এখন টাইগারদের তুলির অাঁচর পড়ছে বিশ্বরেকর্ডের ক্যানভাসেও। শুধুমাত্র দলগত জয় নয়, ক্রিকেটকে শৈল্পিক রূপ দিতেও দক্ষ এ দেশের ক্রিকেটাররা। দলগত পারফরম্যান্সে যেমন একের পর জয় আসছে, তেমনি ব্যক্তিগত অর্জন দিয়েও ক্রিকেট ভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করছে বাংলাদেশ। অনেক দিনের পুরনো রেকর্ডকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন করে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আবার নতুন রেকর্ড গড়ে বিশ্বরেকর্ডের বইয়ে সংযোজন করছেন নতুন অধ্যায়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের দুই দুজন ক্রিকেটার- স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। রেকর্ড দুটি হয়েছে দুই বোলারের অভিষেক সিরিজে। সদ্য সমাপ্ত ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে একাই তিন তিনটি বিশ্বরেকর্ডের মালিক হয়েছেন মুস্তাফিজ।
রেকর্ড-১: ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেট (১১টি)। বাংলাদেশি বোলার ভেঙে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের পেসার ব্রায়ান ভিটরির ১০ শিকারের রেকর্ড।
রেকর্ড-২: ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেট (১৩টি)। ভেঙে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার রায়ান হ্যারিস, দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্ট্রি থেরন, ইমরান তাহির ও জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটরির রেকর্ড। চার বোলারই নিয়েছিলেন ১১টি করে উইকেট।
রেকর্ড-৩: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার এখন মুস্তাফিজ। তিন ম্যাচে তার উইকেট ১৩টি। এই রেকর্ড গড়ে মুস্তাফিজ পেছনে ফেলে দিয়েছেন ক্যারিবীয় বোলার ভ্যাসবার্ট ড্রেকস এবং বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মতুর্জাকে। তাদের দুজনেরই ছিল ১২টি করে উইকেট।
ওয়াডেতে অভিষেক সিরিজেই তিন তিনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে বামহাতি এই পেসার এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে 'সাতক্ষীরার সুপারম্যান' হিসেবে পরিচিত। মুস্তাফিজের অনন্য রেকর্ডগুলোর কারণেই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলামের রেকর্ডটি ছিল- অভিষেক ম্যাচে খেলতে নেমেই হ্যাট্রিকসহ চার উইকেট শিকার। এজন্য বাংলাদেশের স্পিনারকে অন্য কারো রেকর্ড ভাঙতে হয়নি। কেননা এর আগে ওয়ানডেতে অভিষেকে হ্যাটট্রিকই করতে পারেননি কোনো বোলার। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ ম্যাচে এই কীর্তি গড়ে ক্রিকেটের রেকর্ডবুকেই নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছেন। রেকর্ডের ওই ম্যাচে ২৭তম ওভারে বোলিং করতে এসেই জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান সলোমন মিরেকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন তাইজুল। একই ওভারের শেষ বলে আউট করেন পানিয়াঙ্গারাকে। এরপর ২৯তম ওভারের প্রথম দুই বলেই প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দেন নিয়ুম্বু ও চাতারাকে। দুই ওভার মিলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তাইজুল। ওই ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ৭-২-১১-৪। ওই সিরিজে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল ৫-০ ব্যবধানে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যক্তিগত বিশ্বরেকর্ড দুটি হলেও টেস্ট রয়েছে তিন তিনটি। ২০০১ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটবিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছেন অনেকেই কিন্তু মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে আশরাফুল হয়ে যান 'টেস্টের সর্বোচ্চ কনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান'। তবে ওই এক সেঞ্চুরিতেই দুই দুটি বিশ্বরেকর্ডের মালিক হয়েছিলেন আশরাফুল। অভিষেকে ম্যাচে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি।
অভিষেক টেস্টেই দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নেন আবুল হাসান রাজু। ২০১২ সালে নভেম্বরে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে ১১৩ রানের অনবদ্ধ এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের অক্টোবরে রেকর্ডবুক নতুন আরেকটি বিশ্বরেকর্ডের অধ্যায় খুলে বসেন অলরাউন্ডার সোহাগ গাজী। চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে ব্যাট হাতে অপরাজিত সেঞ্চুরি করেন এবং একই ম্যাচে হ্যাট্রিকসহ ছয় উইকেট নেন। এক ম্যাচে হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরি আর কোনো অলরাউন্ডার করতে পারেননি।
ওই ম্যাচে সোহাগ গাজী প্রথম ইনিংসে ৭৯ রানে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রানে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। দলীয় ৮৫তম ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বলে কিউই ব্যাটসম্যান কোরি অ্যান্ডারসন, বিজে ওয়াটলিং ও ডগ ব্রেসওয়েলকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে নতুন এক বিশ্বরেকর্ডের মালিক হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত বিশ্বরেকর্ডের খাতায় উপরের দিকেই থাকবে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নাম। বাংলাদেশের তারকা ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ -তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে একসঙ্গে সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। শুধু ব্যক্তিগত নয়, এখন বাংলাদেশের ঝুলিতে দলীয় ও পার্টনারশিপ বিশ্বরেকর্ড আছে। এই রেকর্ডগুলোই তো ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশের ভীতকে আরও দৃঢ় করে দিচ্ছে।