সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ধনীদের শহর

ধনীদের শহর

বিশ্বের অর্থনীতির তথ্য থেকে বোঝা যায়, গোটা বিশ্বে মাত্র কিছু সংখ্যক ধনী ব্যক্তি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আগের চেয়ে সমৃদ্ধিশালী করেছেন। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ২ হাজার ৯৫ জন ধনকুবেরের ৪০ শতাংশের বেশি ধনী ব্যক্তি বসবাস করেন মাত্র ১০টি শহরে।  বিশ্বের যেসব শহরে ধনী ব্যক্তিরা বসবাস করেন পাঠকদের জন্য রইল সেই তথ্য...

 

বেইজিং [১০০ ধনকুবের]

চীনের রাজধানী বেইজিং; ১০০ ধনকুবেরের আবাসস্থল। যাদের মোট সম্পদ ৪৮৪.৩ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বসের বার্ষিক তালিকায়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধনকুবের এখন বেইজিংয়ে বসবাস করেন। এর আগে ফোর্বসের বার্ষিক তালিকায় শহরটি ছিল চতুর্থ; তবে মাত্র বছরখানেকের ব্যবধানে শহরটি উঠে আসে তালিকার শীর্ষে। করোনা মহামারির আপৎকালীন বেইজিংয়ের ধনকুবেরের তালিকায় আরও ৩৩ জনের নাম যোগ হওয়ায় শহরটিতে এখন ১০০ জন ধনকুবের আছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে মহামারির কারণে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, সেই অবস্থার মধ্যেও আশার আলো দেখিয়েছে চীন। তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।  পাশাপাশি দেশটির প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উত্থান এবং শেয়ারবাজার বেইজিংকে এই শীর্ষ অবস্থান এনে দিয়েছে।

 

হংকং [৮০ বিলিয়নিয়ার]

হংকং। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বন্দর। বিশ্বের ধনী শহরের তালিকায় শহরটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কেননা, এখানে ৮০ জন ধনকুবেরের বসবাস। এ বছর শহরটিতে নতুন নয়জন ধনকুবের যোগ হয়েছেন। দেশটির হাউসিং প্রকল্পে (রিয়েল এস্টেট) মন্দা এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও হংকং সম্পদের পরিমাণ ৪৪৮.৪ বিলিয়ন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং ৮০ ধনকুবেরের আবাসস্থল। শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন লি কা-শিং। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারী এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী।  তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার।

 

মস্কো [৭৯ বিলিয়নিয়ার]

বিশ্বের ধনী শহরের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো। এখানে নতুন নয়জন বিলিয়নিয়ার যোগ হয়েছে। ফলে তালিকায় ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা হয়েছে ৭৯ জন। করোনা মহামারির কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি গুরুতর মন্দার সম্মুখীন হয়। ফলে ২০২০ সালে দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়। করোনা মহামারির পর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে আমেরিকা এবং তাদের বন্ধুরাষ্ট্র পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে সাময়িক বাধা সৃষ্টি করলেও ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে আঘাত হানতে পারেনি। যাই হোক, নানাবিধ পণ্য এবং অপরিশোধিত তেলের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির কারণে মস্কো শহরের ধনীদের জন্য গেল বছর একটি ভালো বছর ছিল।  তাদের মোট সম্পদের মূল্য ৪২০.৬ বিলিয়ন যা আগের বছরের তুলনায় ৭২ বিলিয়ন ডলার বেশি।

 

নিউইয়র্ক [৯৯ বিলিয়নিয়ার]

টানা সাত বছর ধনীর তালিকায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখলেও এবার অল্পের জন্য বেইজিংয়ের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শহর নিউইয়র্ক। শহরটিতে নতুন করে সাতজন বিলিয়নিয়ার যোগ হয়েছেন। বর্তমানে শহরটিতে ৯৯ জন ধনাঢ্য ব্যক্তির বসবাস। যাদের মোট সম্পদ ৫৬০.৫ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বস জানিয়েছে, ধনকুবেরের সংখ্যায় বেইজিং এগিয়ে থাকলেও সম্পদের পরিমাণে এগিয়ে আছে নিউইয়র্ক। ব্লুমবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ এই শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, যার মোট সম্পদ ৫৯ বিলিয়নেরও বেশি। ধনাঢ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে না থাকলেও সম্পদের হিসাবে নিউইয়র্ক সিটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শহর। বেইজিংয়ের মোট সম্পদের তুলনায় নিউইয়র্কের সম্পদ ৮০ বিলিয়ন ডলার বেশি।  ‘দ্য বিগ আপেল’ নামের শহরটিতে এখন ২৫ হাজারের বেশি ধনাঢ্য ব্যক্তি বা ধনকুবেরের আবাসস্থল।

 

শেনজেন [৬৮ বিলিয়নিয়ার]

চীনের ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে খ্যাত শেনজেন শহরে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। একেবারে হংকং লাগোয়া। এক সময় শহরটি মৎস্যজীবীদের মাছ শিকারি অঞ্চল ছিল। বর্তমানে বিশ্বখ্যাত বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে। ধনকুবেরদের শহরের তালিকায় পঞ্চম স্থান দখল করে আছে চীনের অন্যতম নগরী শেনজেন। যেখানে ৬৮ জন ধনাঢ্য ব্যক্তি বসবাস করেন। এ বছর শহরটিতে নতুন করে আরও ২৪ জন ধনকুবের বসবাস শুরু করেছেন। এখানে বসবাসরত ধনী ব্যক্তিদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪১৫.৩ বিলিয়ন ডলার। শুধু তাই নয়, শেনজেনের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা, ইন্টারনেট মিডিয়া টাইকুন মা হুয়াতেংও তার সম্পদে ২৮ বিলিয়ন ডলার যোগ করেন। তার সম্পদের পরিমাণ ৬৫.৮ বিলিয়ন ডলার।

 

লন্ডন [৬৩ বিলিয়নিয়ার]

লন্ডন সিটি, যুক্তরাজ্যের রাজধানী। যা ৬৩ ধনকুবেরের আবাসস্থল। যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩১৬ বিলিয়ন ডলার। মহামারিকালে দীর্ঘ লকডাউনে স্থবির হয়ে থাকা লন্ডন শহরটি আছে তালিকায় ৭ নম্বরে। তালিকায় ৬ নম্বর অবস্থানে রয়েছে চীনের বাণিজ্য অঞ্চল সাংহাই। ব্রেক্সিট এবং করোনা মহামারির কারণে চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক অবস্থার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও এ বছর নতুন করে আরও সাতজন বিলিয়নিয়ারকে স্বাগতম জানিয়েছে শহরটি। এমনকি এ বছর লন্ডনের ধনী বাসিন্দাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনে জন্মগ্রহণকারী তেল এবং মিডিয়া ম্যাগনেট লিওনার্ড ব্লাভাতনিক তার মোট সম্পদের সঙ্গে ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছেন, যা এখন ৩২ বিলিয়ন ডলার। জোসে নেভেস, অনলাইন বিলাসবহুল ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতা ফারফেচ-এর প্রতিষ্ঠাতা এই নবাগতের কারণেও ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর