বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

চোখের পলকে ধ্বংসস্তূপ বৈরুত

তানভীর আহমেদ

চোখের পলকে ধ্বংসস্তূপ বৈরুত

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিধ্বংসী বিস্ফোরণে মৃত্যুর মিছিল চলছে। হতাহত কয়েক হাজার পেরিয়ে গেছে। তীব্র শব্দে রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকায় কম্পন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। দুটি বিস্ফোরণে পুরো এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছোট এক বিস্ফোরণের পর বৈরুত বন্দরের পাশের একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত। এর কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় বিস্ফোরণে মুহূর্তে আশপাশে কয়েক ডজন ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা ধসে যায়। এই বিধ্বংসী বিস্ফোরণে গোটা এলাকার আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণে বাড়িঘর এমনভাবে কেঁপে উঠেছিল যে, স্থানীয়রা ভাবছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। মানুষকে চিৎকার ও ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙে অনেকে আহত হন। বিস্ফোরণের পর দেখা যায়, রাস্তায় অসংখ্য গ্লাস পড়ে আছে। কিছু গাড়ি উল্টে গেছে। গাছপালা পুড়ে গেছে। রাস্তায় লেগে আছে রক্তের দাগ। বিস্ফোরণের পর আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় বৈরুতের হাসপাতালগুলোকে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত সংকট দেখা দেয়। বৈরুতের গভর্নর মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রথম বিস্ফোরণের পর আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দ্বিতীয় বিস্ফোরণে নিখোঁজ হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় এক নিমিষে যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গোটা এলাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি, জানালা। রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় রাস্তায়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই ভয়াবহ ছিল যে, বহুদূর পর্যন্ত শোনা যায় সেই শব্দ। আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ। আকাশ থেকেও চলে আগুন নেভানোর কাজ। স্থানীয় লোকজন বিস্ফোরণের ধরন পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটার মতো ছিল বলে মন্তব্য করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়িও ভেঙে চুরমার হয় বিস্ফোরণে। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। কী করে এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটল তার কারণ অনুসন্ধানের পর লেবাননের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান বলেছেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। পরিকল্পিতভাবে এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ ছিল তীব্র ও কান ফাটানো।

ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ধরন কেমন ছিল তা আঁচ করা যায় জার্মানির জিওসায়েন্স সেন্টার-জিএফজেডের তথ্যে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বৈরুতের বিস্ফোরক গুদামের ওই বিস্ফোরণে ৩ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। আলজাজিরা জানায়, ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণ অনুভূত হয় বৈরুত থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরের অপর পাড়ের সাইপ্রাসেও। ঘটনাস্থলের ১০ কিলোমিটার দূরের বাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বন্দরের একটি গুদামে ছয় বছর ধরে মজুদ রাখা ২ হাজার ৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই লেবাননে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর