদারিত্ব মেনে চলছে। আর ঐতিহ্যবাহী দল ঢাকা মোহামেডানের অবস্থাতো আরও করুণ বলা যায়। এখন পর্যন্ত তারা একবারও শিরোপার মুখ দেখতে পারেনি। সফলতা বা ব্যর্থতাকে ঘিরে পেশাদারিত্বের কোনো প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু নিয়ম ভাঙা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে নিয়ে প্রতিবারই অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে ফুটবলারদের পেমেন্টের ঝামেলা সবারই চোখে পড়ছে। এএফসি পেশাদার লিগ আয়োজনের যে শর্ত জুড়ে দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফুটবলদের পেমেন্ট নিয়মিত পরিশোধ করা। না করলে এখানে বাফুফের দায়িত্ব অনেক। এখন পর্যন্ত ফুটবল ফেডারেশন কি তার সমাধান দিতে পেরেছে।
পেশাদার লিগে ২/১টা ক্লাব ছাড়া কারও হোমগ্রাউন্ড নেই। সে কারণে এ লিগও ঢাকা লিগে পরিণত হয়েছে। বিস্ময় ব্যাপার হলো এক্ষেত্রে বাফুফের নীরবতা। প্রভাবশালী ক্লাবগুলো যা বলছে তাই তারা মেনে নিচ্ছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার যে পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পরই দেশের ফুটবল নিস্তেজ হয়ে গেছে। আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কেন্দ্র করে সারা দেশে যে উত্তাপ ছড়াত এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। তাহলে এই পেশাদার লিগ করে লাভ হচ্ছে কি? পেশাদারিত্বও মানা হচ্ছে না দর্শকদের নজরও কাড়তে পারছে না। এরপরও কি প্রতিবছর এভাবে লিগ হয়ে যাবে? জানি না বাফুফে বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলাররা বলছেন পেশাদার নিয়ে বাফুফেকে ভাবতে হবে তা না হলে দিন দিন দেশের ফুটবল অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।