অনুশীলন শেষ। হোটেলে ফিরতে সবার আগে টিম বাসে উঠলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কাঁধের ব্যাগটা না রেখেই বাস থেকে আবার নেমেও পড়লেন। পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে করমর্দনও করলেন। কিন্তু মুখে হাসি নেই সাতক্ষীরার সুপারম্যানের। গতকাল তাকে দেখে আতঙ্কিতও মনে হয়নি। তবে মুখচ্ছবিতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল কাটার মাস্টার ভীষণ টেনশনে!
শুধু মুস্তাফিজ কেন, গোটা দলই ভীষণ টেনশনে ছিল গতকাল। থাকারই কথা। বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের হাতছানি। ড্র করতে পারলেও- সে তো জয়ই। যৌথভাবে সিরিজ জয়। তাই যেন একটু বেশি সিরিয়াস বাংলাদেশ। আর বাড়তি চাপ থেকেই টেনশন। তবে গতকাল অনুশীলনের সময় ভীষণ আত্দবিশ্বাসী ছিল টাইগাররা।
আত্দবিশ্বাস অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কথাতেও। টাইগার দলপতি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিরুদ্ধে জয় পাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং। তবে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত টাইগাররা। মুশফিক বলেন, 'এটা পাঁচ দিনের খেলা। পুরো পাঁচ দিনই আমাদের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে খেলতে হবে। আমরা যেহেতু এক নম্বর দলের বিপক্ষে খেলছি, সুযোগটা আসলে সেখানেই। তাদের বিপক্ষে জেতাটা অনেক বড় হবে। গত টেস্টে আমরা প্রতিটি সেশনেই দাপট দেখিয়ে খেলেছি। সেদিক থেকে বলব, লক্ষ্য তো অবশ্যই ভালো করা। আমাদের বোলিং ইউনিটের ক্ষমতা আছে ওদের ২০ উইকেট নেওয়ার। সেটা করতে পারলে ফলাফলটা ভালো হতে পারে। ভালো ফলাফলটা আপনারা জানেন কী- বাংলাদেশ সিরিজটি জিততেও পারে।'
চট্টগ্রাম টেস্টের পারফরম্যান্সটাই বাংলাদেশকে আশাবাদী করে তুলছে। প্রথম তিন দিন ছিল বাংলাদেশের দাপট। শেষের দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ম্যাচ ড্র হলেও আত্দবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের। মুশফিক বলেন, 'শেষ টেস্টটা সব দিক থেকেই আল্লাহর রহমতে খুব ভালো হয়েছে। বোলিং-ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং সবই ভালো হয়েছে। ওই ম্যাচ থেকে অনেক আত্দবিশ্বাস পেয়েছি। আমরা চলতি মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে সবাই ভালো খেলার জন্য মুখিয়ে আছে।'
শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উইকেট চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক আলাদা। মিরপুরে বাউন্স থাকায় পেসাররা বাড়তি সুবিধা পান। টার্ন থাকে স্পিনেও। তবে মুশফিকের আশা উইকেট স্পোর্টিং হবে। তবে তা না হলেও খুব বেশি কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। কেননা বৃষ্টির কারণে ১০-১২ দিন উইকেট ছিল কাভারে ঢাকা। তাই চাইলেও হয়তো এই স্বল্প সময়ের মধ্যে মন মতো উইকেট তৈরি করা সম্ভব নয় কিউরেটরের পক্ষে। মুশফিক বলেন, 'উইকেট যা হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা খুশি। কারণ উইকেটের ওপর কারও হাত নেই। আশা করছি উইকেটটা ব্যাটসম্যানদের জন্য সুবিধার হবে। একই সঙ্গে মিরপুরের উইকেটে পেসারদের জন্যও কিছু থাকে। এখানে মাটি অন্যরকম। এসডি বলে পেসাররা ভালো করবে। একই সঙ্গে স্পিনাররাও কিছু পাবে। সব মিলিয়ে একটা স্পোর্টিং উইকেটেই খেলা হবে। আমাদের উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে।'
ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভারনন ফিলান্ডার বিশ্বসেরা পেসারদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। এটাই টাইগারদের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ব্যাটসম্যানরা। মুশফিক বলেন, 'প্রোটিয়া বোলারদের খেলা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। এ রকম শক্তিশালী পেস আক্রমণকে এর আগেও খেলেছে বাংলাদেশ। তবে ভালো খেলাটা লম্বা সময় ধরে করতে হবে। এক সেশন ভালো খেলে পরের সেশনে খারাপ খেললে লাভ হবে না। আমরা জানি, এই টেস্টে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমরা যাতে বড় বড় ইনিংস খেলতে পারি, সেটাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।'
শুধু প্রোটিয়া বোলাররা কেন, বাংলাদেশি পেসাররাই বা কম কিসে! মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ শহীদ তো চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন। ঢাকা টেস্টে দুই পেসারের কাছে অধিনায়কের প্রত্যাশা, 'মুস্তাফিজ ৪-৫ ম্যাচ ধরে যা করে যাচ্ছে সেটা যেন করতে পারে। শুধু ও না। শহীদও খুব ভালো বোলিং করেছে। আশা করব, তাদের দুজন যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেটা যেন করে।'
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড হচ্ছেন মুশফিক নিজেই। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। ঢাকা টেস্টে বড় ইনিংস খেলার কথা জানালেন অধিনায়ক, 'শেষ কয়েকটা টেস্ট হয়তো আমি যেভাবে চেয়েছি সেভাবে খেলতে পারিনি। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি হতাশ। আশা করব, নিজে যেন দলের জন্য শতভাগ দিতে পারি। যদি কোনো সুযোগ আসে তাহলে নিজের ইনিংসটা যেন বড় করতে পারি। যেটা দলের জন্য লাভ হবে।'
আর মুশফিকের ব্যাট হাসলে যে বাংলাদেশও হাসবে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।