বিশ্বকাপ ক্রিকেটের রেশ এখনো কাটেনি। টাইগারদের সফলতাকে ঠিকভাবে উদযাপনও করা হয়নি। ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে এবং ১১ এপ্রিল ঢাকায় দুটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট বীরদের। এসব আনুষ্ঠানিকতার ফাঁক গলে আরও একবার ক্রিকেট কড়া নাড়তে শুরু করেছে ভক্তদের দুয়ারে। পাকিস্তান আসছে বাংলাদেশে। দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে এবং একটি টি-২০ ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ সফরসূচি নিয়ে আফ্রিদিরা ঢাকায় পা রাখছেন ১৩ এপ্রিল।
পাকিস্তানের এবারের ঢাকায় আসার সঙ্গে অন্যবারের ফারাক অনেক। এর আগে যতবারই দ্বিপক্ষীয় সিরিজে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে প্রতিবারই। এই প্রথমবার পাকিস্তানকে হারানোর স্বপ্ন বুকে নিয়ে মাঠে নামবেন টাইগাররা। বিশ্বকাপে আশা জাগানিয়া ক্রিকেট খেলার পর এখন আর পাকিস্তানকে হারানো খুব অসম্ভব বলে মনে হয় না। এমনকি সাঈদ আজমল দলে থাকলেও না। আগেরবার বাংলাদেশে এসে ২টা টেস্ট, ৩টা ওয়ানডে এবং ১টা টি-২০ ম্যাচ খেলেছিল পাকিস্তান। টাইগাররা হেরেছিল সবকটি ম্যাচেই। তবে সময় বদলেছে অনেক। একদিকে পাকিস্তান যেমন অনেক তারকাকে হারিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ দুয়েকজন তারকার ওপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এর প্রমাণ তো বিশ্বকাপই। সাকিব আর তামিম তো বিশ্বকাপে নিষ্প্রভই ছিলেন। জ্বলে উঠেছেন অনেক নতুন তারকা। মাহমুদুল্লাহরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এই উজ্জীবিত বাংলাদেশের সঙ্গে নড়বড়ে পাকিস্তানের পরিচয় নেই। এবার আজহার আলিরা এসে সম্পূর্ণ নতুন বাংলাদেশকে দেখতে পাবে। যারা ফেবারিটদের চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
রিচার্ড হ্যাডলি, সুনীল গাভাস্কার কিংবা আরও যারা বাংলাদেশের সমালোচনায় এতদিন মুখর ছিলেন তারাও বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে স্বীকার গেছেন, এ দলটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওদের এখন আর সেরাদের সারিতে না রেখে উপায় নেই। কিংবদন্তিদের এতসব প্রশংসা বাক্য কতটুকু সত্য তা অবশ্য মাঠেই প্রমাণিত হবে। ফতুল্লায় ১৫ এপ্রিল প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ১৭ এপ্রিল। এরপর ১৯ ও ২২ এপ্রিল হবে বাকি দুটি ওয়ানডে। সবকটি ওয়ানডে ম্যাচই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে (দিবা-রাত্রি)। ২৪ এপ্রিল মিরপুরে একমাত্র টি-২০ ম্যাচ খেলে টেস্ট খেলতে দুই দল যাবে খুলনায়। এটাই পাকিস্তানের প্রথম খুলনা গমন হতে যাচ্ছে। এর আগে যতবারই এসেছে, ততবারই চট্টগ্রামে খেলেছে তারা। তবে এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে চট্টগ্রামে কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ২৮ এপ্রিল থেকে ২ মে প্রথম টেস্ট খুলনায় খেলে ঢাকায় ফিরবে দুই দল। মিরপুরে ৬-১০ মে খেলবে দ্বিতীয় টেস্ট।
পাকিস্তানকে সফরে রাজি করাতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গুনতে হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় আড়াই কোটি টাকা)। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য দাবি করেছিল ৯ লাখ ডলার। অন্যদিকে বিসিবি ৩ লাখের উপরে দিতে রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিসিবি রবিবারের বৈঠকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ডলার দিতে রাজি হয়।
আরও একবার ক্রিকেট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মেলবন্ধন। আরও একবার এক সুতোয় বেঁধে সবাইকে ক্রিকেটের পর্দায় চোখ রাখতে বাধ্য করবেন মাশরাফি-সাকিবরা। এবার টাইগারদের সঙ্গে যোগ হচ্ছেন রনি তালুকদার। অভিষেকে তিনিও কি তাইজুলদের মতোই জ্বলে উঠবেন! দেখার জন্য খুব বেশি অপেক্ষায় থাকতে হবে না ভক্তদের।