রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বেঁচে থাকতে কদর মেলেনি উল্টো উপহাস নির্যাতনের শিকার তাঁরা

মৃত্যুর পর পেয়েছেন বিশ্বখ্যাতি

তানভীর আহমেদ

মৃত্যুর পর পেয়েছেন বিশ্বখ্যাতি

যুগান্তকারী গবেষণা করেছেন, কেউই মূল্যায়ন করেননি

  আলফ্রেড ভেগেনার, বিজ্ঞানী

খুব কম মানুষই চেনেন তাঁকে। নাম আলফ্রেড ভেগেনার। তিনি একজন জার্মান ভূতত্ত্ববিদ, আবহাওয়াবিদ ও মেরুবিষয়ক গবেষক। কিন্তু তিনি খুবই দুর্ভাগা যে, তাঁর অনেক গবেষণা মৃত্যুর পর স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি মহাদেশীয় প্রবাহের তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন। একটু সহজ করে বললে, তাঁর ‘ভাসমান ভূভাগ তত্ত্ব’ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। আর এই তত্ত্বের জন্যই তিনি পৃথিবীর বুকে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তাঁর আরও অনন্য অবদানের মধ্যে রয়েছে জেট স্ট্রিমের প্রবাহবিষয়ক আলোচনা, মেরু অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে করা গবেষণা, মেরু অঞ্চলের বরফের জমাটবদ্ধতা বিষয়ক গবেষণা প্রভৃতি। তাঁর কালজয়ী ‘ভাসমান ভূভাগ তত্ত্বে’ পরবর্তীতে ‘প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব’ দ্বারা আরও সুসংহত ও সুসংগঠিত হয়েছে। ১৯১২ সালে ভেগেনার এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। এই তত্ত্বের মূল ভাষ্য হচ্ছে, ‘মহাদেশগুলো একসময় পরস্পর সংযুক্ত ছিল এবং পরবর্তীতে তারা পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়।’ তত্ত্বটি  ১৯৬০-এর দশকে জনপ্রিয়তা পায়। অবশেষে এটি মূলধারার বিজ্ঞানের অংশ হয়ে ওঠে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, জীবিত অবস্থায় যথাযথ মূল্যায়ন পাননি আলফ্রেড ভেগেনার।

 

গৃহবন্দি করা হয় সেখানেই মৃত্যু

গ্যালিলিও গ্যালিলি, জ্যোতির্বিদ

আধুনিক বিজ্ঞান তাঁকে ইতিহাসের সেরা গণিতবিদ, পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক বলে স্বীকার করলেও বেঁচে থাকতে তাঁর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মেনে নিতে পারেনি সমাজ ও রাষ্ট্র। তিনি গ্যালিলিও গ্যালিলি। ইতালির গর্ব। পূর্ববর্তী বিজ্ঞানী টলেমি দাবি করেছিলেন, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। তবে তাতে একমত হতে পারেননি তিনি। কেননা তিনি গবেষণা করে যেসব তথ্য প্রকাশ করেন, তার সঙ্গে অ্যারিস্টটলের তত্ত্বের কোনো মিল ছিল না। নিজের উদ্ভাবিত টেলিস্কোপ নিয়ে পরীক্ষা শেষে গ্যালিলিও বললেন- না, সূর্য নয়, পৃথিবীই বরং সূর্যের চারদিকে ঘোরে। একই দাবি করেছিলেন কোপার্নিকাসও। গ্যালিলিও কোপার্নিকাসের মতো চার্চের রোষানলে পড়েন। শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় বিখ্যাত এই দার্শনিককে। তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়। বন্দিদশায়ই তাঁর মৃত্যু হয়। মূল্যায়ন দূরে থাক, মৃত্যুর ৩০০ বছর পরও তিনি চার্চের চোখে অপরাধীই ছিলেন। অথচ এখন তাঁর বন্দনা গোটা বিশ্বজুড়ে।

 

