শেষ ওভারের টানটান লড়াই। টি-২০ ক্রিকেটে প্রায়ই ঘটে এমন ঘটনা। সেই শেষ ওভারের নাটকের সাক্ষী রইল কলকাতার ইডেন গার্ডেন। দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরাতে শেষ ওভারে ক্যারিবিয়ানদের তুলতে হতো ২৫ রান। ক্রিজে রোভম্যান পাওয়েল ও কায়রন পোলার্ড। যে কোনও মুহূর্তে অঘটন ঘটে যেতে পারত। কিন্তু হর্ষল প্যাটেল সেটা হতে দিলেন না।
প্রথম দুইটি বলে সিঙ্গেল নিলেন পাওয়েল-পোলার্ড। তিন নম্বর ও চার নম্বর বলে পর পর দুটো ছক্কা। এরপরও অঘটন হতেই পারত। কিন্তু সামলে নিলেন হর্ষল। পঞ্চম বলটায় দিলেন এক রান। সেখানেই শেষ হয়ে গেল যাবতীয় আশা। শেষে বলটায় তাই পোলার্ড আর কোনও চেষ্টাই করলেন না। ক্যারিয়ারের ১০০তম টি-২০ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক পোলার্ড। কিন্তু মোটেও স্মরণীয় হল না রেকর্ড ম্যাচ।
ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস। ক্রিকেটে এই কথাটা বেশ প্রচলিত। পাওয়ার হিটারদের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে ক্যাচ মিসের বেশ ভালো খেসারত দিতে হত রোহিতের ভারতকে। অল্পের জন্য রক্ষা পেল ভারত। ইডেনের পিচে ১৮৭ রান তাড়া করাটা এতটাও সহজ নয়। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের কাছে এটাও যে সহজ তাই কিন্তু মনে হচ্ছিল।
নিকোলাস পুরান আর রোভম্যান পাওয়েলের জুটিটা একদমই শেষ করে দিচ্ছিল বিরাট ও পন্থের হাফসেঞ্চুরিগুলোকে। কিন্তু তা হলো না। প্রথম ম্যাচে দাপুটে জয়টা সত্যিই আত্মবিশ্বাসী করে দিয়েছিল টিম ইন্ডিয়াকে। আর তাতেই পোলার্ডদের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে ২-০ এগিয়ে গেল ভারত। পাশাপাশি এই ম্যাচে টিম ইন্ডিয়ার আরও একটা প্রাপ্তি কোহলির রানে ফেরা।
টসে হেরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমেছিল ভারত। ওপেনিং জুটিকে জমে ওঠার কোনও সুযোগ দেননি শেল্ডন কটরেল-রস্টন চেজরা। ওপেনিং করতে নামা ঈশান কিষাণ ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। এরপর বিরাটের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন ক্যাপ্টেন রোহিত। কিন্তু সেখানেও ছন্দপতন। রোহিতকেও সেভাবে ছন্দে দেখা যায়নি। তবে মেজাজে ফিরলেন একজন। তিনি হলেন বিরাট কোহলি। শুরু থেকেই তিনি যেন বোঝাতে নেমেছিলেন চাপমুক্ত হয়েই খেলছেন তিনি। তার রানে ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে বিরাট যদি জুটিটা গড়তে পারতেন তা হলে ভারতের স্কোরবোর্ডে ২০০ রানও উঠে যেতে পারত। তবে সূর্যর ব্যাট জ্বলে ওঠেনি। রোহিত-সূর্যকুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধার পর বেশ কিছুক্ষণ পন্থের সঙ্গেও ক্রিজে ছিলেন বিরাট। তবে হাফসেঞ্চুরি করেই ফেরেন সাজঘরে। কোহলির ৫২ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও একটি ছয়। কোহলি ফেরার পর ভেঙ্কটেশ আইয়ারের সঙ্গে দ্রুতগতিতে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন পন্থ। ১৮ বলে ৩৩ রান করে মাঠ ছাড়েন ভেঙ্কি। অপরদিকে থাকা পন্থ ২৮ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। বিরাটের মতো পন্থের ইনিংসেও ছিল ৭টি চার ও ২টি ছয়।
পাওয়ার প্লে-তে চাহালকে ব্যবহার করে ক্যারিবিয়ানদের রান কিছুটা বেঁধে রেখেছিলেন রোহিত। মেয়ার্স (৯) সাজঘরে ফেরেন চাহালের শিকার হয়ে ৬ ওভারের মধ্যে। এরপর ব্র্যান্ডন কিং ও পুরান জুটি বেশ কিছুক্ষণ ক্রিজে থাকলেও দলকে সুবিধা দিতে পারছিলেন না। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে বিষ্ণুই ফেরান দ্বিতীয় ওপেনার কিং (২২)-কে। এরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাল ধরেন নিকোলাস পুরান ও রোভম্যান পাওয়েল। ১০০ রানের জুটি গড়েন পুরান-পাওয়েল। ইডেন সাক্ষী রইল পুরান-পাওয়েলের চার-ছক্কার ফুলঝুরির।
পুরানকে ১৮.৩ ওভারে ফেরান ভুবেনেশ্বর। আর সেখানেই ছন্দপতন হয় ক্যারিবিয়ানদের। শেষ বেলায় ক্রিজে আসেন ক্যাপ্টেন পোলার্ড। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ গুছিয়ে ফেলেছেন ভারতীয় বোলাররা। শেষের দিকে আটোসাটো বোলিং শুরু করলেন ভুবি-হর্ষলরা। আর পেলেন তার ফলও। ৮ রানে ম্যাচ জেতার পাশাপাশি সিরিজে ২-০ এগিয়ে গেল ভারত। ওয়ানডে সিরিজের মতো এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টি-২০ সিরিজও পকেটে পুরে নিল রোহিতের ভারত। এবার ইডেন চায় ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশের সাক্ষী হতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৬/৫ (রোহিত ১৯, কিষান ২, কোহলি ৫২, সূর্যকুমার ৮, পন্থ ৫২*, ভেঙ্কাটেশ ৩৩, হার্শাল ১*; আকিল ৪-০-৩০-০, কটরেল ৩-১-২০-১, হোল্ডার ৪-০-৪৫-০, শেফার্ড ৩-০-৩৪-১, চেইস ৪-০-২৫-৩, স্মিথ ১-০-১০-০, পোলার্ড ১-০-১৪-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭৮/৩ (কিং ২২, মেয়ার্স ৯, পুরান ৬২, পাওয়েল ৬৮*, পোলার্ড ৩*; ভুবনেশ্বর ৪-০-২৯-১, চাহার ৪-০-৪০-০, চেহেল ৪-০-৩১-১, হার্শাল ৪-০-৪৬-০, বিষ্ণই ৪-০-৩০-১)
ফল: ভারত ৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে স্বাগতিকরা
ম্যান অব দা ম্যাচ: ঋসভ পন্থ
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