প্রথম ইনিংসে খুব বড় লিড নেওয়া যায়নি। কিন্তু তাতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি। আরও একবার জ্বলে উঠলেন ইংলিশ পেসাররা। আগুনে বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস দুইশর আগে গুটিয়ে লক্ষ্যটা নাগালেই রাখলেন বেন স্টোকস, স্টুয়ার্ট ব্রডরা। রান তাড়ায় জ্যাক ক্রলির আগ্রাসী ফিফটিতে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ইংল্যান্ড।
ওভালে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ১৩০ রানের লক্ষ্যে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯৭ রান করে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ১০ চারে ৪৪ বলে ৫৭ রানে খেলছেন ক্রলি। ৩ চারে ৩২ রানে অপরাজিত অ্যালেক্স লিস।
প্রথম দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিন স্থগিত হয় প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্মানে। তিন দিনে পরিণত হওয়া টেস্ট দুই দিনেই জয়ের পথ করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু আলোকস্বল্পতায় আগেভাগে শেষ করতে হয় চতুর্থ দিনের খেলা। খেলা হওয়া প্রথম দিনে ১৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় দিনে পড়ল ১৩ উইকেট।
সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে পঞ্চম ও শেষ দিনে ইংল্যান্ডের চাই ৩৩ রান। তিন টেস্টের প্রথমটি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা টানে স্টোকসের দল। প্রথম ইনিংসে ১১৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ইংলিশদের প্রথম ইনিংস থামিয়ে দেয় ১৫৮ রানে। মাত্র ৪০ রানে পিছিয়ে থেকে আবার ব্যাটিংয়ে নামা দলটি পড়ে স্বাগতিক পেসারদের তোপের মুখে। এবার করতে পারে ১৬৯ রান। প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় ইনিংসের ১০ উইকেট ভাগ করে নেন ইংল্যান্ডের চার বোলার। সর্বোচ্চ তিনটি করে শিকার ধরেন ব্রড ও স্টোকস। দুইটি করে প্রাপ্তি জেমস অ্যান্ডারসন ও অলিভার রবিনসনের।
চতুর্থ দিন সকালে ১৬ বলেই শেষ হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৫৪ রান নিয়ে খেলতে নামা ইংল্যান্ডের ইনিংস। দিনের দ্বিতীয় বলে অলিভার রবিনসনকে ফেরানো কাগিসো রাবাদা নিজের পরের ওভারে বোল্ড করে দেন জ্যাক লিচকে। বেন ফোকসকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দেওয়ার সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মার্কো ইয়ানসেন। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩৫ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। তার আগের সেরা ছিল ৩১ রানে চারটি।
প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে রাখার স্বস্তি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন সারেল এরউইয়া ও ডিন এলগার। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৫৮ রান। তবে সে স্বস্তি উড়ে যেতে সময় লাগেনি। আক্রমণে এসেই জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন স্টোকস। সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া ফুল লেংথ বলে প্রথম স্লিপে ধরা পড়েন এরউইয়া (৩ চারে ২৬)। এরপর অধিনায়ক এলগারও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।
লাঞ্চের পর তৃতীয় ওভারেই তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন ব্রড। রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন ৬ চারে ৩৬ রান করা ব্যাটসম্যান। রিপ্লেতে দেখা যায় বল বেরিয়ে যেত লেগ স্টাম্প না ছুঁয়ে। এর সুবাদে অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলিং গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রার ৫৬৩ উইকেট ছাড়িয়ে যান ব্রড। সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি পেসারের তালিকায় শীর্ষে থাকা অ্যান্ডারসনের পর তিনি, সব মিলিয়ে পঞ্চম। ব্রডের এখন মোট উইকেট ৫৬৬টি।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই অঙ্ক ছুঁলেও দলকে টানতে পারেননি কিগান পিটারসেন, খায়া জন্ডো, ভিয়ান মুল্ডার, কাইল ভেরেইনা, কেশভ মহারাজ। অ্যান্ডারসনের বলে চতুর্থ স্লিপে ক্যাচ দেন পিটারসেন। রায়ান রিকেলটনকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান ব্রড। মুল্ডারের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন রবিনসন। জন্ডোও এই পেসারের শিকার। দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ছাড়া ২০ রানও আসেনি আর কারো ব্যাট থেকে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলটির ইনিংসে পঞ্চম ছোঁয়া জুটি ছিল কেবল ওই শুরুতেই।
জবাব দিতে নামা ইংল্যান্ড শিবিরে প্রথম বলেই আঘাত হানতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু রাবাদার বলে লিসের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি চতুর্থ স্লিপে থাকা ইয়ানসেন। এরপর আর তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন ক্রলি। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন তিনি। ৩৬ বলে ৯ চারে এই ওপেনার পা রাখেন ফিফটিতে। জয়ের বন্দরে যখন পা রাখার খুব কাছে ইংল্যান্ড, তখনই বাধা হয়ে আসে আলোকস্বল্পতা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১১৮
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৬.২ ওভারে ১৫৮ (আগের দিন ১৫৪/৭) (ফোকস ১৪, ব্রড ৬, রবিনসন ৩, লিচ ০, অ্যান্ডারসন ০*; রাবাদা ১৩-১-৮১-৪, ইয়ানসেন ১২.২-২-৩৫-৫, মুল্ডার ২-০-১১-০, নরকিয়া ৯-০-২৯-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৫৬.২ ওভারে ১৬৯ (এরইউয়া ২৫, এলগার ৩৬, পিটারসেন ২৩, রিকেলটন ৮, জন্ডো ১৬, মুল্ডার ১৪, ভেরেইনা ১২, ইয়ানসেন ৪, রাবাদা ০, মহারাজ ১৮, নরকিয়া ০*; অ্যান্ডারসন ১৫.২-৪-৩৭-২, রবিনসন ১৫-৫-৪০-২, ব্রড ১৩-২-৪৫-৩, স্টোকস ১৩-২-৩৯-৩)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩০) ১৭ ওভারে ৯৭/০ (লিস ৩২*, ক্রলি ৫৭*; রাবাদা ৮-১-৪১-০, ইয়ানসেন ৫-০-২৪-০, নরকিয়া ৪-০-২৭-০)
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