জীবদ্দশায় তাঁর সাহিত্য প্রশংসিত হয়নি

ফ্রানৎস কাফকা সাহিত্যিক

সাহিত্যপ্রেমীরা তাঁকে ভালো করেই চেনেন। তিনি ফ্রানৎস কাফকা। জার্মান ভাষায় অনবদ্য উপন্যাস ও ছোটগল্পের লেখক। তাঁর লেখনী বয়ে চলত দানিয়ুবের স্রোতের মতো। এক লেখা থেকে অন্য লেখায়। তবে দুর্ভাগ্য, জীবিত অবস্থায় মূল্যায়ন পাননি ফ্রানৎস কাফকা। তাঁর সাহিত্যকর্মের বৈচিত্র্য মোটেই প্রশংসিত হয়নি। উল্টো তাঁকে নিয়ে সমালোচনা, অর্ধসত্য ও অসত্য মিথের ছড়াছড়ি রয়েছে। কাফকা একজন আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিলেও লেখক হিসেবেই সময় ব্যয় করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা জনসম্মুখে আসেনি। নানা প্রতিকূলতা তাঁকে পর্যুদস্ত করেছে। প্রিয় বান্ধবী মিলেনার মৃত্যুর পরে অসুস্থতা বাড়ল কাফকার। শরীরজুড়ে রাজত্ব করছে যক্ষ্মা। আর সেই ব্যাধিতেই ধীরে ধীরে জমি ছেড়ে দেন তিনি। বিছানায় শায়িত ছিলেন জীবনের লম্বা সময়। কাফকা তাঁর মৃত্যুর পর ম্যাক্স ব্রডকে তাঁর সব লেখা পুড়িয়ে ফেলতে  অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ব্রড তা করেননি। কাফকার মৃত্যুর পর পাঠক, সমালোচকরা তাঁর ছোটগল্পের প্রশংসা করেন। আজ তাঁর লেখা এবং সাহিত্যের মূল্যায়ন হয় বিশ্বজুড়ে।

 

বিষপানে কার্যকর হয় সক্রেটিসের মৃত্যুদ-

সক্রেটিস, দার্শনিক

সক্রেটিস। একজন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক। তাঁকে যুক্তি ও মুক্তচিন্তার জনক বলতে দ্বিধা নেই। প্রাচীন এই গ্রিক দার্শনিকের বাণী শতাব্দী থেকে শতাব্দী মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। যদিও জীবদ্দশায় তাঁর পা-িত্য ও জ্ঞানের পরিসীমা উল্টো অপরাধের কাতারে নাম লেখায়। অভিযোগ ওঠে, তিনি প্রচলিত দেবতাদের উপেক্ষা করছেন। তাঁর ভাষণ, জ্ঞান যুবকদের নৈতিক চরিত্র কলুষিত করছে, তারা বিপথগামী হচ্ছে। কিছু ভক্ত জুটলেও তাঁর যুক্তি ও দর্শন মেনে নেয়নি সমাজব্যবস্থার বড় অংশ। যে কারণে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। এথেন্সের উন্মুক্ত ময়দানে ৫০০ বিচারকের সামনে তিনি ৬০ ভোটে পরাজিত হন। দোষী সাব্যস্ত হওয়া সক্রেটিসের মৃত্যুদ- হেমলক বিষপানের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। বিশবাসী এখন তাঁকে জ্ঞানী-গুণী, ন্যায়পরায়ণ বলে স্বীকার করেছেন। তাঁর দর্শন প্রশংসিত সর্বত্র। মনীষী সক্রেটিসের চিন্তা ও যুক্তি কালজয়ী, আজও তার দর্শন সবাইকে প্রভাবিত করছে।

 

চার্চের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন মারা হয় খুঁটির সঙ্গে বেঁধে

জিওর্দানো ব্রুনো, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ

তিনি জিওর্দানো ব্রুনো। জন্ম ১৫৪৮ সালে। তিনি ইতালির ডোমেনিকান খ্রিস্টান ভিক্ষু, দার্শনিক, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিষী ও কবি। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ব্রুনো পাদ্রি হিসেবে মনোনীত হন। তিনি মুক্তচিন্তার অধিকারী। তাঁর মুক্ত ও অনুসন্ধানী চিন্তা এবং সে যুগে গির্জা কর্তৃক বাজেয়াপ্ত বই পড়ার কারণে তিনি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস ও শাসক গোষ্ঠীর মুখোমুখি হন। জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি পালিয়ে বেড়ান। তিনি এই মহাবিশের মতো আরও মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছুই নয়- এই ধারণা পোষণ করায় চার্চের রোষানলে পড়েন। তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সবার সামনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয় তাঁকে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণ হয় তাঁর তত্ত্বই ঠিক। তাই তো তিনি এখন ইতিহাস কাঁপানো গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত।

 

জীবদ্দশায় ভ্যান গফের চিত্রকর্ম দেখেনি বিশ্ববাসী

ভিনসেন্ট ভ্যান গফ, চিত্রশিল্পী

দুনিয়া কাঁপানো চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গফ। বেঁচে থাকতে তাঁর চিত্রশিল্পের কোনো খোঁজই পায়নি বিশ্ব। তবে অনেকেই জানেন না যে, ভ্যান গফ চিত্রশিল্পীর ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছিলেন যখন তাঁর ২৮ বছর বয়স। জীবনে শুরুর দিকে পাদ্রির জীবন বেছে নিয়েছিলেন। ধর্মচর্চায় মন দিয়েছিলেন। দরিদ্রতা ও অসামাজিক বলে মানুষ তাঁকে এড়িয়ে চলত। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি পুরোদমে ছবি আঁকায় মন দেন। তাঁর আঁকা পেইন্টিংগুলোয় সূর্যের সোনালি আলো ও উজ্জ্বল রঙের বর্ণালি দেখা গেলেও তাঁর জীবন ছিল একেবারেই উল্টো। মানুষের কাছে হাসির পাত্র ছিলেন, দরিদ্র বলে অবজ্ঞার পাত্র হয়েছেন। যে কারণে আত্মহত্যা করে জীবনের ইতি টানেন। মৃত্যুর পর তাঁর আঁকা ৯০০ ছবি, ১ হাজার ১০০ ড্রইং ও স্কেচ উদ্ধার হয়। ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি পেরিয়ে পেইন্টিংগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

 

মৃত্যুর পর কোপার্নিকাসকে দেওয়া হয় বীরের মর্যাদা

নিকোলাস কোপার্নিকাস, জ্যোতির্বিদ

এক সময় মনে করা হতো, পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্র। আর এই পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সব গ্রহ ঘুরছে। কিন্তু বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাস প্রথমবারের মতো বললেন- না, পৃথিবী নয়, সূর্যকে কেন্দ্র করে অন্য গ্রহগুলো আবর্তিত হচ্ছে। তিনি লিখলেন, ‘দ্য রেভিলিউশনারিস অরবিয়াম কোয়েনেসিটিয়াম’। এতে দেড় হাজার বছরের টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। ধর্মযাজকরা ক্ষেপে ওঠেন। ক্যাথলিক চার্চের তীব্র সমালোচনা ও অবজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিলেন কোপার্নিকাস। তাঁকে ধর্মদ্রোহী ঘোষণা দিয়েছিল চার্চ। যে কারণে মৃত্যুর পর নাম-পরিচয়হীনভাবে অবহেলার সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি যে ঠিক, গ্যালিলিও তার সত্যতা প্রমাণ করেন। এক সময় ভুল ভাঙে চার্চের। কোপার্নিকাসের মৃত্যুর ৫০০ বছর পর পোলিশ ক্যাথলিক চার্চ তাঁকে পুনরায় বীরের মর্যাদায় সমাহিত করেছে। তিনি এক বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক।

 

চার্চের চোখে ছিলেন সমালোচিত পরে খুন হন

হাইপেশিয়া, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ

৩৭০ খ্রিস্টাব্দে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাইপেশিয়া। ইতিহাসবিদদের মতে, হাইপেশিয়া মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীদের মধ্যে ইতিহাসের শেষ প্যাগান সায়েন্টিস্ট। কিন্তু নারী বিজ্ঞানী ও মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী বলে চার্চের চোখে প্রবল সমালোচিত ছিলেন। অল্প বয়সে হাইপেশিয়া প্লেটো-সক্রেটিসদের মতো বড় বড় গণিতবিদ এবং দার্শনিকদের অসংখ্য বই পড়ে ফেলেন। এতেই তাঁর গণিত ও দর্শনে দক্ষতা সেকালের অনেক প-িতকেও ছাড়িয়ে যায়। তাঁর গোটা জীবন তিনি গণিতের জন্য উৎসর্গ করেন। বিয়ে করেননি। গণিত, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও মেকানিক্সের জটিল বিষয়গুলোয় হাইপেশিয়া ছিলেন জনপ্রিয় শিক্ষিকা। আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর অরেস্টেসও তাঁর জ্ঞানে মুগ্ধ ছিলেন। রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও নারী বিজ্ঞানী, মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী বলেই তাঁকে মৌলবাদী সন্ন্যাসী ও চার্চের প্যারাবোলানসরা হত্যা করে।

 

