বিষন্নতার এই গল্পটা নিশ্চয়ই কারো ভালো লাগেনি আজ। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের টাইগারদের গল্পটা আজ অন্যরকমও হতে পারতো। বেদনার গাঁথাকাব্য জয়ের উপাখ্যান হতে পারতো কেবল একটু মনোবল আর খানিকটা চেষ্টা থাকলেই।
খেলার প্রথমাংশে হতাশ করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। নামের ভারে দলে জায়গা পেলেও কাজের ধার এখন তার নাই বললেই চলে আজকাল। ৪ ওভার বল করে ৪৮ রান দিয়েছেন একসময়ে কাটার মাস্টার হিসেবে ঝড় তোলা মুস্তাফিজ। সাথে কোনো উইকেটও পাননি। ফিজের সাথেই যেনো তাল মেলাতে চেয়েছেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ৪ ওভার বল করে তিনিও দিয়েছেন ৪২ রান, অবশ্য একটা উইকেট পেয়েছেন হাসান।
তবে পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার মেহেদী মিরাজ ছিলেন একেবারে ঠিকঠাক। প্রতিপক্ষকে তারা রীতিমতো চাপে রেখেছেন। চার ওভার বল করে তাসকিন দিয়েছেন ২৫ রান, নিয়েছেন দুই উইকেট। মিরাজ ২ ওভার বল করে দিয়েছেন ১২ রান, নিয়েছেন ১ উইকেট।
নাসুম আহমেদ ছিলেন আরও কিপ্টে। ৪ ওভার বল করে দিয়েছেন মাত্র ২২ রান। উইকেট নিয়েছেন একটি। মোসাদ্দেকও মন্দ নয়।
চার বোলার ভালো করায় মোস্তাফিজ ও হাসান মাহমুদের ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আটকে রাখতে পেরেছিল ১৭০-এর নীচেই। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান থামে ১৬৭ রানে।
মানে, টার্গেট ১৬৮! খুব বেশি নয় কিন্তু। ২০ ওভারে ১৬০ মানে ওভার প্রতি ৮ করে রান তুললেই বাকিটা কাভার হয়ে যেত। আধুনিক টি-টোয়েন্টি এটা যে কোনো দলের জন্যই সহজ লক্ষ্য।
তবে সহজ লক্ষ্যটাকেই কঠিন করা বাংলাদেশের কাজ। এটাই যেনো টাইগারদের ‘টি-টোয়েন্টি ব্রান্ড।’ মেহেদী মিরাজ ও সাব্বির রহমান ওপেনিং জুটিতে করলেন ২৫ রান। বল খরচ করলেন ২৬টা। পাওয়ার প্লের সময়ে যেটা মোটেও টি-টোয়েন্টি সুলভ খেলা নয়। কারণ, ওভার প্রতি রান লাগবে আটের একটু বেশি। দুই ওপেনার যদি ৮ ওভারে দলকে ৫০ রানও এনে দিতে পারতেন। মানে তারা ওভার প্রতি ৬ রান করে তুলেও উইকেট বাঁচিয়ে রাখতে পারলে লিটন দাস ও আফিফের জন্য পরের কাজটা সহজ হয়ে যেত।
মিরাজরা ৫০ রান তুললে, লিটন-আফিফ দুজনে করেছিলেন ৬০ রান। সবমিলিয়ে টপ অর্ডারেই হয়ে যেত ১১০ রান। সাথে লিটনরা আরও হাত খুলে খেলতে পারতেন। শেষে ইয়াসির রাব্বির ৪২ রান মিলে ১৫২ রানের পর টাইগারদের ১৬৮ রানে পৌঁছাতে কোনো বেগই পেতে হতো না।
পাকিস্তান যে বল খুব ভালো করেনি। হারিস রওফ ও মোহাম্মদ নওয়াজদের খেলা যে অসাধ্য ছিল না, লিটন আফিফ আর রাব্বি তা প্রমাণ করেছেন।
কিন্তু অবাক করার বিষয় তারপরও বাংলাদেশ ২১ রানে হেরেছে! এবার প্রশ্ন সহজ সমীকরণে বাংলাদেশ হারলো কেনো? উত্তরটা খুব কঠিনও নয়। আসলে মেন্টাল গেমে বাংলাদেশ হেরে গেছে। প্রথমত, শুরু থেকেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান না থাকায় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগেছে বাংলাদেশ। তাদের কাছে হয়তো ছিল না কোনো প্রোপার গেম প্লান। যে কারণে সংবাদ সম্মেলনেও কোন টাইগার ক্রিকেটার শক্ত করে বলতে পারেননি যে, তারা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবেন। মেহেদী মিরাজ থেকে সহঅধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বারবার বলেছেন, রেজাল্ট তাদের হাতে নেই কিংবা রেজাল্ট নিয়ে তারা ভাবছেন না। আর সোহানও জানেন, তারও নেতৃত্বের বেলায় খুব একটা জোর নেই। কারণ দলটা তো ‘সাকিব ভাইয়ের’।
সবমিলিয়ে মাঠে নামার আগেই টাইগারদের গোল ঠিক করা ছিল যে, ‘তারা পাকিস্তানের কাছে হারবেনই, পাকিস্তানকে তারা হারাতে পারবেন না, অথবা পাকিস্তান তাদের কাছে হারতে পারে না!'
অথচ টাইগাররা যদি পাকিস্তানের এশিয়া কাপ ও ইংল্যান্ড সিরিজ বিশ্লেষণ করেও মাঠে নামতো, তবে দেখা যেত যে ‘এক রিজওয়ানকে কাবু করতে পারলেই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন ধরাশায়ী।’ কিন্তু আদতে তেমন কিছু করার কথা মনে হয় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের কারও মাথায়ই আসেনি। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও হয়তো এই বিষয়ক ডিরেকশন দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। সাথে শ্রীধরন শ্রীরামও কনসাল্টেন্সিতে মুন্সিয়ানা দেখাতে পারছেন না। কারণ, আজকের ম্যাচ জেতার মতো যথেষ্ট রিসোর্স বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে ছিল কিন্তু সঠিক নির্দেশনার অভাবে ঠিক জায়গায় ঠিক ব্যাটারকে কাজে লাগানো যায়নি, খেলাটা যারা দেখেছেন নিশ্চয়ই এমন উপলব্ধি তাদেরও।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল