বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কার কত সম্পদ

তানভীর আহমেদ

কার কত সম্পদ

গৌতম আদানি

স্কুল থেকে ঝরে পড়া গৌতম আদানি এখন ভারতের শীর্ষ ধনকুবের

কয়েক মাসের মধ্যে তিনিই হতে যাচ্ছেন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। বছর না ঘুরতেই ২০০ বিলিয়ন ডলার হারানো ইলন মাস্ক যেখানে সম্পদ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে গৌতম আদানির সম্পদ বাড়ছে হু হু করে। বিশ্বমন্দার ছোঁয়া সেভাবে ছুঁতে পারেনি আদানি গোষ্ঠীর প্রধানকে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে একমাত্র গৌতম আদানিরই গত বছর মোট সম্পদের ভ্যালুয়েশন বেড়েছে। মাত্র এক বছরেই তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার...

এক সময় স্কুল থেকে ঝরে পড়া গৌতম আদানি এখন ভারতের শীর্ষ ধনকুবের ও এশিয়ার শীর্ষ ধনীদের একজন। তাঁর সম্পদ প্রায় ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আদানি শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাসের মধ্যে তিনিই হতে যাচ্ছেন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। বছর না ঘুরতেই ২০০ বিলিয়ন ডলার হারানো ইলন মাস্ক যেখানে সম্পদ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে গৌতম আদানির সম্পদ বাড়ছে হু হু করে। বিশ্বমন্দার ছোঁয়া সেভাবে ছুঁতে পারেনি আদানি গোষ্ঠীর প্রধানকে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে একমাত্র গৌতম আদানিরই গত বছর মোট সম্পদের ভ্যালুয়েশন বেড়েছে। মাত্র এক বছরেই তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে তিনি বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি।

গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সাম্রাজ্য এখন আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। ভারতের অভিজাত এই শিল্পগোষ্ঠীর অধীনে রয়েছে মোট সাতটি কোম্পানি। বন্দর ব্যবস্থাপনা, কয়লা উৎপাদন এবং কয়লার ব্যবসা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন, গ্যাস সরবরাহ, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সরঞ্জাম উৎপাদন, বিমানবন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহন, আবাসন, ভোজ্যতেল, খাদ্যপণ্য এ রকম নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির। এসব ব্যবসা শুধু ভারতে নয়, আদানি গ্রুপ বিশ্বব্যাপী তার শিল্পসম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।

ভারতের গুজরাটে ১৯৬২ সালে জন্ম নেন গৌতম আদানি। এখন তাঁর বয়স ৬০ বছর। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করেননি। কৈশোরে তিনি মুম্বাই চলে আসেন। এখানে হীরা বাছাই ও হীরের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁদের কাপড়ের পারিবারিক ব্যবসা ছিল। কিন্তু সেই ব্যবসায় যোগ না দিয়ে হীরার ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৮১ সালের দিকে বড় ভাইয়ের প্যাকেজিংয়ের কারখানায় অপারেশন দেখাশোনার জন্য ডাক পড়ে তাঁর। সেখানে তিনি পিভিসি ব্যবসার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। আজকের আদানি গ্রুপের আন্তর্জাতিক বাজারে পিভিসি ব্যবসার সম্প্রসারণ সেই থেকেই শুরু। ১৯৮৫ সালের দিকে তিনি বিদেশ থেকে পলিমার এনে ভারতে ছোট পরিসরের কারখানাগুলোয় সরবরাহ শুরু করেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে আদানি এক্সপোর্টস মাথা তুলে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের দিকে গৌতম আদানি ব্যবসার সম্প্রসারণ শুরু করেন। মেটাল, কৃষি ও টেক্সটাইলে তিনি বিনিয়োগ করেন। ১৯৯৪ সালে গুজরাটের মুন্দ্রা পোর্টের ব্যবস্থাপনার চুক্তি করে আদানি গ্রুপ। এভাবেই একের পর এক ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশেষ করে গ্রিন এনার্জিতে যোগ দিচ্ছেন আদানি। তিনি দেশটির পশ্চিম উপকূলীয় শহর মুন্দ্রাতে দেশের বৃহত্তম ও সাতটি বিমানবন্দরসহ ১৩টি বন্দর পরিচালনা করেন। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মধ্যে ভারতের দীর্ঘতম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছেন আদানি। ছয়টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আদানি এখন ভারতের বেসরকারি খাতে বৃহত্তম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি দেশে গ্রিন হাইড্রোজেনে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও ৮ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় তিনি কয়লাখনি কিনেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে কারমাইকেল কোল মাইন নামের একটি কয়লাখনির মালিক আদানি গ্রুপ। হলসিম লিমিটেডকে কিনে নিয়েছেন আদানি। এর ফলে এক ধাক্কায় ভারতের সিমেন্ট সেক্টরের বিশাল বাজার দখল করে নেয় আদানি শিল্পগোষ্ঠী। ইস্পাত এবং তামার কারখানার বিষয়ে আদানি গ্রুপের আগ্রহ জানান দিচ্ছে, এসব ব্যবসাতেও তিনি বড় ভূমিকা রাখতে চাইছেন। আদানি গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান গত আগস্টে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির ২৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। ভারতের ২২ রাজ্যে ব্যবসা রয়েছে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর।

দুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন এই শীর্ষ ধনকুবের। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে আহমেদাবাদে বন্দুক ঠেকিয়ে আদানি ও তাঁর সহযোগীকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর গৌতম আদানি বিলাসবহুল তাজমহল হোটেলে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। সেই রাতে ১০ বন্দুকধারী হামলা চালিয়েছিল সেই হোটেলে। আদানি গ্রুপ যে পরিমাণ অর্থ লাভ করে, তার ৩ শতাংশ আয় জনহিতকর কাজে ব্যয় করে।

 

মুকেশ আম্বানি

যেভাবে এশিয়ার শীর্ষ ধনী হয়ে উঠেছিলেন মুকেশ আম্বানি

মুকেশ তাঁর বাবার কোম্পানিতে সুতা উৎপাদনের ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেন। পরে রিলায়েন্স পেট্রোকেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম পরিশুদ্ধকরণ, টেলিকমিউনিকেশন, বিনোদন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ইত্যাদি ব্যবসায় নিজেদের সম্প্রসারিত করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। মুকেশ আম্বানি ২০ বছরে রিলায়েন্সের মুনাফা বাড়িয়েছেন ২০ গুণ...

ভারতের শীর্ষ ধনীর মুকুট বহুদিন মুকেশ আম্বানির মাথায় ছিল। গত এক দশকে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। গৌতম আদানির কাছে শীর্ষস্থান হারালেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তিনি সব সময়ই শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন। এখন তাঁর সম্পদ ৯১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের নয় নম্বর ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক। একজন সফল ব্যবসায়ী যতটা কল্পনা করতে পারেন তার প্রায় পুরোটাই বাস্তবে করে দেখিয়েছেন তিনি। দেশের প্রধান সব ব্যবসায় তাঁর বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক আধিপত্য যে কাউকে বিস্মিত করবে। শুধু একক সম্পত্তির হিসাব দিয়ে মুকেশ আম্বানির অবস্থান বিবেচনা করলে ভুল হবে। ভারতের ধনকুবের এই ব্যবসায়ীর পরিবার ‘আম্বানি ফ্যামিলি’ নামে পরিচিত। সেই আম্বানি পরিবার বিশ্বের ছয় নম্বর ধনী পরিবার। ২০০২ সালে মুকেশ আম্বানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হন। এই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের স্বপ্ন দেখেছিলেন ধিরাজলাল হীরাচাঁদ আম্বানি। সবাই তাঁকে ধিরুভাই আম্বানি নামে চেনেন। জীবিকার খোঁজে ধিরুভাই চলে গেলেন এডেনে। সেখানে মাত্র ৩০০ রুপির বিনিময়ে পেট্রোল পাম্পে কাজ নিয়েছিলেন তিনি। ধিরু ভাইয়ের চার সন্তান। দুই ছেলে মুকেশ আম্বানি এবং অনিল আম্বানি, দুই মেয়ে নিনা কথারি এবং দিপ্তি সালগাকোর। ১৯৬২ সালে ধিরুভাই ভারতে ফিরে আসেন। প্রতিষ্ঠা করেন রিলায়েন্স কোম্পানি। প্রথম দিকে ইয়েমেন থেকে মসলা আমদানি করতেন। পরে তাঁরা সুতার ব্যবসা শুরু করেন। ধিরুভাই আম্বানির বড় ছেলে মুকেশ আম্বানি। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড থেকে এমবিএ করেন। ১৯৮০ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর বাবা তাঁকে দেশে ফিরতে বলেন এবং একটি পলেস্টার কারখানার দায়িত্ব দেন। মুকেশ তাঁর বাবার কোম্পানিতে সুতা উৎপাদনের ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেন। পরে রিলায়েন্স পেট্রোকেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম পরিশুদ্ধকরণ, টেলিকমিউনিকেশন, বিনোদন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ইত্যাদি ব্যবসায় নিজেদের সম্প্রসারিত করে। ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত রিলায়েন্স কোম্পানির ভিত মজবুত হয়ে উঠতে শুরু করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। ২০০২ সালে ধীরুভাইয়ের মৃত্যু হয়। সে সময় দুই ভাই মুকেশ ও অনিলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। শেষে তাঁদের মায়ের হস্তক্ষেপে মধ্যস্থতা হয়। মুকেশ এবং তাঁর ছোট ভাই অনিল যৌথভাবে রিলায়েন্সের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুকেশ আম্বানি চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে অনিল ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদে আসীন হন। এর ফলে অনিল রিলায়েন্সের টেলিকমিউনিকেশন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বিনোদনের মালিকানা পান। মুকেশ পান কোম্পানির তেল, টেক্সটাইল এবং সব শোধনাগারের ব্যবসা। পেট্রোকেমিকালের ব্যবসাকে পুঁজি করেই এগোতে থাকেন তিনি। বুঝতে পারেন, ভবিষ্যতে পেট্রোলের জোগান ও চাহিদা দুটিই কমে আসবে। পাশাপাশি শুরু করেন জিও রিলায়েন্স রিটেলের মতো ব্যবসাগুলো। সবুজ শক্তির খাতেও প্রবেশ করেছেন তিনি। ২০০৬ সালে চালু করেন রিলায়েন্স রিটেল। ২০১৬ সালে চালু হয় জিও। এর মাধ্যমে ভারতের টেলিকম, ইন্টারনেটের চিত্রটাই পালটে ফেলেন মুকেশ আম্বানি। শুধু যে মুকেশ আম্বানির নিজেরই সম্পদ বেড়েছে, তা কিন্তু নয়। একই হারে সম্পদ বেড়েছে তাঁর কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদেরও। গত দুই দশকে বিনিয়োগকারীদের মোট সম্পদ প্রায় ১৭.৪ লাখ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরুর দিকে মুকেশের ওপর ভরসা করে যাঁরা এই শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁরা এখন কোটি টাকার রিটার্ন পাচ্ছেন। ২০১৬-২১ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ সৃষ্টিকারী শেয়ার এটি। ৫ বছরে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার সম্পদ যোগ করেছে এই স্টক। তিনিই সংস্থার ব্যবসার ক্ষেত্রকে বাড়িয়ে প্রযুক্তি, ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত করেন। ২০১৬ সালে টেলিকমিউনিকেশনের দুনিয়ায় কার্যত বিপ্লব এনে দেয় জিও। শুধু জিও থেকেই এক বছরে ২৭ বিলিয়ন ডলার আয় করে দেখিয়েছেন আম্বানি। তাঁর সংস্থা পা রেখেছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে। ভারতের ফার্মাসিউিটিক্যালসেও বড় অবদান রাখছেন তিনি। রিলায়েন্স তাঁর হাতে আসার পর প্রায় ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। আর এই দুই দশকে সংস্থার আয় বেড়েছে ১৭ গুণ। ২০ বছরে মুনাফাও বেড়েছে ২০ গুণ।

 

রতন টাটা

নিজের নামে সম্পদ কম রতন টাটার দান করে দেন আয়ের অর্ধেকেরও বেশি

রতন টাটা ৬০ বছর ধরে ভারতে আলপিন থেকে অ্যারোপ্লেন- সব কিছুতেই  ব্যবসা ছড়িয়েছেন। তাঁর হাতেই ‘টাটা অ্যান্ড সন্স’ হয়ে ওঠে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ...

টাটা সাম্রাজ্যের বাদশাহ

এখন রতন টাটার বয়স ৮৫ বছর। টাটা গ্রুপ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে রতন টাটা নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১৭ সালে তিনি টাটা অ্যান্ড সন্স থেকে অবসর নেন। টাটা গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন জামশেদজি টাটা। শুরুতে ছিল স্টিলের ব্যবসা। দ্বিতীয় প্রজন্মে টাটা গ্রুপ হয়ে ওঠে টাটা অ্যান্ড সন্স। জেআরডি টাটা ব্যবসা আরও বিস্তৃত করেন। টাটা মোটরসের যাত্রা হয়। তৃতীয় প্রজন্মে টাটার ব্যবসা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেন রতন টাটা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান টাটা সন্স একটি ব্র্যান্ড হিসেবে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে  তোলে। টাটা সাম্রাজ্যের বাদশাহ হয়ে ওঠেন তিনি।

 

