দিনের নিকশ কালো অন্ধকার ফ্লাড লাইটের আলোতেও শেষ হওয়ার নয়! সাগরিকার আকাশের কালো মেঘ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ জমিনে নেমে অন্ধকারে ঢেকে দিল। সবগুলো ফ্লাডলাইট জ্বালিয়েও দূর করা গেল না সে অন্ধকার। চট্টগ্রাম টেস্টে তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে মাত্র ১২.১ ওভার খেলা হওয়ার পরই আলো স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে গেল খেলা। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্ধকার মেঘ বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে নেমে এলো সাগরিকায়। আলো স্বল্পতায় আপাতত বন্ধ হওয়া দিনের খেলা শেষ হয়ে গেল সেখানেই। ততোক্ষণে বাংলাদেশের ৭৮ রানের লিডকে ১৭তে কমিয়ে এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই প্রোটিয়া ওপেনার ফন জাইল (৩৩*) ও এলগার (২৮*) বৃষ্টির আগেই স্কোরবোর্ডে জমা করেন ৬১ রান। এখনো পিছিয়ে ১৭ রানে। হাতে ১০ উইকেট। তারপরও তৃতীয় দিন শেষ হওয়ার পর ম্যাচটা ঝুলে আছে বাংলাদেশের দিকেই; সংবাদ সম্মেলনে অনায়াসে বলে গেলেন লিটন দাস।
'যদি ওদের ১৫০-২০০ রানের মধ্যে আটকাতে পারি তবে আমাদের জন্য কাজটা সহজ হবে।' লিটন দাসের বক্তব্যে ম্যাচ জয়ের পূর্বাভাস পাওয়া গেল কি! উইকেটের আচরণ কিন্তু ম্যাচে ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তিনটা দিন শেষ হওয়ার পরও উইকেটের আচরণ তেমন একটা বদলায়নি। 'হঠাৎ বৃষ্টি'র কল্যাণে উইকেট এখনো অক্ষতই রয়ে গেছে। ফাটলগুলো ভেজা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারেনি। তারপরও একটা দারুণ কিছু করার হাতছানি টাইগাররা অস্বীকার করতে পারে না। লিটন দাস যেমন স্পষ্ট করে বললেন, 'এখনো আমরাই এগিয়ে আছি। আজ (গতকাল) দুয়েকটা উইকেট শুরুতে নিতে পারলে কাজটা আরও সহজ হয়ে যেত। এটা না হওয়ার পরও আমরাই এগিয়ে।' ম্যাচের পরিসংখ্যানও কিন্তু এগিয়ে রাখছে টাইগারদেরই। হাতে আরও দুইটা দিন। ১৮০টা ওভার। এরমধ্যে প্রোটিয়াদের অলআউট করে দ্বিতীয় লক্ষ্যে পৌঁছা অসম্ভব কিছু নয়। তবে লিটনও স্বীকার করেছেন, বোলিংটা খুব ভালো করতে হবে। মুস্তাফিজ-শহিদরা গুছিয়ে বোলিংটা করতে পারলেই হয়। দারুণ একটা জুটি হয়েছিল সাকিব-লিটনের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এ দুজন অতীতকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন (৮২)। আগের সর্বোচ্চ ছিল সাকিব-আফতাবের (২০০৮ সালে ৭০)। কিন্তু সাকিবের 'পঞ্চাশ' করার তাড়াহুড়োয় জুটিটা আরও লম্বা হয়নি। লিটন অবশ্য বলছেন, 'আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল লিড নিশ্চিত করার। এরপর দ্রুত রান তোলার। সবাই নিজেদের কাজটা করার চেষ্টা করেছে।' সাকিব ইনিংসের ১০২ নম্বর ওভারের দ্বিতীয় বলেই বাতাসে তুলে দিয়েছিলেন বল। মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ডুমিনি মিড অনে পৌঁছবার আগেই মাটিতে নেমেছিল বল। তবে এই ওভারেরই শেষ বলে হার্মারকে পুল করতে গিয়ে সেই ডুমিনির হাতেই ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। লিটন দাসও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন। কট বিহাইন্ডের ফাঁদে পড়েন তিনি। তবে টিভি আম্পায়ার থেকে নিশ্চিত হওয়ার পরই তার দিকে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। লিটন নিজের এই আউট সম্পর্কে বলেন, 'বলটা বুঝে ঠিকমতো খেলতে পারিনি। এই ভুলেরই মাশুল গুনতে হয়েছে। আর ভুল তো মানুষই করে।' লিটন আউট হওয়ার আগে অবশ্য ক্যারিয়ারের প্রথম 'পঞ্চাশ' পূরণ করেন। ১০২ বলের এ ইনিংসে ছিল ৭টা চার। বৃষ্টির শঙ্কা নিয়েই আজ শুরু হবে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা। ময়দানি লড়াই যদি বৃষ্টি বাধায় না পড়ে তবে দিনটা হতে যাচ্ছে দুই দলের জন্যই শক্তি প্রদর্শনের। বল-ব্যাটের লড়াই ছাড়াও থাকবে স্নায়ু চাপ। দক্ষিণ আফ্রিকা চাচ্ছে স্কোরবোর্ডে একটা নিরাপদ স্কোর দাঁড় করাতে। আর বাংলাদেশ চাচ্ছে অন্তত দুশো রানের মধ্যে প্রোটিয়াদের থামিয়ে দিতে। কার লক্ষ্য পূরণ হবে আজ!
দিনের শুরুটা নিজেদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে গেলেন লিটন দাস। মুশফিকের স্থানে কিপিংয়ে দাঁড়ানো এ ক্রিকেটার যদিও গতকাল একটা 'হাফ চান্স মিস' করেছেন। ফন জাইলের একটা কঠিন ক্যাচ লুফে নিতে পারলে আজকের কাজটা আরও সহজ হয়ে যেত টাইগারদের। তবে সুযোগ এখনো হারিয়ে যায়নি। এ সান্ত্বনা নিয়েই গতকাল বাড়ি ফিরেছিলেন সাগরিকার দর্শকরা। সুযোগ কী আজ আসবে! আর সে সুযোগ কী টাইগাররা কাজে লাগাতে পারবে! গত আটটা টেস্টে দৰিণ আফ্রিকার কাছে অসহনীয় পরাজয়গুলো যে এখনো কালো দাগ হয়ে ফুটে আছে ভক্তদের হৃদয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ২৪৮ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ৬১/০ (২১.১ ওভার) (ফন ঝিল ৩৩*, এলগার ২৮*)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩২৬/১০ (১১৬.১ ওভার) (তামিম ৫৭, ইমরুল ২৬, মুমিনুল ৬, মাহমুদুল্লাহ ৬৭, মুশফিক ২৮, সাকিব ৪৭, লিটন ৫০, শহীদ ২৫। স্টেইন ৩/৭৮, ফিল্যান্ডার ২/৪০, হারমার ৩/১০৫, ফন ঝিল ১/২৩, এলগার ১/৬)