২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:০৪
যাত্রীর পাশাপাশি সুযোগ থাকবে পণ্য পরিবহনের

সরাসরি জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে মালে

চুক্তির খসড়া করছে নৌপরিবহন অধিদফতর

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরাসরি জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে মালে

বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম থেকে মালদ্বীপের সমুদ্রবন্দর মালে পর্যন্ত সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চাইছে প্রস্তাবিত রুটে যাত্রীর পাশাপাশি একই জাহাজে যেন পণ্য পরিবহনেরও সুযোগ থাকে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানান, সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধির মতামতে একটি বিষয় উঠে আসে তা হচ্ছে- চট্টগ্রাম থেকে মালদ্বীপ রুটে শুধু যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল লাভজনক হবে না; একই জাহাজে যদি পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকে তবে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এর সুফল পাওয়া যাবে। শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম-মালে রুটে যাত্রীবাহী ক্রুজ শিপিং সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে একটি চুক্তি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে; চলাচলের জন্য নির্বাচিত জাহাজে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকবে। 
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সরাসরি নৌ চলাচলে একটি চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মতি রয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের যৌথ ইশতেহারেও একটি শিপিং অ্যাগ্রিমেন্টের কথা উল্লেখ রয়েছে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও মালের মধ্যে সরাসরি নৌ যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে একটি চুক্তির খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতরকে। খসড়া পাওয়ার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের মতামত নেওয়া হবে। 

সরাসরি নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা নিয়ে গত মাসে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভার একটি কার্যবিবরণী সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই সভায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির মতামতে যেসব তথ্য উঠে আসে তাতে দেখা যায় মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। দেশটি তার মোট রপ্তানির মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ রপ্তানি করে বাংলাদেশে। তবে অনুল্লেখযোগ্য এই আমদানি-রপ্তানি বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে সরাসরি নৌ যোগাযোগ চালুর সিদ্ধান্তটি ফলপ্রসূ হতে পারে, মতামত দেন প্রতিনিধিরা। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিপার্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মো. রেজাউল করীম। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, মালদ্বীপের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নৌ চলাচল চুক্তির বিষয়টি ইতিবাচক। তবে একে শুধু যাত্রী পরিবহনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এই যোগাযোগব্যবস্থাটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের সুযোগ রাখার বিষয়ে আমরা নৌপরিবহনকে জানিয়েছি। পাশাপাশি এ বিষয়ে চুক্তির আগে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একটি প্রতিনিধি দলকে মালদ্বীপ সফরে পাঠানোর কথাও জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। 

সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহান তাঁর মতামতে বলেন, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এখনো কম। উভয় দেশের মধ্যে প্রতি মাসে একটি জাহাজ চালুর মাধ্যমে সরাসরি শিপিংলাইন স্থাপন করা যেতে পারে। সরাসরি নৌ যোগাযোগ স্থাপন হলে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির তাঁর মতামতে জানান, মালদ্বীপ পর্যটন গন্তব্যের কাক্সিক্ষত দেশ হওয়ায় উপকূলীয় রুটকেন্দ্রিক ক্রুজ শিপিং পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্যটকের পাশাপাশি মাসিক ভিত্তিতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পণ্যের নৌপরিবহনসংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করা গেলে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে। 

নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর এ জেড এম জালাল উদ্দীন মতামতে বলেন, মালে বন্দরটি ভারত মহাসাগরে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এ রুটে চলাচলের জন্য বাংলাদেশের যে কোনো জাহাজকে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চল অতিক্রম করতে হবে। সমুদ্রের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় এ ধরনের রুটে ছোট জাহাজ (৬ হাজার জিটি) চলাচল-উপযোগী নয় বলে মত দেন তিনি। বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম মতামতে বলেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চালুর উদ্যোগটি ইতিবাচক। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে মালদ্বীপের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর