অর্থ পাচারের দুই মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মেহের নিগার সূচনা গতকাল এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউশন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, এ দুজনের আইনজীবী বদিউজ্জামান তফাদার ও মো. মাহবুবুল হক জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত নাকচ করে দেন। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৩০০ কোটি টাকা আত্দসাতের পর বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ দুজনসহ মোট ২২ কর্মকর্তা আসামি। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ও ট্রি প্লান্টেশন প্রকল্পের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ পাচার করা হয়। দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি দায়ের করেন। মোহাম্মদ হোসেন ও রফিকুল আমীন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মোজাহার আলী সরদারের করা এজাহারে বলা হয়, গাছ লাগানো ও স্ট্যাম্প বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেড দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি গাছ লাগিয়ে ২৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করে, বাকি দুই হাজার ৩৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সংগ্রহ করে গাছ না লাগিয়েই। ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ চুক্তি অনুযায়ী ট্রি প্লান্টেশনের কমিশন বাবদ এক হাজার ৩৮৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪০ টাকা সরিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্তরা। ভুয়া খরচ দেখানো হয়েছে ২১৪ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। ট্রি প্লান্টেশন থেকে কোনো ধরনের লাভ না হওয়া সত্ত্বেও লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকা, যার পুরোটাই পরিচালকদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে গেছে। আর ট্রি প্লান্টেশনের নামে ব্যাংকে রয়েছে মাত্র চার কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তৌফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের হিসাব থেকে ২৭০ কোটি ৫২ লাখ ৪২ হাজার ৮২৪ টাকা ঋণ হিসেবে ১৪টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডে ৮৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখানো হলেও বাস্তবে ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫ টাকা বিনিয়োগের দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইভাবে কোনো লাভ না হওয়া সত্ত্বেও ডায়মন্ড বিল্ডার্স থেকে ৬৮ কোটি ৮৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৭ টাকা লভ্যাংশ তুলে নিয়েছেন পরিচালকরা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অনিয়ম করে ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মোট ১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা লভ্যাংশ নিয়েছেন তারা। এ ছাড়া জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৬টি শেয়ার সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা থাকলেও ইস্যু করা হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৬৫টি। বাকি ১১ লাখ ৭১ লাখ ১৮৬টি শেয়ার ইস্যু না করে জনগণের অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের ব্যাংক হিসাবে ৫৬ লাখ টাকা ও নগদ তহবিল মিলিয়ে এক কোটির কিছু বেশি টাকা আছে। বাকি টাকা সরিয়ে ফেলেছেন তারা।