ঢাকার ৪০০ বছরের ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘ঢাকা গেট’ সংস্কার হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে আবারও নান্দনিক রূপে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পাশে সাধারণ মানুষের বসার জায়গাও থাকবে সেখানে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর পেরিয়ে টিএসসি যেতে চোখে পড়বে মোঘল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য ‘ঢাকা গেট’। তৎকালীন বাংলার সুবেদার মীর জুমলা ঢাকার নিরাপত্তার জন্য এই গেট তৈরি করেন। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে আবারও নান্দনিক রূপে সংস্কার করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ২৪ মে সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গেট অংশে দেখা যায়, গেটের তিনটি অংশের একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে সড়ক বিভাজকের ওপর এবং অন্য অংশটি রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে। আর সংস্কারকর্মীরা ব্যস্ত তাদের কাজে। সংস্কার কাজ শেষে গেটে পর্যাপ্ত লাইটিং করা হবে। পাশাপাশি গেটের আশপাশে মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও সংস্কার পরবর্তী দেখাশোনার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী রাখা হবে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা গেটের সংস্কার কাজ শেষ হবে। সংস্কার কাজে খরচ পড়ছে ৭১ লাখ টাকা। সংস্কার কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহনাফ ট্রেডিং।
এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষের তথ্য অনুযায়ী, ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ‘ঢাকা গেট’ নির্মাণ করেন মীর জুমলা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে বাংলার সুবাদার (মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক) ছিলেন মীর জুমলা। বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশে ব্যবহার হতো এ তোরণ। সে সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনো ‘ময়মনসিংহ গেট’, কখনো ‘ঢাকা গেট’ এবং অনেক পরে নাম হয় ‘রমনা গেট’। রমনায় প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো বলে সাধারণ মানুষের কাছে রমনা গেট নামেই পরিচিতি পায়।বহু বছরের অযত্ন-অবহেলায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে এর নান্দনিকতা। মুছে যেতে থাকে এর শেষ চিহ্নটুকুও। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক স্থপতি ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দল এর সংস্কারের জন্য নতুন একটি নকশা তৈরি করেছেন। এই নকশার আদলে এই স্থাপনার সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
ড. আবু সাঈদ বলেন, যদিও ‘ঢাকা গেট’কে মীর জুমলার গেট বলা হয়ে থাকে কিন্তু এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডয়লির সময় এই গেট তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ মেলে। এই গেটের এখন তিনটি অংশ দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু শুরুতে এমনটি ছিল না। শুরুতে রাস্তাটি এক লেনের হওয়ায় গেটের দুটি অংশ ছিল। পাকিস্তান আমলে ৬০-এর দশকে রাস্তাটি যখন দুই লেন করা হয় তখন এর একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়। তিন নেতার মাজারের অংশটি নতুন করে তৈরি করা হয়। দুই রাস্তার মাঝের পিলারটি সেই ভাঙা অংশেরই একটি অংশ। তিনি আরও বলেন, আদি যে চুন-সুরকির প্লাস্টার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল সেই একই উপকরণ দিয়েই আমরা এটি সংস্কার করছি। আদি ডয়লির অংশটা থাকবে, ৬০ দশকের অংশটাও থাকবে। ওসমানী উদ্যান থেকে মীর জুমলার কামানটিও নতুন করে এনে স্থাপন করা হবে।
ঐতিহাসিক এই গেটটির সংস্কারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র জানান, ‘দীর্ঘদিন পরে হলেও এই প্রথম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঐতিহ্যের একটি স্থাপনার সংস্কার শুরু করেছে। এ ছাড়া আমরা লালকুঠিতেও সংস্কার শুরু করেছি। সুতরাং ধাপে-ধাপে, পর্যায়ক্রমে আমাদের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে সংস্কার, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করব। যাতে বহির্বিশ্বের পর্যটকরা এসে ঢাকাকে বুঝতে পারে, জানতে পারে এবং শিখতে পারে।