মালির কাজ করতেন বলে তাঁর গবেষণার গুরুত্ব মেলেনি

 গ্রেগর জোহান মেন্ডেল, বিজ্ঞানী

বংশগতিবিদ্যা বা জিনতত্ত্বের জনক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। ছোটবেলায় মৌমাছি পালনবিদ্যায় পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি একটি বাগানে মালির কাজ করতেন। কিন্তু জীবদ্দশায় তাঁকে বা তাঁর কাজকে খুব একটা আমলে নিত না কেউ। তিনি নিজেও জোরগলায় নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করতেন না কখনো। মাঝে মাঝে মানসিকভাবে ভেঙেও পড়তেন। কিন্তু একটি ব্যাপারে তাঁর মনের জোর ছিল সর্বদা অটুট এবং তা হলো নিজের গবেষণা অব্যাহত রাখা। ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত মেন্ডেল প্রায় ২৯ হাজার মটরশুঁটির ওপর পরীক্ষা চালান। অক্লান্ত শ্রম ও সাধনার বলে তিনি বংশগতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আবিষ্কার করেন। সবাই এই সূত্রকে মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র নামেই বলে থাকেন। ১৮৬৫ সালে মোরাভিয়ায় ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি অব ব্রুনেতে তাঁর এই গবেষণার ফলাফল দুবার পেশ করেন। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তাঁর কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি মৌমাছি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সফলও হন। এখন সবাই জানেন মেন্ডেলের নাম। কিডনির সমস্যায় মারা যান গ্রেগর মেন্ডেল।

 

লেখালেখিতে তাঁর সারা জীবনের আয় মাত্র ১০ হাজার ডলার

হারমান মেলভিল, আমেরিকান কবি

তিনি আমেরিকার একজন ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও কবি। আমেরিকান নবজাগরণ যুগের সাহিত্যিক মেলভিল টাইপি ও মবি-ডিক গ্রন্থ দুটির জন্য তিনি বিখ্যাত। জীবদ্দশায় সাফল্য-ব্যর্থতা দুইয়ের স্বাদই পেয়েছেন তিনি। লেখালেখির সুবাদে শুরুতে ভালোই সুনাম কুন্ডড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটার টান লাগতে বেশি সময় লাগেনি। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘মবি-ডিক’, তখন সেটির দিকে মানুষ ফিরেও তাকায়নি। লেখালেখির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছিলেন না বিধায় চাকরি নিয়েছিলেন নিউইয়র্কের ডকে। কিন্তু তবুও জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম যেটুকুন্ড অর্থের প্রয়োজন, তা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় লেখালেখির মাধ্যমে মেলভিলের আয় ছিল মাত্র ১০ হাজার ডলার। এটি তার সারা জীবনের উপার্জন। মেলভিল মৃত্যুবরণ করেন ১৮৯১ সালে। সাহিত্যজগতে পুনরায় তাঁর নামডাক শুরু হয় ১৯২০-এর দশকে এসে, রেমন্ড উইভার তাঁর জীবনী রচনা করলে। স্মরণীয় হয়ে আছেন সর্বকালের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্যিক হিসেবে।

 

মৃত্যুর পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদের পাশে স্থান হয় জন কিটসের

জন কিটস, ইংরেজ কবি

ইংরেজি সাহিত্যচর্চাকারীদের অত্যন্ত পছন্দের কবি জন কিটস। সাহিত্য অঙ্গনে তিনি একজন রোম্যান্টিক কবি হিসেবেও সমাদৃত। লর্ড বায়রন ও পার্সি বিশি শেলির সঙ্গে সঙ্গে তিনিও ছিলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের রোমান্টিক কবিদের একজন। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর সৃষ্টিগুলো প্রকাশিত হয়। তবে তৎকালীন সমালোচকদের দৃষ্টিতে তাঁর কবিতা খুব একটা উচ্চ মর্যাদা পায়নি। তবে মৃত্যুর পর তাঁর কবিতাগুলো সঠিক মূল্যায়ন পেতে শুরু করে। এমনকি উনিশ শতকের শেষ দিকে তিনি অন্যতম জনপ্রিয় ইংরেজ কবির স্বীকৃতি পান। পরবর্তীকালের অসংখ্য কবি ও সাহিত্যিকের ওপর তাঁর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর কবিতা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদের পাশে স্থান পেয়েছে। অনেক কবি সাহিত্যিক তাঁর রচনাগুলো নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছেন। এখন চলছে তাঁর লেখাগুলো নিয়ে নানা কর্মকা-। হোর্হে লুইস বোর্হেসের মতে, কিটসের লেখার সঙ্গে প্রথম পরিচয় তাঁর সাহিত্যিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৮২১ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ইতালির রোমে মারা যান। সব বিতর্ক পেরিয়ে অকালে চলে যান জন কিটস।

সর্বশেষ খবর