ক্রিকেটের সব মুরুব্বিদের বিরুদ্ধেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছে। বাকি ছিল কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা। গত আটটা টেস্টে যে দলের বিপক্ষে সাতটাতেই টাইগাররা মেনে নিয়েছিল ইনিংস পরাজয়। গতকাল সাগরিকায় সেই প্রোটিয়া বোলিং 'ব্যরিয়ার'ই পাড়ি দিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত সব দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশ খেলেছিল ৩০০-উর্ধ্ব ইনিংস। বাকির খাতায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা নামটাও এবার যোগ হলো এই তালিকায়। লম্বা কোনো ব্যক্তিগত ইনিংস কিংবা দারুণ কোনো জুটি ছাড়াই টাইগাররা বিশ্বসেরা প্রোটিয়া বোলিং লাইনের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে তুলে নিল ৩২৬ রান। যাদের বিপক্ষে আগের আটটা টেস্টে সর্বোচ্চ ছিল ২৫৯!
ক্রিকেটের উঠুনে টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিচরণ দেড় দশকের। দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় ৯২ নম্বর টেস্ট ম্যাচ খেলছে টাইগাররা। আগের ৯১ ম্যাচের ৩৭টাতে বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে। এর মধ্যে মাত্র চারটাতে লিড নিয়েছে টাইগাররা। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫২৭ রানের জবাবে সাকিব-মুশফিকরা করেছিলেন ৫৫৬ রান। এরপর শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে লিড নেয় বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার ৫৭০'র বিরুদ্ধে টাইগাররা করেছিল ৬৩৮। একই বছরে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬৯ রানের জবাবে করেছিল ৫০১। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের ২৪০'র জবাবে টাইগাররা করেছিল ২৫৪। এবার রান চেজ করে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও লিড নিল বাংলাদেশ। দুই দলের দুই ইনিংস শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৭৮ রানে।
আফ্রিকান লায়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন এতটাই নড়বড়ে প্রমাণিত ছিল যে চারবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে চারবারই 'ফলোঅনে'র কবলে পড়েছিল। রানের ব্যবধান ছিল গড়ে প্রায় ৩০০ (২২৮, ২৮৮, ৩২৪ ও ৩৫৯)! সেই প্রোটিয়া বোলারদের বিপক্ষেই তিনটা ফিফটি হলো টাইগারদের (তামিম ৫৭, মাহমুদুল্লাহ ৬৭ ও লিটন ৫০)। সাকিব (৪৭) ফিফটি বঞ্চিত হলেও আফ্রিকান বোলিং লাইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়েছেন। এমনকি নির্ভেজাল বোলার শহিদও প্রোটিয়া বোলিং লাইনের যোগ্যতাকে অস্বীকার করলেন। মাত্র ১৯ বলে করলেন ২৫ রান (১টা ছক্কা ও ৪টা চার)!
উজ্জ্বল বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও দারুণ করলো টাইগাররা। আবার বোলারদের পালা। এবার বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের উৎসবে মাততে পারবে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা।