খুব কাছে এসেও বাংলাওয়াশের স্বাদ নেওয়া হলো না টাইগারদের। ভারতকে প্রথমবারের মতো ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিতে পারলেন না মাশরাফিরা। তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে? না, তলানিতে নেমে এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট? মোটেই না। বরং ২৯ বছরের অপেক্ষার পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়কে দেখা হচ্ছে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। স্বপ্নের সিরিজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মুস্তাফিজুর রহমান। মেলবোর্নের বিতর্ক ছড়ানো সেই ম্যাচের পর বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ নিয়ে খইয়ের মতো ফুটছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রতিশোধের অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। ভারতকে প্রথম দুই ওয়ানডে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের শুধু প্রতিশোধই নেননি মাশরাফিরা, সিরিজও জিতে নেন প্রথমবারের মতো। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর এই প্রথম দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে নাস্তানাবুদ করল বাংলাদেশ। অবশ্য পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার বাংলাওয়াশ করে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারতকে দুমড়ে মুচড়ে দেয় প্রথম দুই ওয়ানডেতে। প্রথমটি জিতে ৭৯ রানে এবং দ্বিতীয়টি ৬ উইকেটে। দুই ম্যাচ সিরিজ নিশ্চিত হওয়ায় সামনে এসে পড়ে বাংলাওয়াশ। বুধবারের শেষ ওয়ানডে জিতলেই ভারতকে প্রথমবারের মতো বাংলাওয়াশের তেতো স্বাদ দিত বাংলাদেশ। সেই চাপ নিতে পারেননি মাশরাফিরা। তিনশোর্ধ্ব রান তাড়া করে ম্যাচ খুব বেশি রেকর্ড নেই টাইগারদের। তাই ৩১৮ রান তাড়া করে জেতা সম্ভব হয়নি টাইগারদের। হেরে যায় ৭৭ রানে। সিরিজ শুরুর আগেও আন্তর্জাতিক ঘরানায় পরিচিত মুখ ছিলেন না মুস্তাফিজ। এমনকি ঘরের মাঠেও। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলতে অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ খেলা। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচে অভিষেক এবং মোহাম্মদ হাফিজ ও শহীদ আফ্রিদিকে আউট করে আগমনী বার্তা। তখনও টনক নড়েনি কারও। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মুস্তাফিজকে দলভুক্ত করে টিম ম্যানেজমেন্ট। তখনও কেউ ভাবেননি তিনি খেলবেন। খেলতে যখন নামেন, বিস্ময়ে তখন চোখ ললাটে উঠেছিল সবার। তিনি নামেন এবং জয় করেন। বিধ্বস্ত করেন বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের ভারতকে। অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে নাম লেখান তাসকিন আহমেদের পাশে। পরের ওয়ানডেতে আরও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। ৪৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে এক ধাক্কায় আকাশ থেকে মাটিতে ফেলে দেন। দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। পেছনে ফেলেন ব্রায়ান ভিটরিকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে ৫টি করে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ভিটরি। আর ৮-১০ জনের মতো বাঁ হাতি পেসার হলেও তার মূল অস্ত্র 'কাটার'। স্পিনারদের মতো আঙুল ব্যবহার করে পেসারদের গতিতে বোলিং করেন মুস্তাফিজ। তার এই কাটারেই নাকাল হন ধোনিরা। তৃতীয় ম্যাচেও দুরন্ত বোলিং করে উইকেট নেন ২টি। সিরিজে তার উইকেট ১৩টি। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার মুস্তাফিজের। আগের রেকর্ড ছিল তারই অধিনায়ক মাশরাফি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলার ভ্যাসবার্ট ড্রেকসের। দুজনেই উইকেট নেন ১২টি করে। বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও এটাকে মুস্তাফিজের বললে অত্যুক্তি হবে না। অভিষেক সিরিজে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা এবং সিরিজ সেরায়ও প্রথম মুস্তাফিজ। সিরিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ভারতের রবীচন্দ্রন অশ্বিনের, ৬টি। টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির উইকেট সংখ্যা ৪। বোলিংয়ে সেরা মুস্তাফিজ। ব্যাটিংয়ে দুই দলের পাঁচ ক্রিকেটার মাত্র শতরানের উপর করেছেন সিরিজে। দুই হাফসেঞ্চুরিসহ সর্বোচ্চ ১৫৮ রান শিখর ধাওয়ানের। টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকারের রান ১২৮। ১২৩ রান করে সাকিব তিন নম্বরে। এই সিরিজ শেষে সাকিব আবার টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার। ব্যর্থ হয়েছেন তামিম ইকবাল, বিরাট কোহলিরা। প্রথম ওয়ানডেতে ৬০ রান করলেও পরের দুই ম্যাচে রান করেন ২০। কোহলির তিন ম্যাচে রান ৪৯। গত ডিসেম্বর থেকে টানা ১০ ওয়ানডে জেতার পর বুধবার হোঁচট খেলেন মাশরাফিরা। তারপরও এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ময়দানি লড়াইয়ে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকার। যা শুরু ৫ জুলাই।