ছিলেন দত্তক পুত্র

রতন টাটার বাবা নাভাল টাটা আসলে ছিলেন রতনজি টাটা এবং নভজবাই টাটার দত্তক পুত্র। দত্তক নেওয়ার আগে পর্যন্ত নাভাল টাটা জে এন পেটিট পারসি অরফানেজে বড় হয়ে উঠেছিলেন। তার পরেই নাভালকে রতনজি ও নভজবাই টাটা দত্তক নিয়েছিলেন। অন্যদিকে রতন টাটার বয়স যখন মাত্র ১০ বছর তখনই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল তাঁর মা-বাবার। তখন থেকেই ঠাকুরমা নভজবাইয়ের কাছে বড় হয়ে ওঠেন রতন টাটা। মুম্বাই এবং সিমলায় কেটেছে রতন টাটার স্কুলজীবন। আমেরিকার নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল, কর্নেল ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি রতন টাটা। বিমান উড়ানের প্রতি বিশেষ আসক্তি রয়েছে রতন টাটার। ২০০৭ সালে এফ-১৬ ফ্যালকন ওড়ানো প্রথম ভারতীয় পাইলট ঘোষিত হন।

 

যেভাবে উত্থান তাঁর

মাত্র ২৫ বছর বয়সে টাটায় ক্যারিয়ার শুরু করেন রতন টাটা। ১৯৬২ সালে ভারতে ফিরে আসার আগে আমেরিকায় জোন্স অ্যান্ড এমন্স সংস্থাতেও কাজ করেন। ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন রতন টাটা। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম গাড়ি, টাটা ইন্ডিকা বাজারে আসে রতন টাটার হাত ধরেই। অটো এক্সপো এবং জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল মোটর শোয় জায়গা পায় টাটা ইন্ডিকা গাড়ি। রতন টাটা ৬০ বছর ধরে ভারতে আলপিন থেকে অ্যারোপ্লেন, সব কিছুতেই ব্যবসা ছড়িয়েছেন। টাটা গোষ্ঠী পরিচালনা করছে ৯৬টি কোম্পানি। সেখানে ৩০টি প্রতিষ্ঠান ‘পাবলিকলি লিস্টেড’ হিসেবে অবস্থান করছে। এ তালিকায় আছে টাটা স্টিল, টাটা  মোটরস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, টাটা পাওয়ারসহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। ভারতীয়রা বলেন, যে নুন তারা খান সেটাও আসে রতন টাটার প্রতিষ্ঠান থেকে। আসলেই তাই। রতন টাটার লবণের ব্যবসাও রয়েছে।

 

ট্রাস্টের হাতে বেশি সম্পদ

অনেকেই শুনে অবাক হবেন সম্পদের দিক থেকে তিনি ভারতের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় শুরুর দিকে থাকেন না। এর কারণ তিনি ব্যক্তিগত সম্পদ হাতে রাখেন না। দান করে দেন আয়ের অন্তত ৬৬ শতাংশ। অথচ টাটা গ্রুপের বিশাল সাম্রাজ্যের অর্থমূল্য ২০২১-২২ সালে ছিল ১২৮ বিলিয়ন ডলার। টাটা সন্সের প্রতি মাসে মোট আয়ের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি রুপি। এ সম্পদ টাটা পরিবারের নামে রয়েছে। একক সম্পদ হিসেবে রতন টাটার হাতে রয়েছে মোট ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। টাটা গ্রুপের লাভের একটি বড় অংশ সরাসরি চলে যায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজে। টাটা সন্সের ইক্যুইটির ৬৬ শতাংশ টাটা ট্রাস্টের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। টাটা অ্যান্ড সন্সের লভ্যাংশ সরাসরি ট্রাস্টের খাতে জমা হয়, আর সেখান থেকেই সব কর্মচারীর বেতন, বোনাসসহ লাখ লাখ মানুষের সেবায় খরচ হয়, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রি লেখাপড়া করানো থেকে বিনামূল্যে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা। আর সব থেকে বড় কথা হলো মানবকল্যাণের জন্য টাটা গ্রুপের এই বিপুল অনুদান কেবল ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়, তা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাতেও যায়। টাটা অ্যান্ড সন্সের বিভিন্ন খাতে মানবকল্যাণে অনুদানের পরিমাণটাও নেহাত কম নয়। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে টাটা গোষ্ঠী, যা কোনো আন্তর্জাতিক ডোনারের কাছ থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ অর্থ। হোম পিউরিফিকেশন সিস্টেমের জন্য টাটা ব্যয় করেছে ১ হাজার কোটি টাকা। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর টাটা গোষ্ঠীর বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা। টাটা গোষ্ঠী কর্মীদের আধুনিক পেনশন সিস্টেম, চিকিৎসাসেবা, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ আরও অনেক সুবিধা প্রদান করে বিনামূল্যে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর