চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইনের বলে পরপর দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বড় ইনিংস গড়ার আভাষ দিয়েছিলেন স্বাগতিক দলের টেস্ট অধিনায়ক। অতিথি দলের অপর পেসার ফিল্যান্ডারের বলেও বেশ স্বাছন্দে ব্যাটিং করছিলেন তিনি।
কিন্তু দলকে বেশী দূর নিয়ে যেতে পারলেন না মুশফিক। তৃতীয় দিনের ষষ্ঠ ওভারে ডেল স্টেইনের একটি বল মুশফিকের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে সরাসরি আঘাত হানে তার প্যাডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আম্পায়ার উইলসন প্রথমে এলবিডব্লুর আবেদন নাকচ করে দেন।
পরে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হাশিম আমলা রিভিউ নেন। টিভি আম্পয়ার মুশফিককে এলবিডব্লুর আউটের ঘোষনা দেন। এরই সঙ্গে সঙ্গে আগের দিনে উইকেট শূন্য থাকা স্টেইন তৃতীয় দিনের শুরুতে প্রথম উইকেটটি তুলে নেন। ৬১ বলে ২৮ রান করে আউট হন মুশফিক।
৯৩তম ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার করা ২৪৮ রান টপকে যায় বাংলাদেশ। ডেল স্টেইনকে স্ট্রেট ড্রাইভ করে বাউন্ডারিছাড়া করেই লিড নেয় মুশফিকুর রহিমের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয়বারেরমত প্রথম ইনিংসে লিড নিল বাংলাদেশ। লিড নেওয়ার পরের ওভারেই অবশ্য আম্পায়ার মধ্যাহ্ন বিরতির ঘোষণা দেন।
তবে মধ্যাহ্ন বিরতির সময়ই মুষলধারে বৃষ্টি নামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। লাঞ্চের পর ১২.১০ মিনিটে দ্বিতীয় সেশনের খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১১.৫৫ মিনিটে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে খেলা শুরু করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর পুনরায় শুরু হলো খেলা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে এখনও কোন ফিফটিই নেই সাকিব আল হাসানের। তামিমেরও ছিল না। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওপেনার ফিফটি পেলেন। সাকিবও দাঁড়িয়েছিলেন প্রথম ফিফটির সামনে। ১১৪ বলে খেলে ফেলেছেন ৪৭ রানের ইনিংসই। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন যেন আউট হওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিলেন সাকিব।
দলীয় ১০২ ওভারে সাইমন হার্মারের দ্বিতীয় বলেই পুল করতে গিয়ে মিস হিট করেন সাকিব। বল উঠে যায় মিড উইকেটে। মিডঅন থেকে দৌড়ে এসে কেউ বলটি তালুবন্দী করতে পারেননি। কিন্তু বেঁচে গেলেও অস্থিরতা তখনও যায়নি সাকিবের। ওভারের শেষ বলে আবারও পুল করতে যান। এবারও ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। শট মিডউইকেটে জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচটি লুফে নেন ডুমিনি। ৪৭ রানে আউট হয়ে একটি নিশ্চিত হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেন সাকিব। লিটনের সঙ্গে ৮২ রানের জুটিও ভাঙ্গে তাতে।
এরই মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে তাদের পুর্বের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও পার হয়ে গেছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল মাত্র ২৫৯ রান। এবার সেটা পার তো হয়ইনি শুধু, ৩০০ রানের গণ্ডিও পার হয়ে গেছে বাংলাদেশ।
সাকিবের পর ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই ব্যাট চালাতে শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ শহিদ। ১৯ বলে ৪টি বাউন্ডারি এবং একটি ছক্কার মারও মারেন তিনি। সংগ্রহ করেন ২৫ রান। কিন্তু এরপরই ফিল্যান্ডারের বলে স্টিয়ান ফন জিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান শহিদ।
শহিদ ফিরে গেলেও হাফ সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লিটন দাস ক্যারিয়ারে প্রথমবারেরমত হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন ১০১ বল খেলে। তবে এরপরই সাইমন হার্মারের বলে বোকা বনে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান লিটনও। ৩১৯ রানে ঘটলো অষ্টম উইকেটের পতন।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তাইজুল ইসলাম আউট হন ডেল স্টেইনের বলে। ২৭ বলে ৯ রান করেন তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মুস্তাফিজুর রহমান। তিনিও উইকেট দিলেন স্টেইনের বলে। ১৩ বল খেলে ৩ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১১৬.১ ওভার খেলে বাংলাদেশ ওভার প্রতি ২.৮ রেটে রান তুলে অলআউট হলো ৩২৬ রানে। প্রোটিয়াদের চেয়ে লিড নিল মাত্র ৭৮ রানের।