জাতীয় দলে খেলানোর জন্য বাফুফে তিন বিদেশি ফুটবলারকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। মোহামেডানের ইসমাইল বাঙ্গুরা, ঢাকা আবাহনীর ইউসুফ সামাদ ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের কিংসলে চিগোজির ফরমও পূরণ করানো হয়। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, দেশের ফুটবলের স্বার্থের কথা ভেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্বের প্রক্রিয়াটা থেমে যায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আর আবেদন করা হয়নি। কেন হয়নি, এ ব্যাপারে বাফুফে থেকে কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহলের আপত্তির কারণে বাফুফে বিদেশি ফুটবলারদের নাগরিকত্ব নিয়ে বেশি দূর এগোয়নি। এ ব্যাপারে সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকদের বক্তব্য ছিল জাতীয় দলে বিদেশিরা খেললে দেশের ফুটবলাররা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। শোনা যাচ্ছিল তিন বিদেশি ফুটবলারকে নাগরিকত্ব দিলে বেশ ক'জন ফুটবলার প্রতিবাদ হিসেবে জাতীয় দল থেকে অবসর নেবে।
এটা ঠিক সালাউদ্দিন এক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। কেননা বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়াটা একক কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, বিশ্বের অনেক দেশই অন্য দেশের ফুটবলারদের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে খেলাচ্ছে। দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপেও এ সংখ্যা একেবারে কম নয়। কানাডা যখন বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে খেলে তখন তাদের দেশে ভিনদেশি ফুটবলারও ছিলেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও যদি কোনো বিদেশিকে নাগরিকত্ব দিয়ে খেলানো হতো তাতে আপত্তি উঠতো না। সমস্যাটা সৃষ্টি করেছেন সভাপতি নিজেই। এতবড় সিদ্ধান্ত নিবেন অথচ তার কমিটিকে জানাবেন না তাতো হতে পারে না। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে এমন জটিলতা হতো না। আর বাফুফে সর্বসম্মতিভাবে সিদ্ধান্ত নিলে আপত্তিও উঠতো না।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল আলোচনা হয় ফুটবলে জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়কের সঙ্গে। প্রথমেই তিনি বললেন, প্লিজ আমার নামটা প্রকাশ করবেন না। এরপর বললেন, 'ফুটবলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ যে অতীতে খুব ভালো খেলেছিল তা বলা যাবে না। সাফল্য এসেছে খুব কমই। কিন্তু ভালোমানের ফুটবলারের অভাব ছিল না। রিজার্ভ বেঞ্চে যারা বসে থাকতেন তারাও ছিলেন তারকা ফুটবলার। এখন সেই অবস্থা নেই, বাফুফের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দেশে নতুন কোনো ফুটবলার সৃষ্টি হচ্ছে না। জাতীয় দলে ২/৩ জন ছাড়া মানসম্পন্ন খেলোয়াড় নেই বললেই চলে। ৯০ নয় ৬০ মিনিটেই দম হারিয়ে ফেলে। সুতরাং এ অবস্থায়তো ফুটবল খেলা যায় না। কোচ ক্রুইফ সম্ভবত উপায় না দেখে সালাউদ্দিন ভাইকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে খেলাতে। কিন্তু সেটা আর হয়নি নানা কারণে। তবে ফুটবলে যে রুগ্ন দশা তা কাটাতে হলে নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে বিদেশি ফুটলারের প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে যে সংকটে আমরা আটকিয়ে গেছি তা থেকে বের হওয়া যাবে না। হয়তো বা সালাউদ্দিনের প্রক্রিয়াটা ভুল ছিল। কিন্তু এনিয়ে প্রতিবাদ উঠবে কেন তা বুঝতে পারি না। আফগানিস্তান ক্রিকেট দলেতো বিদেশি ভরা। কেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের আগে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেছে বিদেশিদের কল্যাণে। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ইমরান তাহির কোন দেশের? ফুটবলেও এমন অনেক উদহারণ দেওয়া যাবে।
কেউ কেউ আবার বলেন, নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু ভালোমানের ফুটবলার হতে হবে। বুঝি না, এই যুক্তি দেওয়া হয় কোন যুক্তিতে। বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশে কি উন্নতমানের বিদেশি ফুটবলার খেলতে আসবে।
আগে যখন আসতেন তখন ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তাছাড়া এখন যারা খেলছেন তারাই বা কম কিসের। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এত বিতর্ক আর প্রতিবাদ তবু পেশাদার লিগে স্থানীয়দের চেয়ে বিদেশিদেরই দাপট বেশি। শেখ জামাল চ্যাম্পিয়নের পথে রয়েছে। দেশের তারকা ফুটবলারের ছড়াছড়ি থাকলেও দলের জয়ের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন বিদেশিরাই। পেশাদার লিগে শীর্ষে গোলদাতার তালিকায় চার বিদেশি। লোকালরা যেখানে ফাঁকা নেট পেয়েও ব্যর্থ, সেখানে বিদেশি ফুটবলাররা একের পর এক দুর্দান্ত গোল করে চলেছেন। তাহলে তাদের মান নিয়ে এত বিতর্ক কেন? বাঙ্গুরা, সামাদ ও কিংসলের ব্যাপারে বাফুফে আগ্রহ দেখিয়েছিল। বিশেষ করে বাঙ্গুরা যে গতিময় খেলা খেলছেন তা কি লোকালরা পারছেন।' বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানালেন, বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়াটা ডেড ইস্যু হয়ে গেছে। এনিয়ে কথা বলে লাভ নেই। বিদেশিদের খেলানো নিয়ে প্রতিবাদ উঠলেও ফুটবলপ্রেমীরা কোনো অবস্থায় চান না দেশের ফুটবলে এ অসহায়ত্ত চেহারা। জাগিয়ে তুলতে যা করা দরকার সেটাই করা উচিত। বিদেশি ফুটবলার নিয়ে আপত্তি উঠেছে। কিন্তু বিদেশে কি বাংলাদেশিরা সুনাম কুড়াচ্ছেন না। সূচিত্রা সেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি নায়িকা ছিলেন। তিনিতো বাংলাদেশেরই মেয়ে। বৃটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশের তিন মহিলা নির্বাচিত হয়েছেন। এটা কি কম গৌরবের। এখন বিদেশি ফুটবলার অন্তর্ভুক্ত করে ফুটবলে যদি দুর্দশা কাটে তাতেতো দেশেরই লাভ। এমন জনপ্রিয় খেলা ধ্বংস হয়ে যাক কেউ কি তা চায়। এ ব্যাপারে সরকারেরও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে।