গ্রেট ক্রিকেটারদের অনেকেই নিজেদের প্রথম ম্যাচে সেরা তারকার পুরস্কার পেয়েছেন। পাকিস্তানের আবদুল কাদির, দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, অ্যালান ডোনাল্ড, জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের মতো কিংবদন্তির পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকেই ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের সোহাগ গাজী এবং তাইজুল। এই তালিকায় নাম লিখেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমানও। তখন কি কেউ জানতো, মুস্তাফিজ এমন এক কীর্তি গড়বেন, যেখানে আর কেউ নেই! টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে অভিষেকে ম্যাচসেরা হয়েছেন ৪০ জন। আছেন স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের মতো কিংবদন্তি কিউই ক্রিকেটারও। কিন্তু এদের কেউ টেস্ট ও ওয়ানডের অভিষেকেই ম্যাচসেরা হননি। এই অবিশ্বাস্য কাজটাই 'ড্রিম বয়' মুস্তাফিজ। ওয়ানডের পর টেস্ট অভিষেকেও ম্যাচসেরা হয়ে লিখলেন।
মুস্তাফিজ বাংলাদেশের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে জিতলেন এ পুরস্কার। জাভেদ ওমর (২০০১, জিম্বাবুয়ে), মোহাম্মদ আশরাফুল (২০০১, শ্রীলঙ্কা) ও ইলিয়াস সানি (২০১১, ওয়েস্ট ইন্ডিজ) অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। এমন কীর্তির আগে মুস্তাফিজ চার বলে তিন উইকেট নিয়ে নাম লিখেছিলেন মরিস অ্যালম, রবী শাস্ত্রী ও জনি মার্টিনের পাশে। এরা প্রত্যেকেই অভিষেক টেস্টে চার বলে তিন উইকেট শিকার করেছেন। মুস্তাফিজ রূপকথার সেই রাজপুত্র যার জাদুর 'অফ কাটারে'র ছোঁয়ায় জেগে উঠেছে বাংলাদেশের ঘুমন্ত টাইগাররা। প্রতিপক্ষের কাছে 'মুস্তাফিজ' মন্ত্রের কোনো জবাব ছিল না। ক্রিকেট বিশ্বের দাপুটে দুটি দল পরাজয় স্বীকার করেছে তার কাছে। ভারতের গর্বিত মস্তক নত করার পর এক মুস্তাফিজ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই আফ্রিকান সিংহও বধ করেছে টাইগাররা। অভিষেক ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মুস্তাফিজ। এরপর নিজেকে ওয়ানডেতে বেশ কয়েকবারই প্রমাণ করেছেন তিনি। তবে ওয়ানডেতে এমন দারুণ পারফরম্যান্সের পরও তার টেস্ট অভিষেক নিয়ে অনেক গুঞ্জন ছিল। এমন তরুণ এক বোলারকে কী আফ্রিকান সিংহ বধের মিশনে পাঠাবে বাংলাদেশ! সব বিতর্ক পিছনে ফেলে মুস্তাফিজের মাথায় উঠল ৭৮ নম্বর টেস্ট ক্যাপ। আর প্রথম মিশনেই সফল এ বাঁ হাতি পেসার। হাশিম আমলা, ডুমিনি, ডি কক আর টেম্বা বাভুমার উইকেট শিকার করলেন তিনি। জয় করলেন টেস্ট অভিষেকে সেরা তারকার পুরস্কার। মুস্তাফিজ কী এমনটা ভেবেছিলেন! 'এমন কোনো লক্ষ্য ছিল না যে ওয়ানডে আর টেস্ট অভিষেকেই ম্যাচসেরা হবো। আমার লক্ষ্য ছিল যদি ম্যাচ খেলতে পারি তাহলে ভালো করব।' মুস্তাফিজ এমনই ভালো করলেন যা ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর দলের বিপক্ষে খেলে সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন তিনি। টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে মুস্তাফিজের আগে মোট ৯৯ জন অভিষেকেই সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। মুস্তাফিজ ক্রিকেটের দুটো ফরম্যাটে জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এ কীর্তির পর মুস্তাফিজ কেবল এতটুকু বললেন, 'আমিই প্রথম। সত্যিই বিষয়টা দারুণ।' মুস্তাফিজকে অভিষিক্ত করানো যে কতটা সুচিন্তিত ছিল তা জানিয়ে গেলেন অধিনায়ক মুশফিকও। 'দেখুন, মুস্তাফিজ কিন্তু জানে, টেস্ট আর ওয়ানডে এক নয়। ও নিজেই বলেছে, টেস্টে উইকেট পাওয়া কঠিন। এমনকি রিভার্স সুইং আর অফ কাটারও ব্যাটসম্যানরা সহজে সামলে নেয়। কারণ, এখানে রান করার তেমন তাড়া থাকে না। সে জানে, উইকেট পাওয়ার জন্য টেস্টে বোলিং করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।' একজন বোলার হিসেবে মুস্তাফিজ হয়তো এখনই নিজের নামটা সেরাদের তালিকায় দাবি করতে পারেন না। তবে সকালের সূর্য যদি একটা ভালো দিনের ইঙ্গিত হয়ে থাকে মুস্তাফিজ এরই মধ্যে দারুণ এক ক্যারিয়ারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সাত ম্যাচ পর তার নামের পাশে যে ২২টা উইকেট (ওয়ানডে ১৮, টেস্ট ৪)! মুস্তাফিজ অবশ্য গৌরবদীপ্ত ক্যারিয়ার নিয়ে এখনই ভাবছেন না। তার ভাবনায় কেবলই দেশের জন্য ভালো খেলা।