বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী জিওফ্রি হিন্টন। তার মতে, বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এআইয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হলেও, প্রকাশ্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছে না।
সম্প্রতি ‘ওয়ান ডিসিশন’ নামের একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্টন বলেন, এখনকার এআই এমন গতিতে এবং জটিলতায় বিকশিত হচ্ছে, যা বিজ্ঞানীদের ধারণারও বাইরে। অনেক ক্ষেত্রেই গবেষকরা বুঝতেই পারছেন না—এআই মডেলগুলো কীভাবে শিখছে বা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
হিন্টন আরও জানান, তিনি যদি আরও আগে সম্ভাব্য বিপদের বিষয়টি ভেবে দেখতেন, তবে হয়তো আগাম প্রস্তুতির সুযোগ থাকত। আগে বিষয়গুলো যতটা দূরের মনে হয়েছিল, এখন তা অনেক কাছের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।
২০২৩ সালে দীর্ঘদিনের কর্মজীবনের ইতি টেনে গুগল ছাড়েন হিন্টন। তবে গুগলের আগ্রাসী এআই কৌশলের বিরোধিতায় প্রতিষ্ঠানটি ছেড়েছেন—এমন ব্যাখ্যাকে তিনি নাকচ করে বলেন, বয়সজনিত কারণে (৭৫ বছর) কাজ চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। যদিও তিনি স্বীকার করেন, প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় খোলাখুলি সব কথা বলা কঠিন ছিল।
হিন্টন ব্যতিক্রম হিসেবে ডেমিস হাসাবিসের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডেমিস শুধু প্রযুক্তি নিয়েই কাজ করছেন না, বরং এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন এবং তা মোকাবিলায় বাস্তব পদক্ষেপ নিতে চাইছেন। ডেমিস ২০১৪ সালে গুগলের অধীনস্থ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা হন এবং বর্তমানে গুগলের এআই গবেষণা শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ডেমিস হাসাবিসও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতিতে আশাবাদী হলেও প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন। সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো—যদি এ প্রযুক্তি ভুল মানুষের হাতে পড়ে, তাহলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তার মতে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—এআই যেন শুধু সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষের হাতেই থাকে।
বিশ্বজুড়ে এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকিগুলোও যে বাস্তব, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিজ্ঞানীদের বক্তব্যে। এখন প্রয়োজন, এই প্রযুক্তির ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা এবং আগাম ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল